ঝড়ে ২০ নিহত

বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৩, আহত ১০

যশোর ও গাইবান্ধায় ঝড়-বৃষ্টি আর বজ্রপাতে স্কুল ছাত্র সহ ৩জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০জন।

বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ২, আহত ৪

যশোরে তিনস্থানে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ দুই জন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। রোববার দুপরে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- যশোরের উপশহর এলাকার এফ ব্লকের শহিদুল ইসলামের ছেলে ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নুরুজ্জামান (১৫) এবং মণিরামপুরের কোমরপুর গ্রামের চানআলীর ছেলে সাগর হোসেন (২৫)।
আহতরা হলেন- যশোর সদর উপজেলার বাগেরহাট গ্রামের মাহাবুর রহমানের ছেলে মারুফ হোসেন (২৫) ও তার ভাই আব্দুল মান্নান (২৮) এবং মণিরামপুরের সোনা মিয়া ও সাধান বিশ্বাস। তারা যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র মতে, উপশহর অনির্বান ক্লাবের মাঠে সহপাঠীদের সাথে ফুটবল খেলা করছিলো নুরুজ্জামান। এসময় বজ্রপাতে সে মারা যায়। অপরদিকে, মণিরামপুরের সাগর, সোনা মিয়া ও সাধন বিশ্বাস ইঞ্জিনচালিত নসিমনযোগে ঝিকরগাছা এলাকায় আসছিলো। পথিমধ্যে বাঁকড়া এলাকায় বজ্রপাতে সাগর মারা যান এবং সোনা মিয়া ও সাধন বিশ্বাস আহত হন।
এছাড়া দুপুরের দিকে ডিফ টিউবওয়েলে গোসল করছিলেন মারুফ হোসেন ও তার ভাই আব্দুল মান্নান। এসময় বজ্রপাতে তারা দু’জন মারাত্মক আহত হয়।

গাইবান্ধায় ঝড়ে নিহত ১

গাইবান্ধায় শনিবার সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ঝড়ের সময় যমুনা নদীতে নৌকা ডুবে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।

ঝড়ে লণ্ডভণ্ড বগুড়া, নিহত ২০
ঝড়১ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পুরো বগুড়া। ঝড়ের কবলে পড়ে বিভিন্ন উপজেলায় নারী ও শিশুসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। হাজার হাজার টিনের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছে শত শত মানুষ।

শনিবার সন্ধ্যায় জেলার সাত উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যায় অর্ধশত বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড়। এ ঝড়ের কবলে দেয়াল চাপা ও গাছের ডাল ভেঙে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে নৌকা ডুবে আরো দুজনের মৃত্যু হয়।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ঝড়ের তাণ্ডবে কমপক্ষে ৫০ হাজার ঘরবাড়ি, লক্ষাধিক গাছপালা ছাড়াও ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা শহরের জলেশ্বরীতলায় রোমেনা আফাজ সড়কে একটি চারতলা ভবন হেলে গিয়ে পাশে ভবনের সঙ্গে লেগে যায়। এতে ওই ভবনের সামনের গ্লাস ভেঙে যায়।

একই সঙ্গে বগুড়া পুলিশ লাইন্সে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ে কয়েকটি যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার বিকেল অবধি ১২টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার জন্য বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে।

এদিকে জেলার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ৫ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সূত্রমতে, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া প্রবল ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডব চলে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত। এর মধ্যে ৬টা ১ মিনিট থেকে ৬টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ গিয়ে দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৯৯ দশমিক ৯ কিলোমিটারে। ঝড়ের ভয়াবহ তাণ্ডবে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে ও উড়ে যায়। অনেক কাঁচা বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ঘরবাড়ি হারিয়ে কয়েক হাজার পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

জেলা প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মাহবুবর রহমান।

এদিকে, শহরের বহুতল ভবনগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এসব ভবনের বাসিন্দারা পানি সঙ্কটে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। গোসল, রান্না, পানি পান সব কিছুই প্রায় বন্ধের উপক্রম। অনেকেই দূরের টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন।

এদিকে, শহরের বনানী এলাকার ৩৩ কেভি জাতীয় গ্রিডের বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে। এ ছাড়া শহরের প্রতিটি এলাকার বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে আছে।

বগুড়া সদরে ঝড়ের সময় ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে শহরের বউ বাজার এলাকার আছিরন বেগম (৩৫) ও ৬ মাস বয়সী শিশু নিলা, পালশার স্কুলছাত্র পলাশ (১৮), রজবের (১৫) মৃত্যু হয়। ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে কাহালু উপজেলার হারলতা গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন(৪৫), আব্দুস সাত্তারের ছেলে আজিজুল হক(১৮), শাজাহানপুর উপজেলার রাধানগর গ্রামের আব্দুল মান্নান(৩২), ক্ষুদ্র ফুল কোর্ট গ্রামের পায়েল (১৫), নয় মাইলের রাবেয়া বেওয়া (৬৫), সোনাতলা উপজেলার ফিরোজা বেগম (৬০), সারিয়াকান্দি উপজেলায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে নারচি ইউনিয়নের বিল পাড়ার ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী শান্তা বেগম (৫৫) ও হাট ফুলবাড়ি গ্রামের চা দোকানি সুজন(৩০) নিহত হন। এছাড়াও ধারা বর্ষাচরের যমুনা নদীতে নৌকা ডুবে ওই এলাকার মোজাম মণ্ডল (৩৫) ও সোবাহান (৩৬) নামে দুজন মারা গেছে। অপরদিকে, ধুনটে আফজাল হোসেন (৬০) ও গাবতলীতে সামিয়া বেগম (৩২) মারা গেছেন।

এদিকে, রাতে বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে আরো চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। নিহতরা হলেন- বগুড়া সদরের সাবগ্রামের গোলাপী (৩৫), পালশার মোস্তাফিজুর রহমান (৬০) সদরের গোকুলের আকালু (৫০) ও নন্দীগ্রামের বলরাম গ্রামের আব্দুস সাত্তার (৫৫)।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক শফিকুর রেজা বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, ঝড়ের সময় বিভিন্ন ভাবে জেলার সাত উপজেলায় ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রমতে, রোববার সন্ধ্যার পর শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে। সার্বিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে আরো ২-৩ দিন সময় লাগতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই