প্রস্রাবের রঙ আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কী গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে জানেন কি?

চিকিৎসা বিজ্ঞানের শুরুর সময় থেকে মানুষের মূত্র রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রস্রাবের রঙ, ঘনত্ব ও গন্ধ আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করে। প্রস্রাব হচ্ছে শরীরের তরল বর্জ্য যা প্রধানত পানি, লবণ এবং ইউরিয়া ও ইউরিক এসিডের মত রাসায়নিক উপাদান নিয়ে গঠিত। আপনার কিডনি এটি তৈরি করে রক্ত থেকে বিষাক্ত ও খারাপ উপাদান ফিল্টার করার মাধ্যমে।

আপনার শরীরের বিভিন্ন জিনিস যেমন- ঔষধ, খাদ্য এবং অসুস্থতার জন্য প্রস্রাব প্রভাবিত হতে পারে। প্রস্রাবের বর্ণ সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। কখনো এটি স্বচ্ছ থাকে আবার কখনো হলুদ বা পীতাভ রঙ এর হয়। বেশিরভাগ মানুষই প্রস্রাবের বর্ণের দিকে খেয়াল করেনা। আপনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পারার জন্য এটি একটি সুযোগ যে প্রতিবার আপনি আপনার প্রস্রাবের বর্ণ দেখে নিতে পারেন। আপনার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা এবং মৌলিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভালো নির্দেশক হচ্ছে ইউরিন।

প্রস্রাবের স্বাভাবিক রঙ হচ্ছে হলুদ। এর কারণ ইউরোক্রোম নামক হলুদ রঞ্জকের উপস্থিতি যা তৈরি হয় হিমোগ্লোবিনের ধ্বংসের মাধ্যমে। যদি আপনার প্রস্রাবের বর্ণ অস্বাভাবিক দেখায় তাহলে অক্ষতিকর কোন কারণেও হতে পারে তবে এটি কোন রোগের লক্ষণও হতে পারে। বিভিন্ন বর্ণের প্রস্রাবের কারণগুলো সম্পর্কে জেনে নিই আসুন।

১। স্বচ্ছ ইউরিন

এই ধরণের ইউরিন দেখে বুঝা যায় আপনি প্রচুর পানি পান করেন এবং পানি গ্রহণের পরিমাণ কিছুটা কমাতে পারেন। এই অবস্থাটি ডায়াবেটিসের ও লক্ষণ হতে পারে। এর পাশাপাশি তৃষ্ণা বৃদ্ধি পেলে বা ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

২। ফ্যাকাসে হলুদ প্রস্রাব

এটি প্রস্রাবের স্বাভাবিক বর্ণ যা নির্দেশ করে আপনি সঠিক মাত্রায় পানি পান করে।

৩। গাড় হলুদ প্রস্রাব

এটিও প্রস্রাবের স্বাভাবিক বর্ণ তবে এটি নির্দেশ করে যে আপনি ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন। তাই আপনার আরেকটু বেশি পানি পান করা উচিৎ। অধিক পরিমাণে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট যেমন- ভিটামিন বি অথবা রিবোফ্লাবিন সেবন করলেও প্রস্রাবের বর্ণ গাড় হলুদ হতে পারে।

৪। গাড় মধুর মত বা পীতাভ প্রস্রাব

বেশি গাঁড় বর্ণের ও ঘন প্রস্রাব মারাত্মক ধরণের পানিশূন্যতার সংকেত দেয়। ল্যাক্সেটিভ বা রেচক ঔষধ সেবন বা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যুক্ত সম্পূরক খাদ্য গ্রহণের ফলেও এমন হতে পারে।

৫। কমলা প্রস্রাব

অধিক পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন গ্রহণ করলে প্রস্রাবের বর্ণ এমন হতে পারে। যা গাজর ও মিষ্টিআলুতে থাকে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এই রকম প্রস্রাব হতে দেখা যায় যাদেরকে দুধ ছাড়ানোর জন্য এই ধরণের সবজি খেতে দেয়া হয়। তাই পিতা-মাতার উচিৎ সন্তানকে বিভিন্ন ধরণের খাবার দেয়া। রিফাম্পিসিন, ডক্সোরবিসিন, ফেনাজোপাইরিডিন এবং ওয়ারফেরিন জাতীয় ঔষধের কারণেও প্রস্রাব কমলা বর্ণের হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে লিভার ও পিত্তনালীর সমস্যার কারণেও প্রস্রাব কমলা বর্ণের হতে পারে।

৬। গোলাপি বা লাল ইউরিন

বিট বা খাদ্যের রঞ্জক বেশি পরিমাণে গ্রহণের ফলে প্রস্রাবের বর্ণ এমন হতে পারে। এছাড়াও কিডনি রোগ, টিউমার বা মূত্রনালির ইনফেকশনের ফলেও প্রস্রাবের বর্ণ লাল হতে পারে।

৭। নীল বা সবুজ প্রস্রাব

এটি অত্যন্ত বিরল ধরণের প্রস্রাব। আপনি কোন মারাত্মক ধরণের সমস্যায় ভুগছেন কিনা তার প্রাথমিক নির্দেশক নয় এটি। খাদ্যের রঞ্জকের কারণেও প্রস্রাবের রঙ নীল বা সবুজ শ্যাডের হতে পারে। এছাড়াও মূত্রনালিতে সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণেও প্রস্রাবের রঙ সবুজ হতে পারে। হাইপারক্যালসেমিয়া নামক বিরল জেনেটিক রোগের কারণেও নীল রঙের প্রস্রাব হতে পারে।

৮। ফেনাযুক্ত প্রস্রাব

অধিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণের ফলে মেঘের মত অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ফেনিল প্রস্রাব হতে পারে। হাই প্রোটিন ডায়েট অনুসরণ না করার পরও যদি আপনার এই রকম প্রস্রাব হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে এটি কিডনি রোগের লক্ষণ। মূত্রনালির সংক্রমণের ফলেও অস্পষ্ট ও ফেনিল প্রস্রাব হতে পারে। ইষ্ট ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন আছে যেসব নারীর তাদের এই ধরণের প্রস্রাব হতে পারে।

স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাবের তেমন তীব্র গন্ধ থাকেনা। ভিটামিন বি৬ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে গন্ধের পরিবর্তন হতে পারে। ডিহাইড্রেটেড থাকলে প্রস্রাবে অ্যামোনিয়ার গন্ধ হতে পারে। প্রস্রাবের যেকোন ধরণের পরিবর্তন দেখা গেলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।



মন্তব্য চালু নেই