ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদ (১২/১০/১৪)

ইভটিজারের ৬ মাসের সাজা:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে এক ইভটিজারকে আটক করে ৬ মাসের সাজা প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান। সাজা প্রাপ্ত ইভটিজার উপজেলার কড়াই গ্রামের তোফাজ্জাল হোসেন মন্টুর ছেলে তুহিন বাবু লিও (২২)।
ফুলবাড়ী থানার ওসি এবিএম রেজাউল ইসলাম জানায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অভিযান চালিয়ে ধৃত তুহিন বাবু লিওকে একজন একাদ্বশ শ্রেণীর ছাত্রীকে উত্যপ্ত করার সময় হাতে নাতে আটক করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক তাকে উপরোক্ত সাজা প্রদান করেন।

অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও মিলছেনা বাস ও ট্রেনের টিকেট:
ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতে কর্মক্ষেত্রে ফেরা মানুষের বিড়ম্বনা আবারো শুরু হয়েছে। শনিবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বাস ও রেলওয়ে স্টেশনে ঘুরে দেখা গেছে, এই সকল কর্মজীবি মানুষের বিড়ম্বনা।
যাত্রীদের নিকট জানা গেছে নির্ধারিত মূল্যের দেড়-দুই গুন ভাড়া দিয়েও কোন টিকেট মিলছে না, এজন্য তারা জীবনের ঝুঁকিনিয়ে ট্রেন ও বাসের ছাদে চড়েই পাড়ি জামাচ্ছে ৩০০/৪০০ কিলোমিটার পথ।
ঢাকা কোচ হানিফ এন্টার প্রাইজের ফুলবাড়ী কাউন্টার ম্যানেজার আজিজার রহমান জানায়, প্রতিদিনে এই পথ দিয়ে ২৫ কোচ যাতায়াত করে ২৫টি কোচে দুইশত যাত্রীকে আমরা টিকেট দিতে পারি কিন্তু ঈদের ছুটি হওয়ায় এখন প্রতিদিনে পাঁচশত টিকেট চাহিদা হয়ে দাড়িয়েছে এজন্য সব যাত্রীদের টিকেট দেয়া সম্ভাব হচ্ছে না। একই কথা বলেন অন্যান্য কোচ কাউন্টারের টিকেট ম্যানেজারেরা। এদিকে ফুলবাড়ী রেলওয়ে ষ্টেশন দিয়ে ৩টি ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন যাতায়াত করে। ৩টি ট্রেনে ১২৫টি টিকেট ফুলবাড়ী রেলওয়ে ষ্টেশনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এর সঙ্গে ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে একটি বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করছে। সেই ট্রেনের মাত্র ৩০টি টিকেট ফুলবাড়ী ষ্টেশনের বরাদ্দ রয়েছে। ষ্টেশন মাস্টার ইসমাইল হোসেন জানায়, ঈদ ও পূজার ছুটি এক সঙ্গে হওয়ায় এই ষ্টেশনে প্রতিদিনে ৫ শতাধীক যাত্রী এসে ভীর জমাচ্ছে। এ কারণে ষ্টেশনে টিকেটের সংকট দেখা দিয়েছে।
অপর দিকে বাস ও ট্রেন যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, ট্রেনের ডিজিটাল সিস্টেম হওয়ায় টিকেট মাস্টাররা আগে থেকেই কম্পিউটারের প্রিন্ট দিয়ে কাল বাজারীদের হাতে দিয়ে দিচ্ছে। এ জন্য ষ্টেশনের টিকেট কাউন্টারে টিকেট পাওয়া না গেলেও পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানের অতিরিক্ত টাকায় টিকেট পাওয়া যাচ্ছে।
উল্লেখ্য দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলাটি যাতায়াতের জন্য একটি কেন্দ্রীয় স্থল। এখান থেকে ট্রেন যোগে যাতায়াত করে ফুলবাড়ী উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, চিরিরবন্দর উপজেলার অধিকাংশ বাসীন্দারা। এছাড়া পৌরশহরের কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে সরকারের বৃহত্তর ৩টি প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানী লিমিটেড, বড়পুকুরিয়া কোলমাইন কোম্পানী লিমিটেড ও বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এছাড়া উত্তরবঙ্গের স্বনাম ধন্য বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী দর্শনার্থীরা এই উপজেলা দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। এ জন্য সারা বছর জুড়ে ফুলবাড়ী রেলওয়ে ষ্টেশনে টিকেট সংকট দেখা দেয়। এই অঞ্চলের অধিবাসীরা ফুলবাড়ী রেলওয়ে ষ্টেশনে ট্রেনের টিকেটের বরাদ্দ বৃদ্ধি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

উত্তরাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনগুলো মাদক পাচার ও চোরাকারবারীদের নিরাপদ রুট:
দেশের উত্তরাঞ্চল সীমান্তঘেষা পথ দিয়ে চলাচলরত আন্তঃনগর ট্রেনগুলো এখন মাদক পাচার ও চোরাকারবারিদের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। ট্রেনে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় রেলভ্রমণে নিরুৎসাহিত হচ্ছে যাত্রী, এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে রেল। রেলওয়েতে নিয়মিত ভ্রমণকারী রেলযাত্রীরা জানায়, রেলওয়েতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জিআরপি পুলিশ এর প্রকাশ্যে সহযোগিতায় চোরাকারবারিরা নির্বিঘ্নে রেলে বহন করছে মাদক ও ভারত থেকে চোরাপথে আসা ভারতীয় পণ্য। রেলযাত্রীদের অভিযোগ রেলওয়ে পুলিশ আমদানি নিষিদ্ধ মাদক ফেনসিডিলসহ অন্য মালামাল তারা টিকিটধারী যাত্রীদের সিটের নিচে রাখতেও দ্বিধা বোধ করে না। আরো ঐ সকল পণ্য চোরাকারবারিরা রেলওয়েতে বিনা টিকিটে যাতায়াত করছে। এতে করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এখানে রেল ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হয়ে দিন দিন যাত্রী হারাচ্ছে রেল। আর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
আন্তঃনগর ট্রেনে ভ্রমণকারী রেলযাত্রীরা জানান, উত্তরাঞ্চলে চলাচলরত আন্তঃনগর ট্রেন দিনাজপুর হতে ঢাকা একতা এঙ্প্রেস, দ্রুতযান এঙ্প্রেস, নীলফামারী হতে ঢাকাগামী নীলসাগর এঙ্প্রেস, সৈয়দপুর হতে খুলনাগামী রুপসা ও সীমান্ত এঙ্প্রেস এবং চিলাহাটি থেকে রাজশাহীগামী বরেন্দ্র, তিতুমীর এঙ্প্রেস ট্রেনগুলো সীমান্ত ঘেঁষা স্টেশন দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী, বিরামপুর, হাকিমপুর (বাংলা হিলি স্টেশন) ও জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে। কিন্তু প্রতিটি ট্রেনেই বাংলা হিলি হাকিমপুর ও পাঁচবিবি রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থান সেখানে কোনো স্টেশন না হলেও আটাপাড়া নামক স্থানে প্রতিদিন আসা যাওয়ার পথে অবৈধভাবে যাত্রা বিরতি করে। আর সেখান থেকে প্রতিটি ট্রেনে ভারত থেকে চোরাপথে আসা ভারতীয় মালামাল ও আমদানি নিষিদ্ধ ফেনসিডিল ট্রেনে উঠিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহন করছেন। এ বিষয়ে রেলের কোনো যাত্রী প্রতিবাদ করতে গেলে রেলওয়ে পুলিশের হাতে ঐ যাত্রীকেই লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ট্রেনে অধিকাংশ জায়গায় হিজড়াদের উৎপাতও বেড়ে চলেছে। তাদের অকর্থ্য ভাষায় পরিবার নিয়ে রেল ভ্রমণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ট্রেনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও রেলওয়ে পুলিশ চোরাকারবারিদের মালামাল বহন করতে সহায়তা করে নিজেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেলেও রেল হারাচ্ছে রাজস্ব। এ কারণে প্রতি বছরেই রেল লোকশানের মুখে পড়ছে। সরকারকে গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ভুর্তকি। এ জন্য রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ও নিয়মিত ভ্রমণকারী রেলযাত্রীরা। রেলকে লোকশানের মুখ থেকে রক্ষা করতে ও দেশের অর্থনীতি ও যুবসমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রেলে মাদক বহন বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই