বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
আজ ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার দীর্ঘ ১৯০ বছর পর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত দুটি রাষ্ট্র নতুনভাবে পথচলা শুরু করে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে পূর্ব পকিস্তান নামে বাংলাদেশের পথচলা প্রথম থেকেই বাংলার জনগণ মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। ফলে ১৯৫২ সালের মায়ের ভাষা রক্ষা করার জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। সালাম, বরকত, রফিকের জীবনের বিনিময়ে আমরা ফিরে পাই রাষ্ট্রভাষা বাংলা।
পরবর্তীতে চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আটান্নর আইয়ুব খানের মার্শাল ‘ল বিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির কুখ্যাত হামুদুর রহমান শিক্ষানীতি বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু।
এরপর তার নেতৃত্বেই ঐতিহাসিক ছয় দফা, ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তুরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন- এর ফলে বাঙালিরা বাংলার স্বাধীনতার চূড়ান্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখতে শুরু করেছিলেন।
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে পাকিস্তানিরা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দিতে যখনই গড়িমসি করে তখনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ই মার্চে দিক-নির্দেশনামূলক জাতির উদ্দেশে লাখো জনতার সামনে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছিলেন।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাজারো মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার মাটি। গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করে।
তার অবর্তমানে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনাসহ দেশের সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তাকে রাষ্ট্রপতি করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের সব নেতাদের বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকাকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সামরিক বেসামরিক ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়া হয়। বীর বাঙালিরা ত্রিশ লাখ মানুষ প্রাণ ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলার স্বাধীনতা।
বাংলার দামাল ছেলেরা যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বাংলার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশের মাটিতে পা রাখেন। সেই থেকে সারা বাংলার জনগণ দিবসটিকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি: সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন।
এছাড়াও বিশ্ব ইজতেমার কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ১০ জানুয়ারির পরিবর্তে পিছিয়ে ১২ জানুয়ারি করা হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংগঠনের সব শাখাকে আগামী ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের এই কর্মসূচি পালনে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ সব শ্রেণী-পেশা এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই