ফেসবুকে চলছে ‘ইয়েস-টু-রামপাল’ বনাম ‘সেভ সুন্দরবন’

সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্রজেক্ট বাস্তবায়নে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পক্ষ-বিপক্ষে অনেক কথা হচ্ছে। তবে চুক্তি পরবর্তীতে অনলাইন প্রতিবাদ নতুন রূপ পেয়েছে।

ইয়েস-টু-রামপাল বনাম সেভ সুন্দরবন হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ১২ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) এবং ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের (বিএইচইএল) মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট কনস্ট্রাকশন-ইপিসি (টার্নকি) চুক্তি সই হয়।

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকেই তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটি আন্দোলন করে আসছে বিরোধিতা করে। সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করে তারা।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই ২০১৬) তাদের মিছিলে অতর্কিতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এরপর থেকে শুরু হয় অনলাইনে এই হ্যাশট্যাগ; যেখানে বলা হচ্ছে, ‘আমি … জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন ‪#‎নাগরিক এবং সংবিধানের ৭ এর (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের ‪#‎মালিক। আমি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র ‪#‎প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিদ্যুৎ আমিও চাই, কিন্তু ‪#‎সুন্দরবন ধ্বংস করে আমার বিদ্যুৎ এর দরকার নেই। অনুগ্রহ করে আপনিও আপনার প্রতিবাদটা জানান কারণ এই দেশটা আপনারও, এই সুন্দরবনের মালিক আপনিও। প্রতিবাদের আওয়াজ তুলুন। প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশকে রক্ষা করুন।’

#‎SaveSundarbans ‪#‎NoToRampal।

একইসঙ্গে শুরু হয়েছে, এই হ্যাশট্যাগের যৌক্তিকতার প্রশ্ন। সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা লিখেছেন, ‘আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন ‪#‎নাগরিক এবং সংবিধানের ৭ এর (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের

‪#‎মালিক। রামপাল উপজেলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে কিভাবে মংলা উপজেলার সুন্দরবন মারা যাবে এবং সুন্দরবন ধ্বংসের অসংখ্য কারণকে এ যাবৎকাল পাশ কাটিয়ে আসা মানুষগুলো কেন হঠাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকেই সুন্দরবন ধ্বংসের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন এবং আন্দোলন করছেন; এই কথার যৌক্তিক জবাব না পাওয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের অদূরে অবস্থানরত আমি সুন্দরবনের সুস্বাস্থ্য এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র দুইই চাই। #‎YesToRampal’

যারা ইয়েস-টু রামপাল হ্যাশট্যাগ দিতে শুরু করেছেন, তাদের উদ্দেশে আন্দোলনকারীরা বলছেন, ‘আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন ‪#‎নাগরিক এবং সংবিধানের ৭ এর (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের ‪#‎মালিক। আমার মালিকানা আমি রাষ্ট্রকে দিলাম, তাদের বলছি, আপনি যেহেতু দেশের মালিকানা রাষ্ট্রকে ছেড়ে দিয়েছেন অতএব এই দেশ ও রাষ্ট্র নিয়ে আর কোনও কথা বলার অধিকার আপনার নেই। আশা করি দেশ নিয়ে আগামীতে “আমার দেশ” বলে মাতব্বরি করতে আসবেন না। আমি বা আমরা যেহেতু দেশের মালিকানা ছাড়িনি। এই দেশে যেহেতু আমরা থাকব, তাই এই দেশ ও রাষ্ট্রের ভালো-মন্দ নিয়ে কথা বলার অধিকার আমাদের আছে। আমরা বলবো। তাই জনগণের দাবি সরকারকে মানতে হবে। দেশের মালিকদের দাবি মেনে সরকারের প্রতি অনুরোধ দ্রুত রামপালে সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করুন। আসুন একইসঙ্গে আমরা রামপালের পরিবর্তে কোথায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যায়, সেই কাজে সরকারকে সহায়তা করি। জয় বাংলা। সুন্দরবন বেঁচে থাকুক। ‪#‎saveshundorban’

প্রসঙ্গত, ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদের উপস্থিতিতে চুক্তি সই হয়। বিএইচইএল’র জেনারেল ম্যানেজার প্রেমপাল যাদব এবং বিআইএফপিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

১.৪৯ বিলিয়ন ডলারের এ চুক্তির অর্থায়ন করবে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।



মন্তব্য চালু নেই