বদরাগী কিশোর সন্তানকে কীভাবে সামাল দেবেন?

বয়ঃসন্ধিকালে আপনার সন্তান শারীরিক মানসিক এতসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় যে নিজেকে মানিয়ে নিতে তার অনেক সময় লেগে যায়। এসময় তার রাগকে সামলানো চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাগের সাথে মিশে থাকে দুঃখ, ভয়, লজ্জা, নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবার মানসিক কষ্ট। আপনের কিশোর সন্তানটি হয়ত বুঝতেই পারছে না কেন তার খারাপ লাগছে। নিজের অস্বস্তি সে প্রকাশ করে ক্ষেপে গিয়ে। মা-বাবা হয়ে রাগ সামলাতে কিভাবে সাহায্য করবেন তাকে? আসুন জেনে নিই।

পরিস্থিতি এবং নিয়ম-কানুন
যখন আপনার কিশোর সন্তানটি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে তখন তাকে বোঝান যে, রেগে যাওয়া কোন সমস্যা নায়। কিন্তু সেটির প্রকাশে ভুল থাকতে পারে। এটা ঠিক যে, রেগে গেলে তার নিশ্চই কিছু মনে থাকে না। কিন্তু নিয়মিত আপনি যদি তাকে বোঝান তাহলে ধীরে ধীরে সে খেয়াল করবে কোথায় রাগ প্রকাশ করা যায় আর কোথায় করা যায় না। তাকে এর ঝুঁকিগুলো বোঝান। অনেক রকম সমস্যায় পড়তে পারে সে। এমন কি অনেক সময় পুলিশের ঝামেলাও হতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালে নিয়মের শাসন খুবই প্রয়োজন। তাকে নিয়মগুলো বোঝান।

রাগের পেছনের কারণ
বয়ঃসন্ধিকালে একজন মানুষের মানসিক অবস্থা থাকে খুবই জটিল। কখন কী কারণে সে রেগে যায় সে নিজেও অনেক সময় জানে না। শারীরিক পরিবর্তনগুলো মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয় তার। আমাদের সমাজও তাকে প্রতিনিয়ত মানসিক দ্বন্দে ফেলতে থাকে। ছেলে হোক বা মেয়ে, আমরা সারাক্ষণই তাকে ‘এটা করতে নেই, ওটা বারণ’ এসব বলতে থাকি। খেয়াল করুন, তার কি এমন কাওকে প্রয়োজন যাকে সে সব কথা খুলে বলতে পারবে? আর সেই মানুষটি তার মানসিক অবস্থা বুঝবে তাকে বিচার না করে।

সহযোগিতা করুন
আপনার সন্তানকে রাগ প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু সহযোগিতা করতে পারেন। খেলাধূলা, শারীরিক পরিশ্রম এমনকি শুধু পাঞ্চ ব্যাগ বা বালিশে আঘাত করেও রাগ প্রকাশ করা যায়। অনেক কিশোরকিশোরী ছবি এঁকে, জোড়ে গান শুনে, একা ঘরে নাচ করে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এটা উদ্মাদনা নয়, এক প্রকারে অন্যকে আঘাত না করে নিজেকে শান্ত করার প্রক্রিয়া।

নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন
আপনার সন্তানের সবচেয়ে বড় আশ্রয় আপনি। বয়ঃসন্ধিকালে তাকে সামলানো কঠিন হতে পারে আপনার জন্য। কিন্তু আপনি যতটা মানসিকভাবে পরিপক্ক, সে তো ততটা নয়! তাকে বোঝার চেষ্টা করুন, তার উপর রেগে না যাওয়ার চেষ্টা করুন।

জানুন
আপনার কিশোর সন্তানটি হয়ত আপনার প্রথম সন্তান। আবার ওর বড় ভাই বোনও থাকতে পারে। আপনি অভিজ্ঞ হন বা অনভিজ্ঞ, প্রতিটি মানুষই কিন্তু আলাদা আর তাদের মনস্তত্বও ভিন্ন। তাই সে ২য় হোক বা ৩য় আপনাকে মনোযোগ দিতে হবে একই রকম। কিশোর মনস্তত্ব বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ করতে পারেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করতে পারেন।

জোর করবেন না
আমাদের দেশে বেশিরভাগ কিশোরকিশোরীরা ভুল পথে পা বাড়ায় বাবা-মা এর প্রতি রাগের বশে। তাদের মনে হতে থাকে, তাদেরকে কেউ বুঝতে পারছে না, বুঝতে চাইছেও না। এজন্য দায়ী কিন্তু বাবা-মা ই। আমরা সন্তানকে নিয়ে এত উদ্বিগ্ন থাকি যে ভুলে যাই, তাদেরও নিজেদের একটা পৃথিবী আছে। জোর করে কিছু করানোর চেষটা বা কিছু করতে না দেওয়ার ফলাফল খুব খারাপ হতে পারে।

আগ্রহ বুঝুন
কিশোর বয়সে নতুন করে চোখ তৈরি হয় পৃথিবী দেখার। একটা শিশু নারী হবার পথে পা বাড়ায় বা পুরুষ হয়ে উঠতে থাকে। এসময় অনেক কিছুর প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে থাকে। তার মন অনেক কথাই জানতে চায়। আপনার তৈরি করা বিধি-নিষেধ তাকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে পারে। আমাদের দেশে দেখা যায়, আমরা মেয়েদের ছেলে বন্ধু থাকবে এটা কোনমতাই পছন্দ করি না। ছেলের মা ও এটি ভাল চোখে দেখেন না। কিন্তু নিষিদ্ধ বস্তু আরও আকর্ষণ তৈরি করে। সিনেমা দেখা, বই পড়া এসব ক্ষেত্রেও কিছু ছাড় দিন।

সন্দেহ না করা
আপনার সন্তানকে কখনো সন্দেহ করবেন না। আপনি তাকে বিশ্বাস করেন না, এটি অনেক বড় একটা ধাক্কা হতে পারে তার জন্য। তার কিশোর মন অনেক দিকেই যাবে। কিন্তু আপনাকেও বুঝতে হবে, সে একটি ভিন্ন মানুষ হয়ে গড়ে উঠছে। তাকে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত জায়গা দিতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই