ফরিদপুরে তাপদহে জনজীবন দুর্বিসহ, শিশু ও বৃদ্ধরা মৃত্যু ঝুকিতে
প্রকৃতির বেখেয়ালী মনোভাবের কারনে হঠাৎ করে জ্যৈষ্ঠের এই প্রচন্ড তাবদাহে পুড়ছে ফরিদপুরসহ গোটা পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রকৃতি। ভ্যাপসা গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিছু উপজেলায় ভয়াবহ বিদ্যুতের লোডশেডিং যার কারনে ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। একটু স্বত্ত্বি পেতে একপশলা বৃষ্টির আশায় গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর জেলার বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করা হয়েছে। তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হওয়া খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা, সেই সাথে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন মৃত্যু ঝুকিতে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাতাসে জলীয়বাস্পের পরিমাণ বেশি থাকায় অনুভূত তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। সেই সাথে কিছু কিছু জায়গায় ঘণ ঘণ লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগের মাত্রা পৌঁছেছে চরমে।
বিশেষ করে ফরিদপুর পল্লীবিদুৎ সমিতির নগরকান্দা জোনাল অফিসের আওতাধীন নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। কিছুদিন ধরে গ্রীস্মের প্রচন্ড খরতাপে পুড়ছে নগরকান্দা-সালথাবাসী। নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা সদরসহ ১৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। নগরকান্দা-সালথা বাসীকে প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় যন্ত্রনা।
বেশ কিছু দিন ধরে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ ঘন্টাই বিদুৎ পাচ্ছে না নগরকান্দা-সালথার পল্লীবিদুৎয়ের গ্রাহকরা। প্রতিদিন সকাল ৬ টায় বিদুৎ চলে যাওয়া আর দুপুর ১২ টায় ফিরে আসা, আবার সন্ধ্যায় চলে যাওয়া আর রাত ১০ টায় ফিরে এসে ঘন্টা খানেক পরে আবার চলে যাওয়া যেন রুটিনে পরিনত হয়েছে। কোন কোন দিন সারা রাতে আর আসে ও না। এই অসহনীয় লোডশেডিংয়ের ফলে এইচ এস সী ও ডিগ্রী পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘিত হচ্ছে। বিদুৎ নির্ভর ব্যবসা বানিজ্য বিশেষ করে রাইসমিল, আইসক্রীম ফ্যাক্টরী, ওয়েল্ডিং মেশিন. ফটোষ্ট্যাট. কম্পিউটার কম্পোজ-ফ্যাক্স মেশিন ইত্যাদি ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের লোডশেডিংয়ের ফলে প্রতিনয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের ফলে বিদুৎয়ের যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা।
ফরিদপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠের প্রথম থেকেই সূর্যের প্রখরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথার ওপর গণগণে সূর্য, ঘরের বাইরে বেরুলেই শরীর যেন পুড়ে যায়। তবে বাতাসে জলীয়বাস্প বেশি থাকার কারণে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। শহরে গরমের এই তীব্রতাকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে ইট-পাথরের বাড়ি-ঘর আর ইঞ্জিনচালিত যানবাহন।
একইসাথে লোডশেডিংয়ের কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। জেলায় ঝুকির মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে বেশী শিশু ও বয়স্করা। বৃষ্টি হওয়ার পর তাপমাত্রা কমার আশংকা করে ফরিদপুর আবহাওয়া অফিসের অবজারভার মোসাম্মদ জাহানারা জানান, মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলে কিছুটা তাপমাত্রা কমবে। তিনি আরও জানান, ফরিদপুরে গত বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিলো ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি আশার বানী শুনিয়েছেন এই যে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কারন বায়ুর চাপটা মাইনাস পর্যায় রয়েছে যে কারনে আমরা আশাবাদী হয়ত বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
জেলা সির্ভিল সার্জন অসিত কুমার দাস জানান, গরমের এই দিনগুলোতে সুস্থ্য থাকার জন্য বেশি করে পানি পানের পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রচন্ড গরমে সবচেয়ে প্রধান কাজ হচ্ছে বেশি করে নিরাপদ পানি পান করা। লবনশূন্যতা পূরণের জন্য খাবার স্যালাইন খাওয়ার পাশাপাশি তিনি বেশি তেল, ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আরও বলেন, যেকোন খাবারের সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সবাইকে তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি গ্রহণ করতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই