ফেরিঘাট মাওয়া, ইলিশ যাবে পাওয়া
ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাতের সঙ্গে পদ্মার বড় তাজা রুপালি ইলিশ, ইলিশের লেজ দিয়ে কাঁচা পেঁয়াজ আর শুকনো মরিচের ভর্তা সঙ্গে মরিচ পোড়া, বেগুন ভাজি আর টক ঝাল চাটনি। রসনাবিলাসী বাঙালিদের খাবারের পাতে এর চেয়ে লোভনীয় আর কিছু কি হতে পারে? সঙ্গে গন্ধ লেবু, কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ তো আছেই…
দুঃখিত যদি খাবারের এমন লোভনীয় বর্ণনা শুনে আপনার জিভে কিঞ্চিৎ পানি চলে আসে। তবে কথা দিচ্ছি আপনার জিভের পানি একদম বৃথা যেতে দেব না। অন্তত বলে যাব কোথায় পাবেন এমন বাঙালি লোভনীয় খাবার। শুধু এমন লোভনীয় খাবারই নয়, আছে অনেক সুন্দর ঘুরে দেখার মতো সুন্দর পরিবেশও। তবে দেখি কোথায় মিলবে এমন খাবার।
ভ্রমণ ও রসনাবিলাসীর বলছি, আমি এতখন মাওয়া ফেরিঘাটের কথা বলছি। যেখানে একই সঙ্গে পাবেন পদ্মার রুপালি ইলিশ আর পদ্মার বিশাল জলরাশির উন্মাদনা দেখার সুযোগ।
যাঁরা পদ্মার তাজা ইলিশ খেতে মাওয়া ফেরিঘাটে ঢু মারার প্ল্যান করছেন তাঁদের বলছি। যদি জেলেদের কাছ থেকে তাজা ইলিশ কিনে খেতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই অন্তত একদিনের সকালের আরামের কাঁচা ঘুম ত্যাগ করে মাওয়া যেতে হবে সকাল ৯টার মধ্যে।
এখানে মাছের ওজনের সঙ্গে সঙ্গে দামটাও পাল্লা দিয়ে ওঠানামা করে। যতটা পারেন দরদাম করে মাছ কিনবেন। চাওয়া দামের অর্ধেক টাকায় ইলিশ বগলদাবা করেছে এই রকম মানুষের অভাব নেই। মাছ কেনা শেষে সামনে দাঁড়িয়ে মাছ কাটা আর ভেজে নিন। অন্যথায় আপনি নড়াচড়া করলে মাছটাও নড়াচড়া করতে পারে। আপনার অনেক শখের কেনা বড় ইলিশটা ছোট হয়ে যেতে পারে। লেজের ভর্তা করার জন্য অতিরিক্ত টাকা নেবে কি না আগেই জেনে নিন।
শুধু যে এখানে ইলিশ মাছ আছে তা কিন্তু না। এখানে পাবেন বড় বড় চর্বিযুক্ত পাঙ্গাশ মাছ। পাঙ্গাশ মাছের পেটির স্বাদও নিতে পারেন অনায়াসে। এ ছাড়া শিং, চিংড়িসহ হরেক রকম নদীর মাছের ভর্তা পাবেন। যাঁদের মাছের প্রতি কিঞ্চিৎ বিরক্তি আছে, বিশেষ করে কাঁটা আর স্বাদের কারণে তাদের জন্য আছে মাংসের আয়োজন। মুরগি খাসিসহ আছে অনেক পদের মাংস রান্না।
যাদের ইলিশ কেনার অভিজ্ঞতা নেই, তাদের অনেকেই সমস্যায় পড়েন ইলিশের দরদাম নিয়ে। অথবা কোন ইলিশটা স্বাদের জন্য ভালো হবে, তা নিয়েও চিন্তাই পড়েন অনেক দম্পতি। স্বামী ডিম ছাড়া ইলিশ কিনতে চাইলে স্ত্রী চান ডিমওয়ালা ইলিশ খেতে। এই ছোট্ট সংশয়ের ছোট্ট সমাধান অনেকেরই অজানা। ডিমওয়ালা ইলিশের স্বাদ কিছুটা কমে যায়। ইলিশের পেটে ডিম হওয়ার কারণে পেটের তেল কিছুটা কমে যায়, ফলে ইলিশের প্রকৃত স্বাদে কিছুটা ভাটা পড়ে। আবার অনেকেই বলতে পারেন, ডিম