ফ্রান্সের চাপেই কাতারে বিশ্বকাপ

দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে গেল বছরের ৫ জুন ফিফা সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান সেপ ব্লাটার। বছরের শুরু থেকে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ২০১৮ সালে রাশিয়া এবং ২০২২ সালে কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ হিসেবে মনোনীত করা নিয়ে। এতে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে বলে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। প্রথম অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথায় পাত্তা না দিলেও পরে বিতর্কের মুখে পদ থেকে সরে দাঁড়ান ব্লাটার।

পদত্যাগের আট মাস পর ফিফা প্রেসিডেন্ট পদে থাকার শেষ দিনগুলোতে যে দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ উঠে তা নিয়ে মুখ খোলেন ফিফার সাবেক এ প্রেসিডেন্ট। দ্য টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সেপ ব্লাটার বলেন, ফ্রান্সের চাপেই কাতারকে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজকের দায়িত্ব দিতে হয়েছিল। ওই বছরের বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ হওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। চাপের মুখে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি আমেরিকার বদলে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতেই বিশ্বকাপের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা।

সেপ ব্লাটার জানান, গত ফিফা নির্বাচনের এক সপ্তাহ কি দশ দিন আগে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। কেননা ফ্রান্স চায়নি যে, ২০২২ সালে আমেরিকাতে বিশ্বকাপ হোক। আয়োজক দেশ পরিবর্তনে ফ্রান্সের মনোভাব ফিফা সভাপতির কাছে ফোনে প্রথম পৌঁছে দেন মিশেল প্লাতিনি। ওই সময় উয়েফা সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ফ্রান্সের সাবেক ফুটবল তারকা প্লাতিনি।

ব্ল্যাটারের ভাষায়, ‘আপনি একটি বিশ্বকাপকে কিনতে পারেন না। তারপরও সিদ্ধান্তের শেষটাতে রাজনৈতিক প্রভাব তো থাকেই। ২০২২ সালে বিশ্বকাপের জন্য প্লাতিনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘আমরা দেশের (ফ্রান্স) প্রধানের (নিকোলাস সারকোজি) সঙ্গে সভা রয়েছে। তিনি আমাকে বলবেন, ফ্রান্সের ভোট কোথায় যাবে। তার পরেই আমি সিদ্ধান্ত নেব। তবে এটাও সত্য যে, এর আগে তিনি (সারকোজি) আমাকে ফোনে জানান আমার ভোট যেন আমেরিকার পক্ষে না যায়।’

ফিফা সভাপতি নির্বাচনে মিশেল প্লাতিনির একটা প্রভাব ছিল। যার গুটি চালেন ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ব্ল্যাটারের ভোটের লোভ কাজ করেছে, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

ব্ল্যাটার জানান, ‘ফ্রান্স তার নিজের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছে। আমি জানতাম এটা একটা বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। এটা ফিফা নির্বাচনের এক সপ্তাহ কিংবা ১০ দিন আগের ঘটনা।’

২০১৫ সালটি ছিল ফিফার ইতিহাসের সবচেয়ে কেলেঙ্কারির বছর। বছরের শুরুতে টানা পঞ্চমবারের মতো ফিফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সেপ ব্লাটার। কিন্তু রাশিয়ায় ২০১৮ এবং কাতারে ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক হওয়া নিয়ে দুর্নীতি এবং ফিফার অন্যান্য কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আটক করে সুইস পুলিশ। এ দুর্নীতির সঙ্গে ফিফাপ্রধান সেপ ব্লাটারও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। এ অভিযোগের পর ফিফা প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ান সেপ ব্লাটার। দুর্নীতির সেই তালিকায় নাম লেখান মিশেল প্লাতিনিও। দু’জনই বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনে এখন নিষিদ্ধ।

ফিফার সঙ্গে সেফ ব্লাটারের সম্পর্ক সাড়ে তিন যুগেরও বেশি সময়ের। বিদায়ী বিংশ শতাব্দির শেষদিকে টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর হিসেবে যুক্ত হন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক এ সংস্থার সঙ্গে। এটা ১৯৭৫ সালের কথা।১৯৮১ সালে নির্বাচিত হন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। টানা ১৮ বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর সংস্থার অষ্টম সভাপতি নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন ২০১৫ সাল পর্যন্ত।



মন্তব্য চালু নেই