বন্যায় ১৪ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ লাখ
দেশে চলমান বন্যায় মোট ১৪ জন লোক মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপন ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে শনিবার (৩০ জুলাই) সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণমন্ত্রী জানান, সারাদেশে এ পর্যন্ত ১৪ জন বন্যা কবলিত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে রংপুরে একজন, কুড়িগ্রামে ২ জন, গাইবান্ধায় ৪ জন ও জামালপুরে ৭ জন মারা গেছেন।
প্রাণহানি ছাড়াও বন্যায় দেশের সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তুলে ধরেন মন্ত্রী। মোফাজ্জল হোসেন মায়া বলেন, ‘দেশের মোট ১৬ জেলায়, ৫৯টি উপজেলার ৩০৯টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংখ্যা মোট ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৬টি। আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা মোট ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৫ জন। এতে ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৩১৪টি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৩৭১টি। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রন্ত হয়েছে ৫৮৮টি।
মূলত দেশের বেশ কয়েকটি নদীর স্রোত বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এসব নদীর মধ্যে আছে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার, পদ্মা, ঘাঘট, করতোয়া ও সুরমা। এ সব নদীর মোট ১৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে স্রোত প্রবাহিত হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
বন্যা কবলিত জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা কার্যক্রম ও আশ্রয় কেন্দ্র সম্পর্কেও তথ্য দেন মন্ত্রী। তিনি জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ সব কেন্দ্রে আশ্রিত লোকসংখ্যা ৭ হাজার ৩৭৫ জন। এ ছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কাজে মোট ৩৪৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ সাহায্যের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে মন্ত্রী মায়া বলেন, ‘এ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ হাজার টন জি আর চাল ছাড় করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ১০০ টন। আর ছাড়ের জন্য অধিদফতরে চাল মজুদ আছে ৩ হাজার ৯০০ টন। মন্ত্রণালয় থেকে জিআর ক্যাশ হিসেবে ছাড় করা হয়েছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। জেলা পর্যায়ে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি সাড়ে ৭ লাখ টাকা। আর অধিদফতরে বর্তমানে অবশিষ্ট আছে ২ কোটি সাড়ে ৪২ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘চাহিদার চেয়েও বেশি আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণ পাঠিয়েছি। বিশ্বব্যাপী ত্রাণ বিতরণের নিয়ম হচ্ছে আগে চাহিদা নিরূপণ করে তারপর বিতরণ করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বিতরণের স্বার্থে সেখানে আমরা আগেই তা পাঠিয়ে রাখি। তারপর বিতরণ শেষে সেটা সমন্বয় করা হয়। আর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরবাড়ি ও স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে। এরপর ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য সহায়তা প্রদান করা হবে।’
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ প্রদান পর্যবেক্ষণ করা হয় বলেও জানান মন্ত্রী। একইসঙ্গে বন্যা কবলিত মানুষের সহায়তায় তিনি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্তব্য চালু নেই