ফারুককে ‘এক্সিট ডোর’ দেখিয়ে দিলেন পাপন

দ্বি-স্তরবিশিষ্ট নির্বাচক কমিটি করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তা মনঃপূত হয়নি ফারুক আহমেদের। তাই তো সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছে শোনার পর সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে বসেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলে দিলেন, ‘আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি এই সিদ্ধান্তের। প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে পদত্যাগ করছি আমি।’

স্বাধীনতা হীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। ফারুক আহমেদও তাই ‘স্বাধীনতাহীন প্রধান নির্বাচক’ হতে রাজি নন। তাই তো পদত্যাগ করছেন তিনি। হতে পারে এই সিদ্ধান্তে ফারুক অতি আবেগের পরিচয় দিয়ে ফেলেছেন, হতে পারে বোর্ডের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে শৃঙ্খলাও ভেঙেছেন তিনি, হতে পারে তার এই সিদ্ধান্তে যুক্তিও আছে। তবে এসব আমলে নিচ্ছে না বিসিবি। ‘ফারুক যদি চান তাহলে চলে যেতে পারেন’ এই জাতীয় মন্তব্যও তাই প্রকাশ্যেই করে বসলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন।

ফারুকের সিদ্ধান্তটি এসেছিল রবিবার (১৯ জুন) বিসিবির বোর্ড সভাশেষে পাপন দ্বি-স্তর বিশিষ্ট নির্বাচক কমিটি চূড়ান্ত করার ঘোষণা দেওয়ার পর। এর প্রেক্ষিতে সোমবার প্রতিক্রিয়া এল বিসিবি প্রধানের কাছ থেকে।

সোমবার (২০ জুন) ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) ক্রিকেটে আবাহনী-রূপগঞ্জ ম্যাচ দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন নাজমুল হাসান পাপান। ম্যাচ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে ফারুকের পদত্যাগ সম্পর্কে পাপন বলেছেন, ‘ফারুক এখনো বোর্ডকে কিছু জানায়নি। আমার সঙ্গেও কোনো আলোচনা করেনি। তবে এমন পদ্ধতিতে যদি তার সমস্যা মনে হয়, সে পদত্যাগ করতে পারে। তাকে আটকানোর প্রশ্নই আসে না। কোনো প্রকার আলোচনা করার ইচ্ছে আমাদের নেই।’

জাতীয় দলের জন্য দ্বি-স্তরবিশিষ্ট নির্বাচক কমিটিতে ফারুকের আপত্তিটা কোথায়? এর উত্তরে ফারুক সাংবাদিকদের যা বলেছেন তা হলো―‘এই প্রক্রিয়ায় আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। নির্বাচকদের কাজ স্বাধীন হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে (দ্বি-স্তর কমিটিতে) সেই স্বাধীনতা থাকবে না। আমরা দল নির্বাচন করব এরপর সেই দল নিয়ে ফের আরেকটি কমিটির কাছে ছুটতে হবে, এ ক্ষেত্রে আমাদের বিচার-বিবেচনার মূল্যায়নটা থাকছে কোথায়?’

ফারুক আরও জানিয়েছিলেন, কেবল নিজের সম্মানের জন্য নয়, বরং একটি প্রচলিত, প্রমাণিত ও সফল সিস্টেম বদলে ফেলার প্রতিবাদ হিসেবেই পদত্যাগ করছেন তিনি। ফারুক এও মনে করেন যে, বিসিবির এই দ্বি-স্তরবিশিষ্ট নির্বাচক কমিটির প্রক্রিয়া বেশি দিন স্থায়ী হবে না। ফের আগের নিয়মেই হয়তো ফিরতে হবে বিসিবিকে। তত দিনে অবশ্য দেশের ক্রিকেট অনেকটা পিছিয়ে পড়তে পারে দল নির্বাচনের এই নতুন প্রক্রিয়ার কারণে।

তবে ফারুকের এসব বক্তব্য আমল পাচ্ছে না পাপন কিংবা বিসিবির কাছে। উল্টো দ্বি-স্তরবিশিষ্ট নির্বাচক কমিটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পাপন বলেছেন, ‘দল নির্বাচনের পর ক্রিকেট পরিচালনার স্বাক্ষর ছাড়া কখনো বের হওয়া সম্ভব নয়। এখনো ওই প্রক্রিয়াটাই আছে। শুধু নামকরণ বদলে গেছে। যে পদ্ধতিতে আমরা রেজাল্ট পেয়েছি, সেটা পরিবর্তন করতে যাব কেন? যা হয়ে আসছে আমি তাই করছি। এটা কোনোমতেই নতুন কিছু না। অবশ্য একটি পার্থক্য হতে পারে। আগে পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান ছিল দূর্জয়, এখন আকরাম। কিন্তু সেটাতো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কারণ আগে আকরামও ছিল।’

দ্বি-স্তরবিশিষ্ট এই কমিটির যৌক্তিকতা বোঝাতে গিয়ে বিসিবি প্রধান তুলে এনেছেন মুস্তাফিজুর রহমানকে আবিষ্কারের বিষয়টিও। তিনি বলেছেন, ‘মুস্তাফিজ কীভাবে দলে এসেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে মুস্তাফিজকে তো ওরা (নির্বাচকরা) খেলতেই দেবে না। আমি যা বলছি এগুলো এখন বলতে চাই না! আমি শুধু এটাই বলব, যা করে এত দিন রেজাল্ট এসেছে, আমরা সে পথেই আছি। যা আমাদের ভালো ফল দিচ্ছে সেটাতো আমরা নষ্ট করতে পারি না।’

পরিশেষে পাপন বলেছেন, ‘ফারুক আমার অত্যন্ত প্রিয়। তার অতীত দেখে তাকে সম্মান দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রাথমিক আলাপে প্রধান নির্বাচক পদটাই ছিল না। তাকে সম্মান দিতেই এটা রাখা হয়েছে। এরপরও যদি ও মনে করে এখানে তার সমস্যা হচ্ছে, সে পদত্যাগ করতে পারে। এখানে ঝামেলা করার কোনো দরকার নেই।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘পদত্যাগ (ফারুক) করলে বোর্ড আলোচনায় আসবে। তবে আলোচনা করার প্রশ্নই ওঠে না। হিথ স্ট্রিকের (বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী বোলিং কোচ) চেয়ে কোনো ভালো পেস বোলিং কোচ কি আমাদের এর আগে এসেছে। আসেনি। সে চলে গেল। এরপরও তার সঙ্গে আমরা আলোচনা করিনি। এসবের কোনো সুযোগই নেই এখানে। কিছু লুকোচুরির সুযোগও নেই। প্রত্যেকটা জিনিস আমি প্রমাণসহ আপনাদের দেখাতে বাধ্য হবো।’

প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে সরে যেতে এখনো আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র জমা দেননি ফারুক আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আগামী মাসে বিসিবির কাছে সেই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা তার। তবে সোমবার বিসিবি-প্রধান পাপন যে বক্তব্য দিয়েছেন এরপর নির্বাচক প্যানেলে ফারুকের যুক্ত থাকার আর কোনো সুযোগই থাকছে না বলেই প্রতীয়মান। পদত্যাগপত্র আসার আগেই পাপন যেন ফারুককে ‘এক্সিট ডোর’ বা প্রস্থানের দরজাটা দেখিয়ে দিলেন!দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই