বরিশালের সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক
কল্যাণ কুমার চন্দ, বরিশাল: সাম্প্রতিক সময়ে দেশে একাধিক নৃশংস কর্মকা-ের দায় স্বীকার করে আসা জঙ্গি সংগঠন ‘আইএস’ বরিশালে হামলার হুমকী দিয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের সেই উড়ো হুমকীর খবরে বরিশালবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে হুমকীর খবরে সবচেয়ে বেশি ভীত হয়ে পড়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। ফলে তাদের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে বিশেষ বিশেষ এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোড়দার করার দাবী উঠেছে ।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানাগেছে সারাদেশের নৃশংস ঘটনার পর থেকেই বরিশালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক সভা করে স্ব-স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এলাকাবাসিকে সচেতন করে তোলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতায় যেকোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও সচেতন বরিশালবাসী সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেছেন। অপরিচিত লোকজন দেখলেই তার খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
এরইমধ্যে আইএসের পাঠানো হুমকী বার্তার উড়ো খবরের বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত কিছু বলতে পারছেন না। ফলে জঙ্গি সংগঠন আইএসের বার্তা পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এ হুমকীর সত্যতা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশ হুমকীর বিষয়টি স্রেফ গুজব বললেও সত্যতা নিশ্চিত হতে মিডিয়াকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে সাংবাদিকরাও পুলিশের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। অবশ্য বরিশাল পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতিহাস, ঐতিহ্যখ্যাত জেলার মন্দির, গির্জা ও গুরুত্বপূর্ণস্থানসহ সংখ্যালঘুদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুক্রবার থেকে নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে। অপরদিকে নগরীসহ জেলার একাধিক মুক্তমনা লেখক জানিয়েছেন, জঙ্গি সংগঠন আইএসের হুমকীর উড়ো খবর তাদের হতাশায় ফেলে দিয়েছে। ফলে তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার (এসি) মোঃ ফরহাদ সরদার জানান, হুমকির কোনো আলামত তাদের কাছে নেই। তবে দেশের বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত নৃশংসতা দেখে আগেভাগেই বরিশালেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে সংখ্যালঘুদের নিরপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা পুলিশও মাঠে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া পুরো বরিশাল জুড়ে র্যাব-পুলিশের টহল ও চেক পোষ্টের মাধ্যমে সন্দেহভাজনকে তল্লাশী চালানোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদীর সন্তান মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার ঘটনায় আটককৃত “বন্দুকযুদ্ধে নিহত” গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম ছিলো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর সক্রিয় সদস্য। মাদারীপুরের মিশন শেষ করে তাদের পরবর্তী টার্গেট ছিল বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। সচেতন নাগরিকদের মতে, ফাহিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও তার সহযোগীরা এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।
সূত্রমতে, গত ১৩ জুন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া শহরের সবুজনগর এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য আকরামুজ্জামানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরআগে ২০১৬ সালের ১৫ জুন গুপ্তহত্যা প্রতিরোধে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানে বরগুনা সদর উপজেলার হেউলিবুনিয়া এলাকা থেকে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার করা হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানির ভাই আইউব আলী ও তার সহযোগী খলিলুর রহমানকে। এছাড়া উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাওহীদের দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার আমীরের বাড়ি জেলার গৌরনদী উপজেলার সাকোকাঠী গ্রামে হওয়ায় জঙ্গি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।
অপরদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি শনিবার দুপুরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে জঙ্গি হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে দেখতে যান। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জামায়াত-বিএনপি এখন ব্যক্তিগত আক্রমণকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনে রূপ দিতে চাইছে। এজন্যই পুরোহিত এবং যাজকদের বেঁছে নিয়েছে উগ্রবাদিরা। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এতে করে সাম্প্রদায়িক শক্তি কিছুতেই তাদের লক্ষে পৌঁছতে পারবে না।
মন্তব্য চালু নেই