বরখাস্ত হতে পারেন বরিশালের মেয়র কামাল

দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার আশংকার রয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। মেয়রের ঘনিষ্ঠজন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, বিসিসির আওতাধীন সড়ক সংস্কারের ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মেয়রসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তে আগামী সপ্তাহে মাঠে নামবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সূত্রে আরো জানা গেছে, দুদকের তদন্ত রির্পোটে মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেলে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে ২০০৯ সালে প্রণীত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইন (সিটি করপোরেশন) অনুযায়ী মেয়র সাময়িক বরখাস্ত হতে পারেন। তবে দুদক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তাদের কাছে মামলার কাগজপত্র পৌঁছায়নি। ওই সূত্রটি আরও জানান, ধারনা করা হচ্ছে আগামি রবিবারের মধ্যে মেয়রের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার নথিপত্র তাদের কাছে আসতে পারে। আদালতের নির্দেশের নথিপত্র হাতে পাওয়া মাত্রই দুদকের একটি টিম তদন্তে নামবেন বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

মামলার বাদী নগরীর মেসার্স আলিফা এন্টাপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী রফিউল ইসলাম জানান, গত ১৬ মার্চ এক স্মারকের মাধ্যমে নগরীর সড়ক, ড্রেন, বৈদ্যুতিক বাতি প্রকল্প বাবদ ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকার দরপত্র আহবান করে সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। যা পত্রিকায় বা বিসিসি’র নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। যে কারণে তিনিসহ অন্যান্য ঠিকাদাররা ওই দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ফলে ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকার কোনো কাজ না করে পুরো টাকা মেয়রসহ বিসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা কে.এম. নুরুল ইসলাম ও সাবেক প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দাস আত্মসাত করেছেন। এ ঘটনায় তিনি (রফিউল ইসলাম) বাদী হয়ে দুর্নীতির অভিযোগে মেয়রসহ ওই দুই কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক আনোয়ারুল হক মামলাটি আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বরিশাল কার্যালয়কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। রফিউল ইসলাম আরও জানান, মামলা দায়েরের পরপরই মেয়র কামালের ঘনিষ্ট একাধিক ব্যক্তি তার সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি আপোষ করার জন্য নানা প্রলোভন দিয়ে আসছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরিশাল কার্যালয়ের পরিচালক আরিফ সিদ্দিক বলেন, এ সংক্রান্ত নথিপত্র আদালত থেকে এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। তবে আদালতের নির্দেশনার নথিপত্র হাতে পাওয়া মাত্রই বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে পুরো বরিশালজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। স¯প্রতি সময়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলের অবরোধ-হরতালের একাধিক নাশকতা মামলার আসামি হয়ে গাজীপুর, রাজশাহী ও সিলেটের মেয়র সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর এবার দুর্নীতির অভিযোগে বিসিসি’র মেয়র আহসান হাবিব কামাল বরখাস্ত হতে পারেন। নগরীর চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস-আদালতে এমনই আলোচনা এখন সরব হয়ে উঠেছে।

মেয়রের ঘনিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মামলা দায়েরের পর থেকে ঢাকার বনানীর বাসায় অবস্থান করা মেয়র কামাল অনেকটাই বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। মোবাইল ফোনে মেয়র আহসান হাবিব কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যে ও ভিত্তিহীন। গত মাসে ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকার কোনো কাজের দরপত্র আহবান করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, মেয়রের পদ থেকে আমাকে সরাতে একটি মহল দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারই প্রেক্ষিতে ওই মহলটি আমাকে ফাঁসাতে দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই