ফের আসছে হরতাল!

চলছে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি)। এর মধ্যেই আবারো হরতাল আসছে। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মাঠে নামছে দেশের ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো। কোনো কোনো দল হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেবে বলেও জানা গেছে।

রোববার রাতে লতিফ সিদ্দিকী ফেরার পর ইসলামি দলগুলো তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানায়। একাধিক দল বিবৃতি দিয়ে বিমানবন্দর থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। অন্যথায় হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি আসবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এর আগে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে হরতাল দিয়েছিল সম্মিলিত ইসলামি দল। এবারও হরতালের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। সম্মিলিত ইসলামি দলের মহাসচিব ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ‘আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার না করলে কঠোর আন্দোলন হবে। দল থেকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিলে তাকে গ্রেপ্তারে বাধা কোথায়? তাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা না নিলে সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মোসলমানরা আন্দোলনে মাঠে নামবে। প্রয়োজনে হরতাল কর্মসূচি দেয়া হবে।’

লতিফ সিদ্দিকির ফাঁসির দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন হচ্ছে আরো হবে বলে জানান খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান।

সাবেক অর্বাচীন মন্ত্রী লতীফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না আনা হলে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেবেন বলে জানিয়েছেন ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার ইমাম ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

তিনি বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারে সরকারের কোনো ধরনের ভুল এ জাতি বরদাশত করবে না। লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তার বা বিচারের আওতায় আনতে সরকারের কোনো ত্রুটি বা অবহেলা দেখা গেলে সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মোসলমানদের এই দেশে লতিফ সিদ্দিকী নাস্তিক্যবাদকে উসকে দিতে চেয়েছেন। তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে দেশের সতেরো কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রশান্তি আসবে। সরকার এরকম চরম অর্বাচীন একটি মানুষের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিতে পারে না। সরকারকে ভুলে গেলে চলবে না যে, কেউ তাকে বাঁচানোর দায়িত্ব তার ঘাড় মটকে যাবে।’

লতীফ সিদ্দিকীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম । এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবীর (স.) সাথে বেয়াদবি, ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ্ব নিয়ে কটূক্তি, তাবলীগ জামাত নিয়ে অশোভন মন্তব্যের কারণে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী মুরতাদ হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা মামলাও করেছেন, যাতে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার এড়াতে সে এতদিন ভারতে অবস্থান করলেও দেশে আসতে সাহস পায়নি। আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, তাকে বাঁচানোর কোনো অপচেষ্টা করবেন না, অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করুন। নতুবা দেশের সাধারণ মোসলমানদের ক্ষোভ সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলে সামাল দেয়ার শক্তি আপনাদের থাকবে না। তার গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে রাজধানী ঘেরাওসহ বৃহত্তর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবো।’

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি ও হেফাজত নেতা আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ‘মুরতাদ লতিফ সিদ্দিকী পবিত্র হজ , ইজতেমা ও আল্লাহর রাসূলকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করে বাংলাদেশে প্রবেশের অধিকার হারিয়েছেন। বাংলাদেশের পবিত্র জমিনে এরকম মুরতাদদের অবস্থান এক মুহূর্তও মেনে নেয়া যায় না। অবিলম্বে মুরতাদ লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় জাতি ধরে নিবে তার আগমন ও ইসলাম বিদ্বেষী বক্তৃতার সাথে সরকারের হাত রয়েছে। তার গ্রেপ্তারি ও বিচার নিয়ে টালবাহানার করলে দেশে যে কোন বিশৃংখল পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তার দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।’

এদিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন গওহরডাঙ্গা মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন। রাতে এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম, হজ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মানব মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করে তিনি শুধু বাংলাদেশের ১৫ কোটি মোসলমানের হৃদয়ে আঘাত হানেনি বরং বিশ্বের ১৪০ কোটি মোসলমানের হৃদয়ে চরম আঘাত হেনেছেন। এহেন ধৃষ্ঠতা পোষণকারী স্বঘোষিত মুরতাদ পীর আওলিয়াদের এই পবিত্র ভূমিতে পা দেয়ার দুঃসাহস পেলো কোথায়? স্পষ্ট বলতে চাই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। না হলে সরকারকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।’

লতিফ সিদ্দিকীর দেশের ফেরার নিন্দা জানিয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আওয়াল বলেন, ‘তাকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হোক। তিনি আল্লাহ ও রাসূলের যে অবমাননা করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করা না হলে তরিকত ফেডারেশন কঠোর আন্দোলনে যাবে।’

এর আগে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী সাংবাদিকদের ফোনে বলেছেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীকে বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা না হলে এই মুহূর্ত থেকে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।’

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশেল সদস্য সচিব মুছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীকে ঢাকা বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা না হলে দুর্বার আন্দোলন করা হবে।’

নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিবৃতি দিয়েছেন তারা।

এর কিছুক্ষণ পরই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, ‘মুরতাদ লতিফ সিদ্দিকীকে বিমানবন্দর থেকে দেশের মাটিতে নামতে দেয়া হলে ঢাকা ঘেরাও এবং লাগাতার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

এদিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন গওহরডাঙ্গা মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন। রাতে এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম, হজ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মানব মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করে তিনি শুধু বাংলাদেশের ১৫ কোটি মোসলমানের হৃদয়ে আঘাত হানেনি বরং বিশ্বের ১৪০ কোটি মোসলমানের হৃদয়ে চরম আঘাত হেনেছেন। এহেন ধৃষ্ঠতা পোষণকারী স্বঘোষিত মুরতাদ পীর আওলিয়াদের এই পবিত্র ভূমিতে পা দেয়ার দুঃসাহস পেলো কোথায়? স্পষ্ট বলতে চাই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। না হলে সরকারকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।’

অপরদিকে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সেক্রেটারি ডা. মওলানা এনামুলহক আজাদ বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীর নিরাপদে দেশে ফেরা কোনোভাবেই মেনে নেয় হবে না। অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করা না হলে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।’

উল্লেখ্য, নবী(সা.), হজ ও তাবলীগ জামাত নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ায় একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে রোববার রাতে ঢাকায় ফিলেছেন লতিফ সিদ্দিকী। তিনি রাত পৌন ৯টয় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই