ফুটবল বিশ্ব দ্বিখণ্ডিত হয়ে নতুন ফিফা গড়ার হুমকি!

আচ্ছা, ২০১৮ বিশ্বকাপ বয়কট করলে কেমন হয়? কিংবা বিশ্বকাপের বাইরে বিশ্বসেরা ও শক্তিধর দেশগুলোকে নিয়ে যদি একটি আলাদা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়? তিন মোড়লের খবরদারিতে আইসিসি যেভাবে দ্বিখণ্ডিত হতে বসেছিল, সেই একই দশা হতে পারে ফিফারও। সেপ ব্ল্যাটার আরেক দফা নির্বাচিত হওয়ায় ফুটবলের শক্তিধর দেশগুলো, বিশেষ করে ইউরোপীয় অংশটি মহা ক্ষুব্ধ। এঁদের একজন, হল্যান্ডের ফুটবল সংস্থার (কেএনভিবি) প্রধান বার্ট ফন অস্টফিন হুমকি দিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে হয়তো নতুন ফিফা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে তাদের।

এফবিআইয়ের তদন্তে মহা মহা আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হওয়া, ফিফার সাত শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব বাবদে এক কোটি ডলার ঘুষের লেনদেন হওয়ার অভিযোগ, রাশিয়া-কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন বরাদ্দেও তদন্তের ঘোষণা—ফুটবল বিশ্বে রীতিমতো টালমাটাল ঘটে গেছে। ফিফা প্রধান হিসেবে এর দায় ব্ল্যাটারের ওপরও বর্তায়। গত ২৪ বছরে ১৫ কোটি ডলারেরও বেশি দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে, এর ১৭ বছরই সভাপতি ছিলেন ব্ল্যাটারই।

কিন্তু কালকের ভোটে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারেনি। ইউরোপ বা উয়েফা বেশির ভাগ দেশ বিপক্ষে ভোট দিলেও ব্ল্যাটারের বিশ্বস্ত ভোট ব্যাংক বলে পরিচিত এশিয়া আর আফ্রিকার সদস্যরা আবারও জিতিয়ে দিয়েছে তাঁকে। এর আগে ইংল্যান্ড হুমকি দিয়েছিল, ব্ল্যাটার পুনর্নির্বাচিত হলে ২০১৮ বিশ্বকাপ তারা বয়কট করবে। এবার ক্ষুব্ধ ফন অস্টফিনও তাকে হল্যান্ডের সমর্থনের কথা জানালেন। শুধু তা-ই নয়, বিকল্প ফিফা গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। সবাইকে সম্মান করেই বলছি, এখানে উপস্থিত ছোট দেশগুলোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা গড়ে তুলেছে। অথচ বিশ্ব ফুটবলকে আরও প্রসারিত করতে মূল ভূমিকা রাখছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, হল্যান্ডসহ আরও কিছু দেশ। এই দেশগুলোর এখন উচিত একেবারে শূন্য থেকে একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন ফিফা গড়ে তোলা। ইউরোপের বাইরেও আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও এশিয়ারও বেশ কিছু দেশ একই কথা ভাবছে বলে আমি জানি।’

ফন অস্টফিনের এমন মন্তব্যে উদ্বেগ জাগাই স্বাভাবিক। ফুটবল সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। কোটি কোটি মানুষের আশা আর আবেগের কেন্দ্র। সেই ফুটবল রাজনীতির মারপ্যাঁচে এভাবে দ্বিখণ্ডিত হোক, কোনো সমর্থকই তা চাইবে না। যদিও ফন অস্টফিনের কথা শুনে এখনই ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এমন নয়, আটঘাট বেঁধে ইউরোপ মাঠে নেমেছে নতুন ফিফা গড়ে তুলতে। ফন অস্টফিনই বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে খুব স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা এখনো আমাদের নেই। তবে একটা জিনিস স্পষ্ট করে বলতে পারি, এভাবে সব কিছু চলতে পারে না। বর্তমান প্রশাসন পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে।’

সেই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে কি রাশিয়া বিশ্বকাপ বয়কটের ঘোষণা আসতে পারে? যেমনটা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে বাতাসে? ফন অস্টফিন এই সম্ভাবনা বা শঙ্কাও নাকচ করে দেননি, ‘রাশিয়া বিশ্বকাপ বয়কট? এই মুহূর্তে আমি কোনো সম্ভাবনাই বাতিল করে দেব না। তবে তখনই কোনো উদ্যোগ কার্যকর হয় যখন সেটা সম্মিলিতভাবে করা হয়। সবাই কাঁধ মেলালেই আপনি জোরালো দাবি জানাতে পারবেন। বর্তমান বিশ্বকাপ থেকে সরে গিয়ে আলাদা একটি বৈ​শ্বিক টুর্নামেন্ট করার ভাবনাটা অবশ্যই খুবই কৌতূহল জাগানিয়া একটি ভাবনা।’

এত কিছুর পরও ব্ল্যাটার জিততে চলেছেন বলেই নিশ্চিত ছিলেন। হারার শঙ্কা থাকলে ভোট স্থগিতের দাবি সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিতেন। আসলে রাজনৈতিক ঘুঁটির চালে ওস্তাদ ব্ল্যাটার খুব হিসেব করে ছক কষে এগিয়েছেন। এশিয়া ও আফ্রিকাকে বলা হয় তাঁর ভোট ব্যাংক। এশিয়ার ৪৬ আর আফ্রিকার ৫৪ যোগ করলেই তো প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১০০ হয়ে যায়। এশিয়া-আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ভোট না দিলেও উত্তর ও মধ্য আমেরিকার (কনক্যাকাফ) ৩৫টি ভোটের একটা বড় অংশ ব্ল্যাটারের বাক্সেই যায়। ওশেনিয়ার ১১ আর লাতিন অঞ্চলের (কনমেবল) ১০টি ভোট থেকেও কিছুটা পেলে ব্ল্যাটারের সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিশ্চিত।
এসব দেশকে খুশি রাখতে ব্ল্যাটার নিয়মিতই কিছু বরাদ্দ করে থাকেন। বাংলাদেশও যেমন এতে উপকৃত হয়েছে নানাভাবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ফুটবলের ভবিষ্যৎ​ প্রশ্নে ব্ল্যাটারের নেতৃত্ব পরিবর্তন হওয়া জরুরি ছিল কি না, সেটিও ভাবার। আবার এই প্রশ্নটাও উঠছে, ফুটবলের মূল অর্থের জোগান ইউরোপ থেকে হয় বলেই কি ফিফাতে উয়েফা মোড়ল হয়ে উঠতে চাইছে, চাইছে বাড়তি ক্ষমতা? আইসিসি যেটা হয়ে উঠেছে ভারত!



মন্তব্য চালু নেই