তাবলীগে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, অর্থ কেলেঙ্কারি! -নিরসনে পুলিশ

প্রস্তুত ময়দান, শুক্রবার শুরু ইজতেমা

টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার ভোরে আমবায়নের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা। তারা ময়দানের নিজ নিজ খিত্তায় (নির্ধারিত স্থান) অবস্থান নিচ্ছেন। ১১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্ব।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, ট্রাক, পিক-আপ, বাসযোগে বিভিন্ন জেলার হাজারো মুসল্লি ইজতেমায় আসছেন। মুসল্লিদের জন্য সার্বিক ব্যবস্থাপনা শেষ করেছেন আয়োজকরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে সার্বিক প্রস্তুতি।
৪০ খিত্তায় অবস্থান নেবেন ৩২ জেলার মুসল্লি: এবারের প্রথম পর্বে ইজতেমায় ৩২জেলার মুসল্লির জন্য ময়দানকে ৪০খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান, রান্না-বান্না করার স্থান, টয়লেট, অজুখানা, গোসল খানা সবই সুনিদিষ্ট করা হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত হতে দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা ময়দানে এসে ইজতেমায় যোগ দেয়া শুরু করেছেন। বিদেশিরা ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে তাদের জন্য উন্নত তাবুতে এসে অবস্থান নিচ্ছেন। এরই মধ্যে কয়েক হাজার বিদেশি মেহমান এসে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি একই সময়ে দেশের ৩২টি জেলা থেকে কয়েক হাজার মুসল্লি এসে ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে হাজির হয়েছেন।
এবারে প্রথম দফায় বিভিন্ন জেলার দের জন্য পুরো ময়দানকে ৪০টি খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তায় নির্দিষ্ট জেলার জন্য নির্ধারিত।
Ijtema02সে হিসেবে ১-২নং খিত্তায়-গাজীপুর, ৩-১৩নং খিত্তায় – ঢাকা জেলা, ১৪নং খিত্তায়-সিরাজগঞ্জ, ১৫ নং খিত্তায়- নরসিংদী, ১৬নং খিত্তায়- ফরিদপুর, ১৭ নং খিত্তায়- রাজবাড়ি, ১৮ নং খিত্তায়- শরিয়তপুর, ১৯ নং খিত্তায় – কিশোরগঞ্জ, ২০ নং- খিত্তায় নাটোর, ২১ নং খিত্তায়- রংপুর, ২২ নং খিত্তায়-শেরপুর, হবিগঞ্জ, ২৩ নং খিত্তায়- রাজশাহী, ২৪ নং খিত্তায়- জয়পুরহাট, ২৫নং খিত্তায়- গাইবান্ধা, ২৬নং খিত্তায়- লালমনিরহাট, ২৭ নং খিত্তায়- হবিগঞ্জ, ২৮ নং খিত্তায়- দিনাজপুর, ২৯ নং খিত্তায়- সিলেট, ৩০ নং খিত্তায়- চাঁদপুর, ৩১ নং খিত্তায়-ফেনী, ৩২ নং খিত্তায়- চট্টগ্রাম, , ৩৩ নং খিত্তায়- বান্দরবন, খাড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি, ৩৪নং খিত্তায়-বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, ৩৫নং খিত্তায় নড়াইল, ৩৬ নং খিত্তায়-চুয়াডাঙ্গা, ৩৭নং খিত্তায়- যশোর, ৩৮নং খিত্তায়- ভোলা, ৩৯ নং খিত্তায়-বরগুনা এবং ৪০নং খিত্তায়-ঝালকাঠি জেলার মুসল্লিরা অবস্থান নেবেন।
তিনি আরও জানান, এবারও বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে আখেরি দোয়ামঞ্চ ও ময়দানের পশ্চিমে বয়ানমঞ্চ থেকে দক্ষিণে তুরাগ তীরে বয়ান ও নামাজের মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। তুরাগতীরে ভাসমান সেতুনির্মাণ, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির লাইন সংযোগসহ সকল প্রস্তুতি কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
ইজতেমায় দ্বায়িত্বরত স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল: মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গাজীপুরের ইজতেমায় দায়িত্বপালনকারী সকল চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ছুটি ৮ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. আনিসুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। তিন পালায় ১৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও ৬৩ জন মেডিকেল অফিসার ইজতেমা ময়দানে দায়িত্বে থাকবেন। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু গেইট, এটলাস গেইট, বাটা কারাখানার গেইট, বিদেশি মেহমান খানা ও তুরাগের পশ্চিম তীরে আরো ২টি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। টঙ্গী হাসপাতালে এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ণ, চক্ষু এবং ওআরটি কর্ণারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা দেবেন। ’
Istema01এছাড়া মুসল্লিরা যাতে ঢাকাসহ আশে-পাশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থাসহ সকল চিকিৎসা সেবা পান তার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও চিঠি দেয়া হয়েছে। মুসল্লি রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১২টি অ্যাম্বলেন্স মোতায়েন থাকবে। আশে-পাশের খাবারের দোকানে ও ইজতেমাস্থল এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত করতে ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। ইজতেমা মাঠের উত্তরে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অর্ধশত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থানের কাজ চলছে।
তবে এবারের ইজতেমায় অবরোধে রাস্তায় ঝামেলা হতে পারে এ আশঙ্কায় দিনে না এসে মুসল্লিদের অনেকেই রাতে গাড়ি নিয়ে রওনা হন। তবে তারা জানান, রাস্তায় তাদের তেমন অসুবিধা হয়নি।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা: ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ। এক ব্রিফিংয়ে পুলিশের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.দেলোয়ার হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ইজতেমার নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ প্রশাসন পাঁচ স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অপরাধীদের চিহ্নিত করতে প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইজতেমা এলাকাকে পাঁচটি জোনে ভাগ করে প্রায় ১২হাজার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বাপালন করছে । সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমের অধীনে পাঁচটি সাব কন্ট্রোলরুম থাকছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানান, টঙ্গী ব্রিজ থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা, মন্নুগেট থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত এবং তুরাগ নদসহ পুরো এলাকাকে ৫টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে।
প্রতিটি সেক্টরে একজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে থাকবে চেকপোস্ট, ওয়াচ টাওয়ার।
ইজতেমার প্রতিটি প্রবেশ পথে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। খিত্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিরাপত্তা কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন।
Istema05র‌্যাবের পরিকল্পনা: আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি কাজ করবে র‌্যাব সদস্যরা। ইজতেমা ময়দানে র‌্যাবের প্রস্তুতি নিয়ে বক্তব্য দেন মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। সময় তিনি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তায় র‌্যাব ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আমাদের প্রতিটি খিত্তায় পোশাকধারী এবং ছদ্মবেশী র‌্যাব সদস্য থাকবে। এছাড়া মোটর সাইকেল টহল, নদী পথে নৌ টহল এবং প্রয়োজনমতো হেলিকপ্টার টহল থাকবে।’
তিনি আরও জানান, অবরোধে পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস পরিবহনে র‌্যাবের প্রয়োজন হলে সেখানে তাদের মোতায়েন করা হবে। স্থানীয় র‌্যাব সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা নিরাপত্তা দিয়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে।
সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ: বৃহস্পতিবার সকালে ইজতেমার ময়দান পরিদর্শন করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি জানান, ইজতেমায় বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না। বিদ্যুতের জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনটি ফিডার থেকে ইজতেমা মাঠে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ইমার্জেন্সি সাপোর্ট হিসেবে সার্বক্ষণিক স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর রাখা হয়েছে। আশা করি বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না।
ইজতেমাস্থলে প্রতিদিন ১০ মোবাইল কোর্ট: গাজীপুরের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ইজতেমাস্থল ও আশে-পাশের অঞ্চলকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে ওইসব অঞ্চলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত করণসহ ইজতেমার বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য প্রতিদিন দু’পালায় ৫টি করে ১০টিমোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসন।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প: ইজতেমায় মুসুল্লিদের প্রয়োজনীয় ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু টেক্সটাইল মিল প্রাঙ্গনে স্থাপন করা হয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। হামদর্দ, ইবেন সিনাসহ বেশ কয়েকটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
দুপুরে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি।
গাজীপুর সিভিল সার্ভিসের স্বাস্থ্যসেবা: সিভিল সার্বিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইজতেমায় তাদের ৩টি টিম ২৪ঘন্টা কাজ করবে। ১৪টি এম্বুল্যান্স সার্বক্ষণিক সেবা দিবে। জরুরি অবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রস্তুত থাকবে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতাল এবং পার্শ্ববর্তী উত্তরার সব হাসপাতালগুলোকে সেবা দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।
বিআরটিসির ৩০০ বাস ও রেলওয়ের ৫ ট্রেন: বিআরটিসি ও বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য বিআরটিসির ৩০০বাস নিয়োজিত থাকবে। বিমান বন্দর থেকে বিদেশি মুসল্লিদের ইজতেমায় যাতায়তের জন্যে থাকবে আরও ৫টি বাস।
এদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমার দুই দিন আগে থেকে প্রতিদিন ৫টি করে এবং ইজতেমার দিন ২২টি স্পেশাল ট্রেন চলবে। এছাড়াও সকল ট্রেন টঙ্গী জংশনে দুই মিনিট করে যাত্রা বিরতি করবে।
জিসিসির ৭০ লাখ গ্যালন বিশুদ্ধ পানি: মুসল্লিদের সেবায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি)-এর টঙ্গী অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা কবির আল আসাদ বলেন, ইজতেমাস্থলে একটি মনিটরিং কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা ছাড়াও মুসল্লি ও প্রশসানের জন্য ১৫০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ, ৭০ লক্ষ গ্যালন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, পরিবেশ দুষণ রোধকল্পে ৭০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার এবং মশক নিধনে ২০টি ফগার মেশিন কাজ করবে।
এছাড়া সিনেমার অশ্লীল পোষ্টার অপসারণ, ময়লা পরিষ্কারসহ সিটি কর্পোরেশন নানা সেবা মূলক কাজে অংশ নিবে। ইতিমধ্যে এসব বিষয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
Istema06বিদেশিদের ৪৫ দিনের ভিসা: বিদেশি অতিথিদের ভিসা ও আপ্যায়নের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তফা কামাল উদ্দিন জানান, আমরা মুসল্লিদের সাধারণত ৪৫ দিনের ভিসা দেব। আর যারা তিন চিল্লায় আসবেন তাদের ১৩০দিনের ভিসা দেব। তবে,তা হবে তাবলীগের মুরব্বিদের সুপারিশ অনুযায়ী। তবে কোনো ধরনের জঙ্গি বা ক্ষতিকর গ্রুপের সন্দেহ হলে আমরা তাদের ভিসা দেব না।
এবোলা ভাইরাস সনাক্তে বিশেষ ক্যাম্প: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তফা কামাল উদ্দিন জানান, বিশ্বের অনেক দেশে এবোলা ভাইরাসের প্রকোপ থাকায় আমরা নির্দেশ দিয়েছি বিদেশিদের এবোলা ভাইরাস পরীক্ষা করে একটি সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য। ওইসব দেশের মুসল্লিরা ভাইরাস সংক্রান্ত সার্টিফিকেট ও তাবলীগের মার্কাজ সার্টিফিকেট নেয়ার পর কনসার্ন মিশনারিতে আবেদন করবেন। পরে মিশনারিগুলো ওই ওই সার্টিফিকেটগুলো দেখে তাদের ভিসা দেবে।
তিনি আরও জানান, বিমানবন্দরগুলোতে আমরা অভ্যর্থনা কেন্দ্র খুলেছি। সেখানেও অন-এরাইভাল ভিসার ব্যবস্থা করেছি। সেখানে একটি কমিটি ওই ভিসাগুলো দেবে। এছাড়া যতগুলো স্থল বন্দর আছে সেখানেও অন-অ্যরাইভাল ভিসা দেয়ার ব্যপারে কমিটি করা হয়েছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভিসা দেবেন। যাতে কোন জঙ্গী বা ইবোলা ভাইরাস সংক্রামিত মুসল্লি দেশে ঢুকতে না পারে।
উল্লেখ্য, ক্রমবর্ধমান মুসল্লিদের কথা বিবেচেনা করে আয়োজক কর্তৃপক্ষ গেল চার বছর ধরে দু’পর্বে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করছেন। এবারের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৬ জানুয়ারি এবং ১৮জানুয়ারি আখেরি মেনাজাতের মধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।

তাবলীগের দ্বন্দ্ব নিরসনে পুলিশ
প্রেসক্লাবে এম মুশফিকুর রহমান চৌধুরী সমর্থিত সাথীদের সংবাদ সম্মেলনঅনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা বিষয় নিয়ে তাবলীগ জামাতের দীর্ঘ দিনের মতানৈক্য ও দ্বন্দ্ব নিরসনে পুলিশ উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব চললেও সাম্প্রতিক সময়ে তাবলীগের বিভক্তি প্রায় প্রকাশ্যে চলে এসেছে। একই সঙ্গে তাবলীগের নাম ভাঙিয়ে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠছে অনেক মুরব্বীর বিরুদ্ধে। শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। শুরু হয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্বও। মূলত ওয়াসিফ ইসলামের সঙ্গে বিরোধ অধ্যাপক মুশফিক আহমেদের।
এই বিরোধ মেটাতে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকের (আইজিপি) আহ্বানে বৃহস্পতিবার পুলিশ সদরদপ্তরে গিয়েছিলেন অধ্যাপক মুশফিক আহমেদ। দুপুর সাড়ে ১২টা থকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন অধ্যাপক মুশফিক।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম মুশফিকুর রহমান চৌধুরী সমর্থিত তাবলীগ জামাতের সাথীরা। লিখিত বক্তব্য দেন তাবলীগের সাথী আহমেদ ফজলে আকবর। আরো উপস্থিত ছিলেন- রাকিবুল হাসান, আবু সাইদ মো. লতিফুল আলম, মামুন-উর রশিদ, নারায়নগঞ্জের হাসান হাবিব প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসিফুল ইসলামের অনিয়মের নিয়ে কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলন শেষে তারাও পুলিশ সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন।
ওয়াসিফের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাৎ নিয়ে কথা ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তাবলীগ জামাতের কথা বলে দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন যা ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন।
সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বাংলাদেশ তাবলীগের একজন প্রবীণ ও গুরুত্বপূর্ণ মজলিসে শূরার সদস্য। একই সঙ্গে তিনি ফায়সাল বা আমির।
তাবলীগ জামাতের আমির ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে লিফলেট বিতরণকালে বিভিন্ন সময়ে তাবলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে ওয়াসিফুলের লোকজন।
ওয়াসিফুলের বিরুদ্ধে এক পাতার একটি লিফলেট বিতরণ শুরু করে। ওই লিফলেটে ‘ওয়াসিফুলের হাত থেকে তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় মসজিদকে রক্ষার’ আহ্বান জানানো হয়। তাতে মাওলানা ওয়াসিফুলের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়।
পুলিশ সদরদপ্তর থেকে বেরিয়ে এম মুশফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বৈঠকে পুলিশের আইজি, কয়েকজন ডিআইজি উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ তাদেরকে ইজতেমায় লিফলেট বিতরণ করতে নিষেধ করেন। ইজতেমার পরে অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রমনা জোনের ‍এসি শিবলী নোমান। তাবলীগের আর্থিক বিষয় নিয়ে সমস্যা আছে উল্লখে করলেও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানেন না বলে জানান শিবলী নোমান।
Istema03এদিকে সংবাদ সম্মেলেন লিখিত বক্তব্যে আহমেদ ফজলে আকবর বলেন, ‘ওয়াসিফুল ইসলাম কাকরাইল মসজিদ নির্মাণের নামে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে দু’শত কোটি টাকা টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। বিদেশ থেকে এসব টাকা সংগ্রহে সহায়তা করেছেন ওয়াসিফুল ইসলামের ছেলে ওসামা ইসলাম। এছাড়া তিনি একটি জাতীয় পত্রিকায় রাজনীতি বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। টুইটারে রাজনীতি বিষয়ে মন্তব্য লিখেছেন। যা তাবলীগের মৌলিক নীতি অনুসরণ করে না।’
তারা বলেন, ওয়াসিকুল ইসলাম তাবলীগের শুরা (কার্যপরিষদ) সদস্য পরিচয় বহাল রেখেই চাঁদাবাজি ও রাজনীতি করে যাচ্ছেন। তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণের কারণে বিপুল সংখ্যক তাবলীগ সাথীদের সমর্থন পাচ্ছেন, যা তাবলীগের মূলনীতির পরিপন্থি এবং সম্পূর্ণ তাবলীগ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এতে যারা বাধা দিচ্ছেন তাদেরকে জেএমবির সদস্য বলে পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে ক্ষিপ্ত হয় তারা। এরপরে লিফলেট বিতরণ করে সতর্ক করার চেষ্টা হয়। তখন তাদের ওপর হামলা করা হয়। মারধরের মিশন সম্পন্ন করেন ইঞ্জিয়ার মাহফুজুল হান্নান ও ইঞ্জিয়ার আনিসুর রহমান।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে কাকরাইল মসজিদে লিফলেট বিতরণ করেছেন তাবলীগের অন্য সাথীরা। তখন দুই দফায় ৪৭ জনকে মসজিদের ভেতরে আটকে রেখে মারধর করে রমনা থানা পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ ৫৪ ধারায় আটক করে জেলহাজতে পাঠায়।

তাবলীগে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, অর্থ কেলেঙ্কারি!
tablegueতাবলীগ জামাত সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের কাছে একটি আস্থার প্রতীক। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যায় তারা। এদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকায় সব দেশে দাওয়াতি কর্মকাণ্ড চালাতে পারে অনায়াসে।
কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, রাজনীতি বর্জিত এ ধর্মীয় সংগঠনটিতেও ঢুকে গেছে কৌটিল্যের প্রেতাত্মা। দীর্ঘ দিন ধরে মতানৈক্যের কারণে বিভক্তি প্রায় প্রকাশ্যে চলে এসেছে। একই সঙ্গে তাবলীগের নাম ভাঙিয়ে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠছে অনেক মুরব্বীর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। শুরু হয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্বও।
ভারতের বাসিন্দা মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস (র) ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠনে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক লেনদেন করার নিয়ম নেই। এমনকি তাবলীগ দিল্লির নিজামুদ্দীনের মুরুব্বীরাও আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এর ফলে তাবলীগ আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মোসলমানদের কাছে। তবে ব্যক্তি বিশেষ, সরকারের পক্ষ থেকে তাবলীগ উন্নয়ন ও রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার সময় আর্থিক সহায়তা করতে চাইলে দায়িত্বশীলদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অনুদান নেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তাবলীগ জামাতের কথা বলে দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন যা ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা রাখেন।
সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বাংলাদেশ তাবলীগের একজন প্রবীণ ও গুরুত্বপূর্ণ মজলিসে শূরার সদস্য। একই সঙ্গে তিনি ফায়সাল বা আমির।
তাবলীগের সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পৃক্ত একাধিকব্যক্তি জানিয়েছেন, ওয়াসিফুল রাজনীতিতেও যুক্ত, এছাড়া তাবলীগের মূলনীতি (৬ উসূল) থেকেও তিনি বিচ্যুত।
এর ফলে তাবলীগ জামাতে বড় ধরনের বিভক্তিসহ সংগঠনটি বিতর্কিত হতে পারে বলেও মনে করছেন তাবলীগ সংশ্লিষ্টরা । প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এসব বিষয়ে বিভক্তি বাড়ছে। ফলে একাধিক স্থানে তাবলীগ দুটি দল হয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। তবে সংগঠনের সুনামের কথা বিবেচনা করে ভেতরে গুঞ্জন চললেও অনেকে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। যারা এসব বিষয়ে কথা বলছেন তাদের জঙ্গি আখ্যা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তাবলীগ জামাতের দায়িত্বশীলদের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করা, কাকরাইল মসজিদের আর্থিক লেনদেনে সরকারের নিয়ন্ত্রণসহ বেশকিছু প্রস্তাব জানিয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাসের জন্য ডেপুটি স্পিকারের আছে গত এপ্রিল মাসে আবেদন করেছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপ মন্ত্রী আরিফ খান জয়।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি হাসান হাবিব তালুকদার। একই সঙ্গে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাবলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন জানান, মূলত ওয়াসিফ ইসলামের সঙ্গে বিরোধ অধ্যাপক মুশফিক আহমেদের। ওয়াসিফের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাৎ নিয়ে কথা ওঠে। ২০১৩ ইজতেমা মাঠে ওয়াসিফের কক্ষ থেকে বড় অংকের টাকা পাওয়া যায়।
Istema7কাকরাইলের মসজিদ নির্মাণের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ অনেকেই করেন। বিগত দুই বছরে কাকরাইল মসজিদ থেকেই ১০ লাখ টাকা চুরি হয়। এমন নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলার ফলে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুশফিক আহমেদের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে কাকরাইলে মজলিসে শূরার সদস্য ১৩ জন ও ফায়সাল (আমির) রয়েছেন ৭ জন। আর এই মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত করা হয় দিল্লির নিজামুদ্দীনের মুরুব্বীদের মাধ্যমে। দু’একজন মজলিসে শূরার সদস্য এসব বিষয়ে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করলেও অন্যরা চুপচাপ রয়েছেন।
এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া উপ মন্ত্রী আরিফ খান জয় বলেন, ‘ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অনিয়ম কিংবা ব্যক্তিস্বার্থ পূরণের স্থান নয়। তাবলীগ পৃথিবীজুড়েই মোসলমানদের আস্থার প্রতীক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ তাবলীগের ভূমিকা সব সময় প্রশংসনীয় হয়েছে। বিশ্ব এজতেমায় বিভিন্ন দেশের মানুষ বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু এখন যদি সেই তাবলীগকে কেউ রাজনীতি ও আর্থিক সুবিধা আদায়ের জায়গায় পরিনত করে তবে তা মেনে নেয়া যায় না।’
আরিফ খান জয় বলেন, ‘তাবলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন-কেউ কেউ তাবলীগের নাম ব্যবহার করে নানাভাবে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। তাই তাবলীগের যারা দায়িত্বশীল তাদের আরো বেশি স্বচ্ছতার মধ্যে থাকা উচিৎ। কাকরাইল মসজিদের আর্থিক লেনদেনে জবাবদিহিতা থাকা প্রয়োজন। যারা অনিয়ম করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করতেই জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে আবেদন করেছি। এর ফলে ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে তাবলীগ সব সময় আস্থার প্রতীক হিসেবেই থাকবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম বলেন, ‘দিল্লির নিজামুদ্দীনের মুরুব্বীদের অনুমতি ছাড়া সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।’
