বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রস্তুত পাকিস্তান
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। সম্পর্ক উন্নয়নে যা করণীয় তা করতে প্রস্তুত পাকিস্তান।
পাকিস্তান সফররত বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী পারভেজ রশিদ এসব পরিকল্পনার কথা জানান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ প্রস্তাব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য যা করণীয় তা করতে আমরা প্রস্তুত আছি। বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানের ভূখ- ব্যবহার করে আফগানিস্তান হয়ে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে বাণিজ্য করতে চায়, তা দিতেও আমরা রাজি। এছাড়া ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য করাচির বিন কাসিম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে চাইলেও আমরা তা দিতে রাজি। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য জোরদার করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের সীমান্ত দিয়ে সিল্ক রোড ব্যবহারের অনুমতি দিতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের আগ্রহের কথাও জানান মন্ত্রী। তবে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সুনির্দষ্ট প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই আসতে হবে।
ইরান থেকে পাকিস্তান হয়ে ভারতের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন প্রস্তাবের বিষয়ে ইসলামাবাদের অবস্থান সম্পর্কে বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা যে কোনো সুবিধা দিতে রাজি আছি। উন্নয়নের জন্য এ বিষয়ে ‘ইতিবাচক’ মনোভাব নিয়ে দু’দেশকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি পাকিস্তানে আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। আর সে মুহূর্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। সার্ক হলো এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার বড় এক সুযোগ।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে অতীত ভুলে যেতে বলবো না, কিংবা আমাদের ক্ষমা করে দিতেও বলবো না। অতীত অতীতই, আমরা সামনে তাকাতে চাই। বর্তমানে আমাদের যেসব সমস্যা রয়েছে তা সমাধানে কাজ করতে চাই। সন্ত্রাসবাদ ও দারিদ্র্য মোকাবিলা করে উন্নয়নের জন্য শান্তি এবং সহাবস্থান নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।
দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা যেমন আছে সুখেরও কিছু মুহূর্ত আছে। আমরা সেই সুখের দিকগুলোতে দৃষ্টি দিতে পারি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার জন্য পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অতীতকে উপেক্ষা করছি না। অবশ্যই আমাদের অতীতের তিক্ততার স্মৃতি আছে। আমাদের তার মধ্যেও একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বৃটিশরা চারশ’ বছর এ উপমহাদেশে দুঃশাসন চালিয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত সেই বৃটিশদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই কাজ করছে। সেখানে একসঙ্গে চলতে পারলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান নিজেদের ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলতে কেন একসঙ্গে কাজ করতে পারবে না।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের বিরূপ মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি শুধু এই কথাটিই বলবো- উভয় পক্ষের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা আমাদের দুইদেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হয়। আমরা বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্বকে যেদিন থেকে স্বীকার করে নিয়েছি, ওটাই ছিল দুইদেশের মধ্যে সংহতি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। আমাদেরকে বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সবকিছু দেখতে হবে। আমরা যদি খোলা মনে আলোচনায় বসি, তাহলে আমরা সম্পর্কের অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়া যাবে।
মন্তব্য চালু নেই