ফরমালিনের ব্যবহার কমেছে, তবে থামেনি
আইনের কঠোরতা ও জেল জরিমানার পরও খাদ্যে ভেজাল ও ফরমালিনের ব্যবহার থেমে নেই। তবে আগের তুলনায় এর ব্যবহার কমেছে ৮০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের প্রচার-প্রচারণা ও অভিযান এবং সংসদে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ বিল পাশ হওয়ার পর থেকে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘গত একদশক যাবৎ দেশে ভয়াবহ এক আতঙ্কের নামে পরিণত হয় ফলমালিন। মূলত পচনশীল খাদ্যের পচন রোধে ফলমালিনের ব্যবহার হয়ে থাকে। মাচ-মাংস, শাক-সবজি, ফল-মুল, দুধ সব কিছুতেই দেদারছে ফরমালিন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তেমন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না’ বলছিলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম।
কীভাবে খাদ্যে ভেজাল কমে আসছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেরপর এক টানা ভেজালবিরোধী অভিযান এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। সেই সঙ্গে সরকারের কঠোরতা। বিশেষ করে ২০১৫ সালের শুরুতে সংসদে খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের ব্যবহার রোধে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ বিল পাশ হওয়ার পর থেকে এর সুফল পাওয়ার মাত্রা বেড়েছে। সেই সাথে মানুষের মাঝে সচেতনা সৃষ্টিতে মিডিয়ার প্রচার-প্রচারণা বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন তিনি।
এছাড়া যেসব এলাকায় ফল-ফলাদি, সবজি উৎপাদন হয় সেসব এলাকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমেও কঠোর নজরদারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফলমালিনের ব্যবহার কমার একটি বড় উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বিগত দুই বছরে ফরমালিন আমদানির পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ কর্মকর্তার বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর।
তিনি বলেন, খাদ্যে ভেজালের পরিমাণ আগের তুলনায় ৭০-৮০ শতাংশ কমেছে। ফরমালিনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। আমাদের বাজার মনিটরিংকালে আগে যেখানে প্রতিদিন ৮-১০ টি অভিযোগ প্রমাণিত হতো, জেল-জরিমানা হতো। এখন সেখানে ২-৩ টির বেশি হয় না।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কোনো অভিযানে ফরমালিন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নিয়মিত বাজার মনিটরিং, জনসাধারণের পক্ষ থেকে অভিযোগ এবং সচেতনা বৃদ্ধিকে সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি।
২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সংসদে পাশ হওয়া আইন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুনির্দিষ্ট বিধান রেখে পাশ হওয়া এই বিলে লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার বা দখলে রাখতে পারবে না। বিলে লাইসেন্স, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, হিসাব বহি, রেজিস্টার সংরক্ষণ ও মাসিক প্রতিবেদন দাখিল, তদন্ত, পরিদর্শন, ফরমালিন বিক্রয়ের দোকান সাময়িকভাবে বন্ধসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়েছে।
বিলে প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠনের বিধান করা হয়েছে।
এছাড়া তদন্ত, তল্লাশি, আটক, বাজেয়াপ্তকরণ, পরোয়ানা জারির ক্ষমতা, পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, তল্লাশির পদ্ধতি, আটক, আটক ব্যক্তি ও মালামাল বিষয়ে মামলা দায়ের এবং গ্রেফতারের ক্ষমতাসহ অন্যান্য বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়েছে।
এছাড়া, বিলের বিধান লংঘনের দায়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও দণ্ড প্রদানের বিধান করা হয়েছে। এতে লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন বা মজুদের দায়ে অনধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এর অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ২০ লাখ ও সবনিম্ন ৫ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে।
বিলে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ লাইসেন্স ছাড়া বিক্রয় বা ব্যবহার, পরিবহন বা দখলে রাখা, উৎপাদনের যন্ত্রপাতি, গৃহ বা যানবাহন ব্যবহার, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অপরাধ পুনঃসংঘটন, অর্থ দণ্ড রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগার স্থাপন, পরীক্ষক নিয়োগ ও রিপোর্ট প্রদান, অপরাধের বিচার, বিধান প্রণয়নের ক্ষমতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়।
খাদ্যে ভেজাল বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ের চিত্র বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম বলেস, দুই বছর আগে অভিযানে মানেই যেন খাদ্যে ভেজাল, ফরমালিন ইত্যাদি ছিল প্রধান বিষয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ চিত্র ভিন্ন। গত ফেব্রুয়ারি মাসেও খাদ্যে ভেজাল নিয়ে একাধিক অভিযানে চালানো হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু কোথাও ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।-পরিবর্তন
মন্তব্য চালু নেই