ছাড়া ইলিশ কিনলে ডিমের স্বাদ পাব কী করে। সে ক্ষেত্রে মাওয়া ঘাটে আপনি ডিম ছাড়া ইলিশ কিনে অতিরিক্ত ডিমও কিনে নিতে পারেন অন্য ইলিশ থেকে। সুতরাং আপনি ইলিশের প্রকৃত স্বাদও পেলেন সঙ্গে ডিমের মজাটাও পেলেন। ছোট ৪০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ইলিশের দাম পড়বে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা আর ইলিশের ওজন যদি ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম হয় তবে দাম পড়বে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর যদি কোনোভাবে ইলিশের ওজন এক কেজি পার হয় তবে আর সেই ইলিশ পায় কে। ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা দাম হাঁকিয়ে বসে থাকে। তবে দাম শুনে ভড়কে যাবেন না। চাওয়া দামের অর্ধেকেও ইলিশ বিক্রির ইতিহাস এখানে অনেক পুরাতন।
শুধু ইলিশ খেয়ে চলে আসা নেহাত বোকামি হবে যদি বিশাল পদ্মার পাড়ে বসে পদ্মার অথৈ জলরাশির একটু উন্মাদনা না দেখেন।
এ জন্য ঘুরে আসতে পারেন মাওয়ার অদূরে লৌহজং। এখানে আছে মনোমুগ্ধকর পদ্মা রিসোর্ট। মাওয়া থেকে ব্যাটারিচালিত অটোতে যেতে সময় লাগবে ২৫-৩০ মিনিত আর ভাড়াও নেবে ২৫ টাকা। সেখান থেকে নৌকায় করে ঘুরে আসতে পারেন রিসোর্টটি। এতে আপনার রিসোর্ট দেখাও হলো, নৌকাতে চড়াও হলো। রিসোর্টটি ঘুরে দেখতে দিতে হবে ৫০ টাকা। আর এখানে থাকার সুব্যবস্থাও আছে। সারা দিন থাকতে চাইলে ১৮৫০ টাকা আর সারা দিন-রাত থাকতে চাইলে গুনতে হবে ৩৩৫০ টাকা। ডাবল বেডের এই কটেজগুলোতে একটা চার সদস্যের পরিবার অনায়াসে থাকতে পারবে। এ ছাড়া রিসোর্টের অদূরে আছে লৌহজং সামুর বাড়ির স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঘাট থেকে পদ্মা দেখতে অনেক সুন্দর।
সকালে রওনা দিয়ে সারা দিন পদ্মার বিশাল জলরাশির উন্মাদনা দেখতে দেখতে আর মজার ইলিশ খেয়ে আপনার দিনটি কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, আপনি হয়তো টেরই পাবেন না। ছোট্ট এই ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরেও দেখবেন আপনার হাত থেকে ইলিশের সেই প্রিয় গন্ধটা পাওয়া যাচ্ছে। ইলিশের গন্ধটা হয়তো আজ বাদে কাল শেষ হয়ে যাবে কিন্তু এমন সুন্দর ভ্রমণের স্মৃতিগুলো আপনার হৃদয়ের আয়নায় চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে।
যেভাবে যাবেন : ঢাকার মিরপুর ১০, ফার্মগেট, শাহবাগ থেকে স্বাধীন পরিবহনে ভাড়া নিবে ১০০ টাকা। এ ছাড়াও ঢাকার গুলিস্তান থেকে সারাদিনই পাবেন মাওয়া যাওয়ার বাস। ইলিশ, গাঙচিল পরিবহন এবং বিআরটিসির এসি বাস সার্ভিস আছে মাওয়া যাওয়ার জন্য। ইলিশ আর গাঙচিল পরিবহনে ভাড়া নেবে গুলিস্তান থেকে মাওয়া ৭০ টাকা।
মন্তব্য চালু নেই