ফোনে খালেদা জিয়াকে যা বললেন সালাউদ্দিন

শিলং থেকে মোবাইল ফোনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক সালাহ উদ্দিন বর্তমানে শিলংয়ের নিগ্রেহমস (নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সায়েন্সেস) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের ১৬ নম্বর বেড থেকে গত বুধবার রাতে তিনি স্ত্রীর মোবাইল ফোন দিয়ে দলীয় প্রধানের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলেন।

টেলিফোনে ওপাশ থেকে তিনি (খালেদা জিয়া) ঠিক কী বলেছেন, তা জানা না গেলেও এপাশে কথা বলার একপর্যায়ে সালাহ উদ্দিন কেঁদে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম, আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি তো আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছিৃ।’ সালাহ উদ্দিনের শয্যার পাশের শয্যায় চিকিৎসাধীন মেঘালয়ের গারো হিলসের তুরাগ গ্রামের বাসনী রানী দাশ গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

বাসনী রানীর ভাষ্য মতে, ‘যেহেতু আমার বাড়ি বাংলাদেশে ছিল, তাই আমি সে দেশের অনেক লোককে চিনি। কাল রাতে পুলিশ যখন সালাহ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে এসেছিল, তখন সাবেক মন্ত্রী বলে সবাই তাকে সম্মান করছিল। তাই তার দিকে নজর ছিল সবার। রাতে স্ত্রী হাসিনা আহমেদের মোবাইল ফোন থেকে কথা বলার সময় তিনি কয়েকবারই জি ম্যাডাম, জি ম্যাডাম করে কথা বলেন। হাসিনা আহমেদই তার স্বামীকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।’

তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়ে হাসিনা আহমেদ, শিলংয়ে উপস্থিত তাদের স্বজন, এমনকি বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনিও কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

নিগ্রেহমস হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে, সালাহ উদ্দিনের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। সে কারণে যেকোনো সময় তাকে এ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সালাহ উদ্দিন হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটেই (সিসিইউ) ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁকে সিসিইউতে রাখা হয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তরে নিগ্রেহমসের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল সুপার ডা. ভাস্কর বর্গহাইন বলেন, ‘নিগ্রেহমসে বিচারাধীন মামলার আসামিদের (ইউটিপি) রাখার জন্য আলাদা কোনো বিভাগ নেই। ফলে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীনদের আমরা নিরাপত্তার খাতিরে সিসিইউতে কিংবা আইসিউতে ভর্তি রাখি। ইউটিপি বিভাগ থাকলে সেখানেই তাঁকে রাখা হতো।’

নিগ্রেহমস হাসপাতালের হার্ট, স্কিন, সার্জন ও নিউরোলজি বিভাগের চারজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসককে নিয়ে গতকাল দুপুর ২টায় হাসপাতালের ১২ নম্বর মেডিক্যাল সুপারের কক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড মিটিং হয়। সেখানে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সালাহ উদ্দিনের যাবতীয় মেডিক্যাল রিপোর্ট পর্যালোচনা করে একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের সেই রিপোর্ট দেয়া হবে।

গতকাল নিগ্রেহমসের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল সুপার ডা. ভাস্কর বর্গহাইন বলেন, ‘চারটি বিভাগের চিকিৎসকদের ডেকে আনা হয়েছিল, সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। সালাহ উদ্দিনের বিষয়টি যেহেতু পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত তাই বিষয়টি আমরাও দীর্ঘ করতে চাই না। যত দ্রুত সম্ভব তাকে ছেড়ে দেয়া যায় কি না, সেবিষয়ে বোর্ডে উপস্থিত চিকিৎসকদের প্রত্যেকের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। তাঁরা শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই তাঁদের পরামর্শ দেবেন। এর পরই তাকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

নিগ্রেহমসের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, সালাহ উদ্দিনের শারীরিক অবস্থা তেমন খারাপ নয়। সিভিল হাসপাতালে যেমন ছিলেন ঠিক তেমনই আছেন বরং এর চেয়ে উন্নতি হয়েছে তার। ফলে শুক্রবার হয়তো তাঁকে এই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।

চিকিৎসকরা সুস্থ বলে প্রতিবেদন দিলে এবং আজ সালাহ উদ্দিনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হলে পুলিশ অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় তাকে আদালতে তোলার উদ্যোগ নেবে। তবে শনি ও রবিবার আদালত বন্ধ থাকে। সে ক্ষেত্রে আগামী সোমবার তাকে আদালতে তোলা হতে পারে।

হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা চলছে সালাহ উদ্দিনের। গতকাল সকালে নিগ্রেহমসে ফোন করে শিলংয়ে এসপি এম খাগড়াং তার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সালাহ উদ্দিনের দৈনিক স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য গতকাল এসপির কাছে ই-মেইল করা হয়েছে। যদিও সিভিল হাসপাতাল থেকে মাত্র এক দিন আগে এ ধরনের রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল এসপির কাছে।

সালাহ উদ্দিনের মামলাটি আদালতে উঠলে সরকারপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে আই সি ঝার। তিনি মেঘালয় হাইকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভারতীয় আইনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ অনুপ্রবেশের মামলায় অভিযুক্ত হবেন। এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। সঙ্গে অর্থদন্ডও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনাদায়ে আরো সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত জেল খাটতে হতে পারে।

সালাহ উদ্দিন ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তাকে অপহরণ করে ভারতে আনা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে মামলা পরিচালনার বিষয়টি কীভাবে দেখা হবে- এ প্রশ্নের জবাবে আই সি ঝা বলেন, কাউকে অপহরণ করে আনা হলে নিশ্চয়ই দেশে এ ব্যাপারে তার পক্ষে অন্য কেউ অপহরণের মামলা করেছে। আদালতে এ ব্যাপারে কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। তারপর মামলার বিষয়টি যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে যাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পুরো বিষয়টি লম্বা প্রক্রিয়ার বিষয়। তবে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে অনুপ্রবেশের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা খাটতেই হবে। সাজার মেয়াদ শেষে আসবে পুশব্যাকের প্রশ্ন।



মন্তব্য চালু নেই