ফরিদপুরে শ্রীঅঙ্গন গণহত্যা দিবস পালিত

ফরিদপুরের শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনের আশ্রমে ১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিল ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জঘন্যতম নারকীয় গণহত্যা। কীর্তনরত অবস্থায় ৮জন গৃহত্যাগী সাধুকে পাকিস্তানি সেনারা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল সেদিন। আর তাদের বিদ্রেহী আতœার শান্তি কামনায় প্রতিবছর এই দিনকে স্মরন করে ফরিদপুরবাসী পরম শ্রদ্ধাভরে।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ কিছু সংগঠন আয়োজন করে সেই সৃতি বিজরিত চালতা তলায় পুস্পমাল্য অর্পন ও আলোচনা সভার। বক্তব্য রাখেন আশ্রমে থাকা নয়জনের মধ্যে সেদিন অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া হরিপ্রিয় ব্রহ্মচারী। হরিপ্রিয় ব্রহ্মচারী তার বক্তব্য জানান, সেদিন সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে নিত্যদিনের মতো নামকীর্তন করছিলাম আমরা নয়জন সাধু। হঠাৎ হামলা, কামান আর গোলাগুলির শব্দ পেলাম। তারপরও আমরা কীর্তন বন্ধ করিনি, পাকিস্তানী সেনারা ঢুকলো আমাদের কীর্তনের আশ্রমঘরে। তাদের সঙ্গে কয়েকজন বাঙালি বিহারি ছিলো। আমি ঘরের খামের আড়ালে লুকিয়ে রইলাম।

সেখান থেকে পেছনমুখো হয়ে পা টিপে টিপে কয়েক গজ পিছিয়ে লুকিয়ে পড়লাম ফুলগাছের জঙ্গলের মধ্যে। চোখের সামনে দেখলাম, লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে মিলিটারিরা খুন করলো আটজন সাধুকে। প্রাণের ভয়ে সেদিন চেচামেচি করিনি, যদি শব্দ শুনে মেরে ফেলে। তারপর ওরা মৃতদেহগুলো টেনে নিয়ে ফেললো চালতা তলায় (এখন যেখানে সাধুদের সমাধি)। এরপর ওরা আশ্রম ঘরে লুট পাট করে চলে গেলো। আলোচনা সভার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও আগরতলা মামলার আসামি নূর মোহম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল, সেই সময়ে আশ্রমে থাকা নয়জনের মধ্যে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া সেবায়েত হরিপ্রিয় ব্রহ্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ব্যাপারী, ডঃ বিপ্লব রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা বৈদ্যনাথ সূত্রধর, মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের পিকে সরকারসহ অনেকে। শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনের সম্পাদক শ্রীমৎ বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারী বলেন, আমরা শ্রী অঙ্গনবাসী নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে পালিত করছি নারকীয় সেই গণহত্যার ৪৪তম বার্ষিকী। তাদের বিদ্রেহী আত্তœার শান্তি প্রার্থনার লক্ষ্যে সকল আয়োজন চলছে শ্রী অঙ্গনে। উল্লেখ্য ফরিদপুর শহরের শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনে ১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা কীর্তনরত অবস্থায় ৮জন সন্ন্যাসীকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে সেই শহীদেরা হচ্ছেন, অন্ধকানাই ব্রহ্মচারী, গৌঢ়বন্ধু ব্রহ্মচারী, নিদানবন্ধু ব্রহ্মচারী, বন্ধুদাস ব্রহ্মচারী, ক্ষিতিবন্ধু ব্রহ্মচারী, চিরবন্ধু ব্রহ্মচারী, রবিবন্ধু ব্রম্মচারী ও কীর্তনব্রত ব্রহ্মচারী, । মুক্তিযুদ্ধের পর শ্রী অঙ্গন মন্দিরের চালতে তলার নিচে ৮ শহীদ সাধুর স্মরণে ৮টি স্মৃতিস্তম্ভ/ শহীদবেদী নির্মাণ করা হয়েছে তাদের স্মরনে।



মন্তব্য চালু নেই