বসন্ত থেকে সাবধান

বসন্ত শুধু ঋতুই নয়, বসন্ত একটা রোগেরও নাম। বসন্ত গিয়ে গ্রীষ্ম শুরু হলেও এখনো রয়ে গেছে বসন্তের আশঙ্কা। একসময় আমাদের দেশে এই রোগের মারাত্মক প্রকোপ দেখেই হয়তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘কোথা ব্রজবালা কোথা বনমালা, কোথা বনমালী হরি! কোথা ছা হন্ত, চিরবসন্ত! আমি বসন্তে মরি।’ সংক্রামক রোগ দেখে বসন্ত রোগীর সেবাযত্নও ছিল দুষ্কর। তবে আধুনিককালে এসে প্রতিষেধক টিকায় এই রোগের প্রকোপ কমেছে। চিকিত্সা বিষয়েও সচেতন হয়েছে মানুষ। বসন্ত রোগ এবং এ রোগে করণীয় সম্পর্কে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম।

জলবসন্ত ও গুটিবসন্ত
বসন্ত রোগের এই দুটি ধরনেরই প্রাদুর্ভাব ছিল একসময়। ‘চিকেন পক্স’ বা জলবসন্তের প্রকোপ এখনো থাকলেও ‘স্মল পক্স’ বা গুটিবসন্ত এখন আর দেখা যায় না। গত শতকের আশির দশকেই পৃথিবী থেকে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়ে গেছে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চিকেন পক্স বা জলবসন্ত ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক রোগ। ভ্যারসিলো জস্টার নামের একটি ভাইরাসের কারণে জলবসন্ত হয়। যেকোনো বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও শিশু ও অল্পবয়সীরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

জলবসন্তের লক্ষণ
শুরুর দিকে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, মাথাব্যথা করা, গা-হাত-পা ব্যথা করা এমনকি পিঠেও ব্যথা হতে পারে। একটু সর্দি-কাশিও হতে পারে। এরপর জ্বর জ্বর ভাব হবে। এগুলো রোগের পূর্ব লক্ষণ। এরপর শরীরে ঘামাচির মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। তারপর সেটা একটু পর বড় হতে থাকে এবং ভেতরে পানি জমতে থাকে। খুব দ্রুতই শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। আর এভাবে জলবসন্ত হয়ে গেলে রোগীর অনেক জ্বর আসবে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে আর সঙ্গে সর্দি-কাশিও থাকবে।

বসন্ত রোগের সংক্রমণ
বসন্ত সংক্রামক রোগ হওয়ায় কোনো সুস্থ ব্যক্তি বসন্ত রোগীর সংস্পর্শে এসে এতে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ করার বিষয় হলো জলবসন্ত রোগের সংক্রমণটা মূলত হয় রোগীর দূষিত চামড়া থেকে। জলবসন্তের গুটির ভেতরে পানি জমা থাকে। গুটি শুকিয়ে যেতে থাকলে ওপরের চামড়াটা ঝরে পড়ে। এই কালো হয়ে যাওয়া চামড়ায় জীবাণু থেকে যায় এবং এটা খুবই সংক্রামক। গুটি শুকিয়ে যেতে থাকলে শরীর অনেক চুলকায়। অনেকে তখন এগুলো চুলকিয়ে টেনে তুলে ফেলে। কিন্তু এটা করা একেবারেই ঠিক না। আর শুকনো চামড়াগুলো জমিয়ে পুড়িয়ে ফেলাই ভালো।

এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে রোগীকে অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে। তাকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং তার বিছানাপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। শরীরের ফুসকুড়ি পুরোপুরি শুকানো এবং ঝরে না যাওয়া পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে তিন সপ্তাহ রোগীকে এভাবে আলাদা রাখাটাই শ্রেয়। তবে, রোগীর ঘর যেন পরিষ্কার ও আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে।

জলবসন্তের প্রতিষেধক
যদিও চিকেন পক্স বা জলবসন্ত একটা ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ, তার পরও এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এখন বসন্তের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আছে। শিশুর জন্মের ৪৫ দিন পর থেকে যেকোনো বয়সে এই ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। আর যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে, তাদের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা নেই। অযথা রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ারও প্রয়োজন নেই। চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এ রোগ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সাধারণত ভালো হয়ে থাকে।

রোগীকে কী খাওয়াবেন?
এ সময়ে রোগীকে অনেক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া প্রয়োজন হয়। তবে খাবারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, সবজি সবকিছুই খাওয়া যাবে। আর শরীরের দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে রোগীকে বেশি বেশি করে খেতে হবে।

কীভাবে গোসল করবেন?
জলবসন্ত হওয়ার পরও নিয়মিত গোসল করা যায়। এতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে গোসল শেষে শরীর ঘষে মোছা যাবে না, আলতো করে মুছে নিতে হবে। স্বাভাবিক পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে। আর রোগীর ব্যবহূত পোশাক, বিছানার চাদর, শোবার ঘর অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু এ রোগে শরীরে দাগ হয়, তাই এ সময়ে ডাবের পানি খুব উপকারী এবং ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া এবং গোসল করলেও উপকার পাওয়া যাবে।



মন্তব্য চালু নেই