বাংলাদেশের একমাত্র ‘সোয়াম্প ফরেস্ট’ রাতারগুল

‘সিলেটের সুন্দরবন’ খ্যাত বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন (সোয়াম্প ফরেস্ট) হচ্ছে রাতারগুল। ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাদু পানির জলাবন রয়েছে মাত্র দু’টি। এর মধ্যে একটি শ্রীলংকায়, আর অন্যটি, বাংলাদেশের সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে এই রাতারগুল।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের গুয়াইন নদীর দক্ষিণে রাতারগুলের অবস্থান। প্রায় ৩১০ একর জমির ভূমির উপর জলের মধ্যে ভেসে থাকা সবুজ বৃক্ষ, তার মাঝ দিয়ে নৌকায় করে রাতারগুলে ঘুরে বেড়ানোর যাবে মাত্র এক থেকে ২ ঘন্টায়। চাইলে আরো বেশি সময় কাটাতে পারেন।
দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও, গত কয়েক বছরে, ভ্রমণ পিপাসুদের আলোচনায় উঠে আসে এ বনটি।
এই বনে কিছু সাপ ছাড়াও বানর, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, কানাবক, সাদাবক, ঘুঘুসহ নানা জাতের অসংখ্য পাখি আছে। উচ্চস্বরে আওয়াজ করলে এসব প্রাণী ভয় পেতে পারে। তাই শব্দ না করেই ঘুরে বেড়ানো ভালো।
অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকটাই ডুবে আছে জলে। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন যেন আলো-আধারির এক মাদকতাময় খেলা। বনের মাঝ দিয়ে চলতে গেলে ভ্রমণ পিসাসুদের জড়িয়ে ধরবে নানা ধরনের গাছপালা। বৈশিষ্ট্যে এ বনের সাথে মিল রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আমাজনের।
পৃথিবীতে ফ্রেশ ওয়াটার ফরেস্ট বা জলাবন রয়েছে মোট ২২টি। আর এর মধ্যে সিলেটের রাতারগুল অন্যতম। বছরের বেশিরভাগ সময় এই জলাভূমি থাকে পানির নিচে। আর এই বৈশিষ্ট্যই দেশের অন্যান্য দশটি বন থেকে আলাদা করেছে রাতারগুলকে।
উত্তরে মেঘালয় থেকে নেমে আসা জলধারা গোয়াইন নদীতে পড়ে সরু শাখা খাল হয়ে প্লাবিত হয় পুরো রাতারগুল। আর দক্ষিণে রয়েছে বিশাল হাওর। স্থানীয় ভাষায়, মুর্তা বা পাটি গাছকে রাতাগাছ নামেও ডাকা হয়। রাতাগাছের নামেই এই বনের নাম হয়েছে রাতারগুল।
পানি, আকাশ আর সবুজ বনের টানে অল্প কয়েক বছরেই বনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে। এ আগ্রহ ধরে রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
বন বিভাগের তথ্যমতে, বনের আয়তন ৩ হাজার ৩শ ২৫ দশমিক ৬১ একর। ১৯৭৩ সালে বনের ৫০৪ একর বনভূমিকে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়।
যাতায়াত ব্যবস্থা: সিলেট নগরীর চৌহাট্টা থেকে মাইক্রোবাসে অথবা আম্বরখানা থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে যাওয়া যাবে। সিএনজি ভাড়া আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ টাকা আর মাইক্রোবাসে ১ হাজার টাকা। ফেরার পথে একই পরিমাণ খরচ। রাতারগুল বনে প্রবেশের বাহন হবে নৌকা। ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার অনুচিত। তবে ডিঙি নৌকা ভাড়া বাবদ নেবে ৫শ’ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। রাতারগুল বনে প্রবেশের ৩টি রাস্তা আছে। তবে রাতারগুল গ্রাম দিয়েই প্রবেশে সুবিধা বেশি।
সূত্র: সময় টিভি
মন্তব্য চালু নেই