বাংলাদেশের আবহওয়ায় থেকে মেদ কমাতে চান? এই পরামর্শ গুলো শুধু আপনারই জন্য…

খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করে বা ব্যায়াম করে ওজন কমানো যায়। তবে অনেক সময় শরীর ঠিক আকৃতিতে আসে না বা বডি শেপ ঠিকমতো হয় না। এ জন্য কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। আর এগুলো এখন দেশেই করা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৩০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সরকার মাহবুব আহম্মেদ শামীম। বর্তমানে তিনি লেজার ট্রিটে প্রধান পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।

প্রশ্ন : প্রত্যেক মানুষই তো একটি বডি শেপ (শারীরিক আকৃতি) নিয়ে পৃথিবীতে আসে। একটা আকার নিয়ে সে বেড়ে ওঠে। কখনো কখনো এই আকারটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তিত হয়ে যায়। বডি শেপিং মানে কী এবং কখন দরকার হয়?

উত্তর : বডি শেপিং কথাটি দিয়ে এর উত্তর বের হয়ে আসে। এটি হলো শরীরকে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া। আপনি যেভাবে বলেছেন সবাই একটি আকার নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। এখন কথা হচ্ছে ছেলে ও মেয়েদের দুজনেরই শেপটা কখন পরিবর্তন হয়।

আগে বলা হতো মেদ নিয়ন্ত্রণ। শরীরে মেদ জমলে একটি পরিবর্তন হয়। কিছু কিছু শারীরবৃত্তীয় কারণেও মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন হয়। যেমন গর্ভাবস্থার সময় পরিবর্তন হতে পারে। সুতরাং শেপের বিষয়টি যদি বলি তাহলে এর জন্য দায়ী হলো মেদ। মেদ নিয়ন্ত্রণ, ওজন নিয়ন্ত্রণ এই শব্দগুলো অনেকদিন ধরেই ছিল। সেটা থেকে বডি শেপিংয়ে কীভাবে এলো এটিই এখন আলোচনার বিষয়।

ধরেন আপনার অনেক ওজন ৯০ বা ১০০ কেজি হলো, ওখান থেকে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে বললে আপনি খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করে, জিম করে যেকোনো উপায়ে আপনি কমিয়ে ১০ কেজি, ২০ কেজি, ৩০ কেজিও কমাতে পারবেন। তবে আপনার শেপ কিন্তু পরিবর্তন নাও হতে পারে। সবদিকে সমানভাবে পরিবর্তন না ও হতে পারে। কারো কারো নির্দিষ্ট জায়গায় মেদ জমে। কারো কারো পেটে মেদ জমে। কারো হয়তো দেখা যায় ঊরু বড়। কারো দেখা যায় ডাবল চিক (থুতনি) রয়েছে। কারো ঘাড়ের কাছটা বড়। এখন যখন দেখা গেল, কেবল ওজন নিয়ন্ত্রণ করে ওই নির্দিষ্ট জায়গাটা কমানো যায় না, তখন চিন্তা করা হলো কীভাবে এটা নির্দিষ্ট করা যায়। দুভাবে এই জিনিসটি করা যায়। সার্জিক্যাল আর নন সার্জিক্যাল। সার্জিক্যালের ক্ষেত্রে একসময় প্রচণ্ড জনপ্রিয় ছিল লাইপোসেকশন। তবে এটা আস্তে আস্তে উঠেই যাচ্ছে। কারণ, অনেক জটিলতা রয়েছে। অ্যানেসথেসিয়া দিতে হয়। একসঙ্গে অনেকটা জায়গা ফুটো করে চর্বি বের করতে হয়। তবে তার সঙ্গে একটা সমস্যা হলো অ্যানেসথেসিয়ার একটি সমস্যা থাকতে পারে। আকারটা ঠিকমতো হয় না। কারণ, তখন দেখা যায় একসঙ্গে বেশি পরিমাণ চর্বি নিলে ত্বকটা ঝুলে যায়। তাই চিন্তা করা হলো আর কী করা যায়? সার্জারির ক্ষেত্রে আরো দুটো পদ্ধতি খুব জনপ্রিয়। একটি হলো অ্যাবডোমিনো প্লাস্টি বা টামি টাক। পেটের চামড়াটা পুরো চর্বিশুদ্ধ কেটে নতুন করে নাভিটা বানিয়ে দিলাম। বিশাল এক সার্জারি। এটারও অনেক জটিলতা রয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি জনপ্রিয় অস্ত্রোপচার আছে। যারা ধরেন ১১০ কেজি বা ১২০ কেজি হয়ে গেছে, তাদের আমরা বাইপাস সার্জারি করি বা বেরিয়াট্রিক সার্জারি। সেটা কখনো কখনো হয়। এটি সবার বেলায় প্রযোজ্য নয়। সবার বেলায় যেটা চিন্তাভাবনা করল যে কী করে সার্জারি ছাড়া করা যায়? বিশ্বের তিনটি জনপ্রিয় মাধ্যম আছে নন সার্জিক্যাল চিকিৎসা করার। প্রথম হলো লেজার দিয়ে যেটি করা হয়। লো লেভেল লাইট থেরাপি। লেজার দিয়ে চর্বিকোষগুলোকে ছোট ছোট পোর তৈরি করে ভেতর থেকে চর্বিযুক্ত উপাদানগুলোকে যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল এগুলো বের করে দেয়।

আরেকটি হলো আল্ট্রাসনিক লাইপোলাইসিক। সাউন্ড দিয়ে চর্বিকোষকে ভাঙি। সবারই আল্ট্রাসোনোগ্রাম করার অভিজ্ঞতা আছে। সেটারই একটা ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড আছে যেটা দিয়ে চর্বিকোষকে শব্দের মাধ্যমে ভেঙে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি আমরা ভ্যাকুয়াম মেশিন ব্যবহার করি। এর সঙ্গে আরেকটি মেশিন রয়েছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি মেশিন। এটি দিয়ে ত্বককে দৃঢ় করি। যে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে, এর দুটোই বাংলাদেশে আছে। আমার ক্লিনিকে কিছুদিন আগে একটি লেজার মেশিন এসেছে ক্রায়োলাইপোলাইসিস। এগুলো আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি।

প্রশ্ন : এগুলো করতে কত সিটিং লাগে এবং চিকিৎসার ব্যয় কেমন?

উত্তর : আরেকটি পদ্ধতি যেটা বাকি ছিল ক্রায়োলাইপোলাইসিস। এটা হলো চর্বি ফ্রিজিং। নতুন একটি মেশিন এসেছে ক্ল্যাটোন। যাদের সারা শরীর ভালো আছে, তবে পেট একটু মোটা হয়ে আছে, এই যন্ত্র দিয়ে সেই চর্বিগুলোকে ঠান্ডা করে দেওয়া হয়। ঠান্ডা করে দিলে চর্বিগুলো বের করে দেবে। আমি খুব গর্ব করে বলি বিশেষ করে অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ।

প্রশ্ন : এর কতটা সিটিং লাগে এবং ব্যয় কেমন?

উত্তর : আমি প্রথম থেকে আসি আল্ট্রাসোনিক লাইপোলাইসিস। এটি আমরা আট থেকে ১২টি করি। পাঁচদিন পরপর করতে হয়। প্রায় দুই মাসের মতো। প্রতিটি সেশনের সঙ্গে আপনাকে একটি জিনিস খেয়াল করতে হবে, আপনার জীবনযাপনের পরিবর্তন করতে হবে, কর্মক্ষমও থাকতে হবে। ১০ থেকে ১২ সিটিং লাগে। কারো কারো আবার আট সিটিংয়ে হয়ে যায়। নির্ভর করে কী রকম আকার তার ওপরে। রোগীকেও আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। পার সিটিং হলো ছয় হাজার একশো থেকে সাত হাজার একশো।

আর যেটা লেজার মেশিন দিয়ে করি, আট হাজার ১০০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এটাও আট থেকে ১২টি সিটিং লাগে।

আর ক্রায়োলাইপোলাইসিস যেটা নতুন এসেছে, সেটা মাত্র তিনটি লাগে। এক জায়গায় একবার করে তিন মাসে আরেকবার করা যাবে। এটি বিভিন্ন জায়গা অনুযায়ী করতে হয়। প্রতি জায়গার মধ্যে লাগবে সর্বোচ্চ তিনবার। কারো কারো একবারই হয়ে যায়। এর প্রতি সিটিং প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে পড়বে।

প্রশ্ন : নতুন যে পদ্ধতিগুলো আছে, এগুলো করলে কি সঙ্গে সঙ্গে ত্বকও দৃঢ় হয়?

উত্তর : আপনি যখন শরীরকে অভ্যস্ত করার সময় দেবেন, তখন শরীর নিজে নিজেই অভ্যস্ত হবে। শরীর নিজে নিজে ঠিক করে নেয়। এরপর আমরা কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করি, এতে ত্বক দৃঢ় হয়।



মন্তব্য চালু নেই