প্রোটন কারখানা: ‘চমক’ দেখাতে চায় পিএইচপি
মালয়েশীয় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি প্রোটনের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ হলেও শিগগিরই বাংলাদেশকে তাক লাগিয়ে দিতে চায় পিএইচপি।
ট্টগ্রামভিত্তিক এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আকতার পারভেজ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মালয়শীয় গাড়ি নির্মাতা প্রোটনের সঙ্গে আমাদের যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে কোনো তথ্য আমরা এখনই প্রকাশ করতে চাই না। তবে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবিষয়ে আমরা আপনাদের জানাব। “ওই অনুষ্ঠানে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও আমন্ত্রণ জানাব, যেখানে ‘সারপ্রাইজ’ থাকবে।” সম্প্রতি প্রোটনের দুই সদস্যের একটি দল পিএইচপি পরিদর্শন করে স্থানীয় বাজার ও রপ্তানির জন্য বাংলাদেশে প্রোটন ব্রান্ডের গাড়ি তৈরির কারখানা স্থাপনের বিষয়ে ‘সবুজ সঙ্কেত’ দেয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া সফরে তার সঙ্গে বৈঠকে প্রোটনের কর্ণধার মাহথির মোহাম্মদ বাংলাদেশে কারখানা বসিয়ে তার কোম্পানির গাড়ি তৈরির আগ্রহের কথা জানান। বাংলাদেশের গাড়ি নির্মাণ শিল্পে বর্তমানে অটোরিকশা ও হোন্ডা থেকে ইঞ্জিন এনে স্থানীয় নকশায় তিন চাকার গাড়ি মিশুক তৈরি করা হয়। এছাড়া দেশে বড় একাধিক কারখানা আছে, যেখানে মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস, হিনো বাস, টাটা বাস ও মোটর সাইকেল সংযোজন করা হয়। পারভেজ চৌধুরী বলেন, কমপ্লিট নক ডাউন বা সিকেডি ধরনের এই কারখানা চালু করতে এক হাজার কোটি টাকার কম ব্যয় হবে। এধরনের কারখানায় উৎস দেশ থেকে আমদানি করা প্রধান পার্টস, অংশ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে গাড়ি তৈরি করা হয়। দেখা গেছে, পিএইচপি ও প্রোটন যে ধরনের সিকেডি কারখানা স্থাপনের কথা ভাবছে, তা বাংলাদেশে চালু করতে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সম্প্রতি নাইজেরীয় অটোমোবাইল পরিবেশক কোশারিজ মোটরস নাইজেরিয়াতে এরকম একটি সংযোজন কারখানা স্থাপন শুরু করেছে, যাতে ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার খরচ হবে। ১৪ একর জায়গাজুড়ে এই কারখানায় বাস, ট্রাক ও কারসহ বছরে ২৬ হাজার গাড়ি তৈরি হবে। মোটরগাড়ি নির্মাতাদের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএমভিএমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি হাজার মানুষের জন্য চারটি গাড়ি, যার সংখ্যা ভারতে ১৬টি, পাকিস্তানে ১৪টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৭৯০টি। বিশ্বে গড়ে এই সংখ্যা ১৮০টি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের মার্চ নাগাদ বাংলাদেশে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ২০ লাখ, যার মধ্যে অর্ধেক মোটর সাইকেল। ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে মিতসুবিশি মোটরসের বড় ধরনের ব্যাজ নির্মাতা ছিল প্রোটন। এর পর থেকে ওই কোম্পানি স্থানীয়ভাবে নকশা করা গাড়ি তৈরি শুরু করে এবং বর্তমানে অন্তত ২৬টি দেশে এর কারখানা রয়েছে। এর আগে প্রোটনের মালিকানা ছিল মালয়েশীয় সরকারের বিনিয়োগ সংস্থা খাজানা ন্যাশনালের হাতে। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ১২০ কোটি মালয়েশীয় রিঙ্গিতের বিনিময়ে এটা কিনে নেয় ডিআরবি-হাইকম। পিএইচপি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ১৯৬৭ সালে ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে এক আত্মীয়ের সঙ্গে আর এম করপোরেশন লিমিটেড গঠন করেন। ১৯৯৯ সালে এটা ভাগ হয়ে গেলে মিজান পিএইচপি গ্রুপ গঠন করেন। দেশের শিল্প উদ্যোক্তারাও বাংলাদেশে প্রোটনের কারখানা স্থাপনের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদারিকারক ও পরিবেশকদের সামিতি বারভিডার সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, “আমার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি কখন দেশে তৈরি গাড়ি সড়কে দেখা যাবে এবং রপ্তানি করা হবে।”
মন্তব্য চালু নেই