বেরোবি সংকট :

প্রয়োজনে তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার ইঙ্গিত

আগামী শনিবারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোর তালা খোলা না হলে রবিবার প্রয়োজনে তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার ইঙ্গিত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার সন্ধ্যায় এক মুঠোফোনে এমনটি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টর মোঃ শাহীনুর রহমান।

টানা ৪৬ দিনের মত একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা থাকায় ক্লাস নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সচল রাখতে আগামী রোববার তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন এই সহকারি প্রক্টর।

এর আগে গত সোমবার শিক্ষার্থীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সহ সকল শিক্ষা কার্যক্রম সচল করার দাবিতে উপাচার্য এবং উপাচার্যের অপসারনে আন্দোলনকারি শিক্ষক সমিতিকে পৃথকভাবে স্মারকলিপি দেয়।তারা গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় সচলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ইবনে সাবিত আরিফ নামে এক শিক্ষার্থী আগামী ২২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সম্ভাবনা নিয়ে গতকাল তার ফেসবুক পাতার টাইম লাইনে Breaking news, may be 22/03/2015(Sunday) our campus will be opened. So clean your books & ready yourself to comeback BRUR নামে একটি পোস্ট দেয়।এ বিষয়ে সম্ভাবনা নিয়ে পোস্ট দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সহকারি প্রক্টরের বরাত দেন।

তবে এ বিষয়ে উপাচার্য এবং শিক্ষক সমিতিকে স্মারকলিপি প্রদানকারি ঐ বিভাগের আরিফকে জিজ্ঞেস করলে গতকাল এক মুঠোফোনে জানান ,আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী, কারো পক্ষে কাজ করছি না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা চাই,বিশ্ববিদ্যালয় সচল দেখতে চাই। আমরা আশা করি অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে।ঐ শিক্ষার্থী আরো বলেন,আগামী শনিবারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে না দিলে রবিবার সে ব্যাপারে প্রশাসন কর্তৃক ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা জানা গেছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক এবং সহকারি প্রক্টর বুধবার জানান, যদি আগামী শনিবারের মধ্যে একাডেমিক ভবনগুলো তালা খুলে না দেওয়া হয় তবে প্রশাসনিকভাবেই তালা ভেঙে সেগুলো খুলে দেওয়া হবে।
তবে উপাচাযের্র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি ।

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির সুষ্ঠু কোনো সমাধান হয়েছে কি না জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির ফরিদুল ইসলাম বলেন,‘এ ব্যাপারে কোনো সমাধান কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি’।

আজ বৃহস্পতিবার এক মুঠোফোনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র বর্ম্মণ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কারো সাথে কোনো আলোচনা বা সমাধানের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন।তিনি বিষয়টিকে গুজব বলে আখ্যায়িত করেছেন।

২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশের পক্ষ থেকে ২০১৪-১৫ ইং শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ,হল,ক্যাফেটেরিয়া এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এই ৪ দফা দাবি আদায়ে একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা লাগিয়ে অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় যা আজো চলছে।

প্রায় ৫ মাস ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিভিন্ন দাবি আদায় এবং তা পূরণ না হওয়ায় সবশেষে উপাচার্যের অপসারণে আন্দোলনে মাঠে নামে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের শিক্ষক সমিতি ,সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ এবং ২২ মাসের বেতন না পাওয়া ১৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি।

চলমান আন্দোলন শুরুর আগে প্রভাষক থেকে সহকারি অধ্যাপকে উন্নীত ২৭ জন শিক্ষকের অর্জিত সময় থেকে পদমর্যাদা ও প্রাপ্য সুবিধাদির দাবিতে গত ২৭ অক্টোবর শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।এরপর ১ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁকে বয়কট ঘোষণা করে শিক্ষক সমিতি। এরপরও দাবি আদায়ে সমর্থ না হলে ৯ ও ১১ নভেম্বর একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বের ২৭ পদ থেকে ১৪ শিক্ষক তাঁদের পদত্যাগ পত্র জমা দেন।১৬ নভেম্বর শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা-কর্মচারি সকলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুম, ল্যাব, লাইব্রেরির বই সংকট অবিলম্বে নিরসন এবং

স্নাতকোত্তর শ্রেণির সিলেবাস প্রণয়ন, বেতন-ভাতা বঞ্চিত কর্মকর্তা পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন, যোগ্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ,কর্মচারীদের বেতন দ্রুত প্রদানের ব্যবস্থা সহ ১০ দফা দাবি নিয়ে উপাচার্যের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসকল দাবি আদায়ে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়।এরপর গত নভেম্বর মাসে প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রথমে প্রতীকী অনশন এরপর প্রতিবাদ-সমাবেশ ও অবস্থান গ্রহণ করেন শিক্ষক সমিতি।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে উপাচার্যের অপসারণ দাবি করে প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা লাগানো হয় যা প্রায় ৪ মাস ধরে অচল রয়েছে।

গত ২ নভেম্বর থেকে চলমান আন্দোলনের এক পর্যায়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ ও উত্তর গেইটে চলে প্রতীকী অনশন,অবস্থান সমাবেশের মত অন্যান্য অহিংস কর্মসূচী।গত ডিসেম্বরে উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগানো হয়।

এরপরও দাবি আদায় না হলে ২ ফেব্রুয়ারি ,হল,ক্যাফেটেরিয়া সহ ৪ দফা দাবিতে ছাত্র ধর্মঘট এবং ৪ ফেব্রুয়ারি একই দাবিতে পুলিশফাঁড়ির সামনে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহজাহানের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নেয়।সেই রাতে বহিরাগত সন্ত্রাসিরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়।এ সময় ডরমেটরি থেকে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক তরিকুল ইসলাম এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান আহত শিক্ষার্থীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এল সন্ত্রাসিরা তাঁদের উপরও সসস্ত্র হামলা চালায়। এতে ২ শিক্ষক সহ ১৯ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

পরে এর প্রতিবাদ জানিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আমরন অনশনে বসলে রংপুর সিটি মেয়র শরফুদ্দিন আহমদ ঝন্টু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে গত ৫ মার্চ ১০ দিনের মধ্যে নতুন উপাচার্যের আশ্বাস দিলে অনশনকারি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারি তাঁদের অনশন ভাঙেন তবে ১৫ দিনের মত চলছে গণ অবস্থান।

চলমান সংকটে সেশনজোটে জর্জরিত হয়েছে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী।আর শংকিত হয়ে পড়েছে ৯০ হাজার ৪০২ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। তবে অচিরেই এ সমস্যার সমাধান জরুরী।



মন্তব্য চালু নেই