ফরিদপুরে ফুঁসে উঠছে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ কসাই খ্যাত রাজাকারের কবরের নাম ফলকে শহীদ ব্যবহারে

ফরিদপুরে ফুঁসে উঠছে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ মিরপুরের কসাইখ্যাত কুখ্যাত রাজাকার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্যার কবরের নাম ফলকে শহীদ পদবী ব্যবহার করা নিয়ে। ১৯৭১ এর মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া মিরপুরের কসাইখ্যাত কুখ্যাত রাজাকার জঘর্ন্য অপরাধী বাঙ্গালী জাতির কলঙ্ক জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্যার কবরের নাম ফলকে শহীদ পদবী ব্যবহার করা হয়েছে।

শুধু কবরে নয় তার বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের (আরজখার তিন রাস্তার মোড়ে) বাড়ির পথের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে একটি সাইনবোর্ডে সেখানেও লেখা শহীদ আব্দুল কাদের মোল্যার কবর এই দিকে। এর আগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পরে প্রথমবারের মতো দেশের কোনো যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয় তার ফাসিঁ কার্যকরের মাধ্যমে।

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে ফাঁসি কার্যকর হওয়া কাদের মোল্লার। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর। ওইদিন ৬টির মধ্যে সব ক’টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগই প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় এবং ১২ ডিসেম্বর রাতে কার্যকর হয় কাদের মোল্লার ফাঁসি। ৪২ বছর পূর্বে দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধী এসব কুলাঙ্গারদের জন্য যে কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছিল সেই কলঙ্ক মচন হয় ফাসিঁর দেওয়ার মাধ্যমে।

৩০ লক্ষ জীবনের বিনিময় আর সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষ মা বোনের আত্মায় সেদিন একটু শান্তি পেয়েছিল। কিন্তু এরকম একজন কুখ্যাত রাজাকারের কবরের নাম ফলকে শহীদ পদবী ব্যবহার করায় চরম ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মানুষ। অবিলম্বে ওই নাম ফলক ভেঙ্গে ফেলার দাবি জানান তারা। ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহ নেওয়াজ বলেন, কাদের মোল্যার মত জর্ঘন্য যুদ্ধাপরাধী, খুনির কবরে এমন নাম ফলক কোন ভাবেই লিখতে পারে না কেউ। দেশের একটি সুষ্ঠ ও সচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ায় অপরাধী প্রমানিত হওয়ায় আইন অনুযায়ী এই রাজাকারের শাস্তি হয়েছে। যারা কাদের মোল্যার কবরে শহীদ নাম ফলক ব্যবহার করেছে তারাও রাষ্ট্রদ্রোহী। তাদেরও বিচার হতে হবে বাংলার মাটিতে।

তিনি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, সেদিন নৃশংস ভাবে কুত্তার মত মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। আজ এই স্বাধীন বাংলাদেশে একজন রাজাকারের কবরে নাম ফলকে শহীদ লেখা হয়েছে এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই প্রশাসনের কাছে দাবি যতদ্রুত সম্ভব এই নাম ফলক ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তা না হলে মুক্তিযোদ্ধারা গিয়ে নাম ফলক ভেঙ্গে দিবে।

সদরপুর উপজেলা কমান্ডার আব্দুল গাফফার জানান, এটা যে কতবড় দুঃখ জনক ব্যাপার তা বলে শেষ করা যাবে না একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। তিনি কি ছিলেন যে শহীদ লিখবেন তার কবরে এটা চরম নিন্দার বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। জেলা মুক্তিযোদ্ধা নেতা মোঃ শামসুদ্দিন মোল্লা জানান, মিরপুরের কসাই কাদের খ্যাত কাদের মোল্লার কবরে যে নামফলক ব্যবহার করা হয়েছে তাহা যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলা না হয় তাহলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এর ব্যবস্থা নেব।

মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর উদ্দিন বলেন, এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না একজন রাজাকারের কবরে শহীদ লেখা থাকবে এই স্বাধীন বাংলাদেশে। এটা জামাতের নীল নকশা বাস্তবায়ন তাছাড়া অন্য কিছু নই। তিনি তো দেশ বা ধর্মের জন্য শহীদ হয়ে মারা যাননি যে তার কবরে শহীদ লেখা থাকবে। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখ জনক ব্যাপার। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান ফরিদ বলেন, দেশ বা ধর্মের জন্য মারা যাননি কাদের মোল্লা। একাত্তরের খুনের দায়ে ফাঁসি হয়েছে তার। অতএব দেশের তথা আর্ন্তজাতিক অপরাধ আইনে ফাঁসি হওয়া একজন আসামির কবরের নামফলকে ‘শহীদ’ লেখা যায় না কোন ভাবেই।

ফরিদপুরের একজন মাওলানা মো. সাইফুল্লাহ বলেন, শুধুমাত্র ইসলাম রক্ষার্থে যারা কাফের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয়ে জীবন দিবেন তারাই প্রকৃত শহীদ। দেশে চলমান আইনে অপরাধী কোন ব্যক্তির ফাঁসি হলে সে শহীদ নন।

গনজাগরণ মঞ্চের কর্মী অনিমেষ রায় বলেন, কাদের মোল্যার নাম ফলকে যে শহীদ কথাটি লেখা হয়েছে সেটা অত্যন্ত দুঃখ জনক। এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। প্রশাসনের প্রতি দাবি রাজাকার আব্দুল কাদের মোল্যার কবর ও তার বাড়ি যাওয়ার পথে যে নামের পূর্বে শহীদ পদবী ব্যবহার করা হয়েছে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।

আব্দুল কাদের মোল্যার ছোট ভাই ও ভাষানচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুদ্দিন মোল্যা বলেন, কবরে যে নাম ফলক তা জামায়াতের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে। সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোখসানা রহমান বলেন, এটা তারা লিখতে পারেন না। যতো দ্রুত সম্ভব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই