প্রস্রাবের রং জানাবে শরীরের অবস্থা !

কখনো নিজের প্রস্রাবের রং খেয়াল করে দেখেছেন? খুব আলাদারকম না হলে সাধারণত এই বিষয়টি আমাদের চোখ এড়িয়েই যায়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন প্রস্রাবের রং বলে দিতে পারে শরীরের অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছুই। শারীরিক অসুবিধা, অস্বস্তি থেকে জটিল কোনো রোগের পূর্বাভাসও পাওয়া যায় প্রস্রাবের রং বদল দেখে।

কোন্ রঙের প্রস্রাবে কী বোঝা যায়, জানা থাকলে তাই সুবিধা হয় বৈ কি। তাহলে জেনে নেওয়া যাক, বিভিন্ন রঙের প্রস্রাব আমাদের কী জানায়।

হালকা হলদেটে.

এটাই প্রস্রাবের স্বাভাবিক রং। ইউরোক্রোম নামে একটি উপাদানের কারণে এই রং থাকে আমাদের প্রস্রাবের। পিত্তরসের একটি বর্জ্য উপাদান থেকে ইউরোক্রোম নিঃসরণ হয়। এই ম্লান হলুদ রঙের প্রসাব বলে দেয় স্বাভাবিক মাত্রায় ৯৬ ভাগ পানি আর বাকিটুকু বাড়তি লবন, হরমোনসহ অন্যান্য বর্জ্য রয়েছে প্রস্রাবে, যা সুস্থতাকে নির্দেশ করে।

স্বচ্ছ সাদা.

এই রঙের প্রস্রাব কিন্তু একটু সমস্যার। কারণে অতিরিক্ত পানি পান করলে হলুদ রঙের ঐ উপাদানটি বেশি পাতলা হয়ে পড়ে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেলে এই রং হতে পারে। আবার এক ধরণের বিরল শ্রেণির ডায়াবেটিসেও প্রস্রাব স্বচ্ছ হয়। প্রতি ২৫ হাজার মানুষের একজনের এ ধরণের ডায়াবেটিস দেখা যায়।

খেলোয়াড় বা নারীদের অনেকে কায়িক পরিশ্রমের কারণে অতিরিক্ত পানি খেলে এই রঙের প্রস্রাব হতে পারে। এতে শরীরের লবণ পাতলা হয়ে অনবরত বেরিয়ে যাওয়ায় জ্ঞান হারানো এমনকি মৃত্যুও ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

উজ্জ্বল হলুদ.

উজ্জ্বল হলুদ রঙের প্রস্রাব হচ্ছে? বুঝতে হবে আপনি ভিটামিন খাচ্ছেন। বিশেষ করে ভিটামিন বি এবং সি-এর কারণে এই রঙের প্রস্রাব হয়। খাবারে যে পরিমাণ ভিটামিন থাকে, তাতে এরকম প্রস্রাব হওয়ার কথা নয়। তবে, ভিটামিন পিল বা অন্য কোনো রকম ভিটামিন ওষুধ গ্রহণের বেলায় বাড়তি ভিটামিনটুকু বেরিয়ে যায় প্রস্রাবের সঙ্গে। অন্যান্য ভিটামিন শরীরে জমা থাকলেও সি ও বি ভিটামিন পানিতে দ্রবণীয় বলে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। ফলে প্রস্রাবের রঙে এই বদল আসতে পারে।

কমলা.

এই রঙের প্রস্রাবের মানে, আপনার শরীরে পানির ঘাটতি রয়েছে। দ্রুত পানি পান করুন। সারারাত ঘুমানোর পর সকালে সাধারণত এই রঙের প্রস্রাব হতে পারে। রাতে কিডনি তার কাজ চালিয়ে যায়, কিন্তু ঘুমের কারণে আমরা পানি পান করতে পারি না বলে এই রং ধারণ করে আমাদের প্রস্রাব।

অতিরিক্ত লবন দেওয়া খাবার খেলেও কিন্তু প্রস্রাব কমলা বা গাঢ় হলুদ হতে পারে।

আর এই রঙের প্রস্রাব হতে পারে জন্ডিস হলে। প্রস্রাবের ইনফেকশনও নির্দেশ করে এই রং। সুতরাং কমলা বা গাঢ় হলুদ রঙের প্রস্রাব সকাল ছাড়াও হতে থাকলে অবশ্যই চিন্তিত হওয়ার আছে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে হবে।

সাদাটে বা ঘোলাটে.

এটিও সাধারণত স্বাভাবিক প্রস্রাবের রং, বিশেষ করে যৌনমিলনের পরবর্তী প্রস্রাবে বীর্যের অবশেষ থেকে এই রং হতে পারে।

আবার, ক্যালসিয়াম বা ফসফেট সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলেও এমনটি হয়। দুধ, পনির, প্রাণির কিডনি, কলিজা ইত্যাদি বেশি খেলেও প্রস্রাবের রঙে এই পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। চিকিৎসকরা বলছেন, এই রং নিয়ে বিশেষ চিন্তার কিছু নেই।

এ বাদেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রং সবুজ, গোলাপি, বেগুনি, নীল, বাদামি এমনকি কালোও হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রেই সাধারণত বিশেষ কোনো কেমিক্যাল, ওষুধ বা বিরল কোনো জেনেটিক সমস্যায় এই ধরণের রং ধারণ করে প্রস্রাব। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই জরুরী।

প্রস্রাবের রং যেহেতু সাধারণভাবে শারীরিক অবস্থার বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ করছে, সুতরাং এখন থেকে একটু খেয়াল করে দেখে সে অনুযায়ী চলতে পারলে সুস্থ থাকা সহজ হবে, সন্দেহ নেই।



মন্তব্য চালু নেই