তবে তার আস্থাভাজন একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রফেসর মুশফিক শুধুমাত্র ওয়াসিফের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কারণ তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ হলেও মজলিসে শূরার সদস্য হতে পারেননি, কিন্তু ওয়াসিফ হয়েছেন। আবার মুশফিক নতুন প্রজন্মকে টার্গেট করে দাওয়াতের কাজ করছেন যা নিয়ে সকল মুরুব্বীদের আপত্তি রয়েছে। কেউ কেউ বলেন জামায়াত-শিবিরের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মুশফিক এসব করছেন।’
কাকরাইলে মজলিসে শূরার সদস্য শাহাবুদ্দিন নাছিম বলেন, ‘সৈয়দ ওয়াসিফ ও প্রফেসর মুশফিক দু’জনই দিনের জন্য কাজ করছেন। তাদের মধ্যে বিরোধ আছে। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রফেসর মুশফিক একজন মেধাবী ব্যক্তি যিনি দীর্ঘ সময় ধরে তাবলীগের জন্য কাজ করছেন। তবে প্রফেসর মুশফিক তাবলীগের মূলনীতি কর্মপদ্ধতি থেকে বিচ্যুত। আমি মনে করি, তিনি বিপদ্গামী হয়েছেন। তিনি তার ভুল বুঝতে পেরে আবার ফিরে এলে তাবলীগের জন্য মঙ্গল হবে।’
তবে সৈয়দ ওয়াসিফের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নাকোচ করে দেন শূরার সদস্য শাহাবুদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, ‘তাবলীগে কারো টাকা দেয়ার নিয়ম নেই। তবে কাকরাইল মসজিদ ও ইজতেমার জন্য কেউ কেউ আর্থিক সহায়তা দিতে চান। তবে শুধুমাত্র তার সাহায্য নেয়া হয় যিনি হালাল এবং তাবলীগে সময় দিয়েছেন। শূরার সদস্যরা প্রতিনিয়ত আর্থিক হিসাব দেখাশোনা করেন। এখানে কেউ এককভাবে লেনদেন করেন না। কেউ যদি সৈয়দ ওয়াসিফের বিরুদ্ধে অর্থআত্মসাতের অভিযোগ করেন তাকে অবশ্যই প্রমাণও দিতে হবে। চাইলে সরকার এ বিষয়ে তদন্ত করতেই পারে।’
বিরোধ প্রসঙ্গে সূরা সদস্য মাওলানা মোজাম্মেলুল হকের ছেলে মাওলানা আনাস বলেন, ‘প্রফেসর মুশফিক ও সৈয়দ ওয়াসিফুলের বিরোধ দীর্ঘদিনের। আদর্শিক কারণে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মুরব্বীরা সমাধানের জন্য চেষ্টা করলেও বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। অনেকেই বলেন, প্রফেসর মুশফিক প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে তাবলীগের কাজ করতে চান যা মেনে নেয়া যায় না। এসব নানা বিষয়ে বিরোধ হচ্ছে। প্রফেসর মুশফিক রাজশাহীতে থাকেন বলে সেখানে তার প্রভাব থাকায় সেখানে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।’
অর্থ আত্মসাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সৈয়দ ওয়াসিফুল শুধু নয়, তাবলীগ জামাতের দায়িত্বশীল কারো বিরুদ্ধে অর্থআত্মসাতের অভিযোগ কেউ যদি করেন তা মিথ্যা। যারা ইসলামের জন্য নিজের পকেটের টাকা ব্যয় করেন তাদের দ্বারা এমন কাজ হতে পারে না। একই সঙ্গে দায়িত্বশীলরা সম্মিলিত ভাবেই আর্থিক বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখেন।’
তবে এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুশফিক আহমেদ বলেন, ‘সৈয়দ ওয়াসিফ তাবলীগের সঙ্গে রাজনীতিকে যুক্ত করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন। তিনি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে স্বনামে হেফাজতকে সমর্থন দিয়ে লিখেছেন। তাবলীগের মধ্যে থাকলে রাজনীতি নিয়ে কথা শুধু নয় আগ্রহ থাকার সুযোগ নেই। সৈয়দ ওয়াসিফ শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বী হয়ে রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট হেফাজতকে নিয়ে পত্রিকায় লিখেন কী করে। সামাজিক যোগাযোগ সাইটেও প্রচার করছেন। অন্যদিকে তিনি অর্থ অর্থআত্মসাৎ করেছেন। দুটি বিষয় তাবলীগের জন্য হুমকি। আমি মনে করি, এরজন্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সৈয়দ ওয়াসিফও তার ছেলেদের আর্থিক হিসাব নিলেই প্রমাণ মিলবে।’
মুশফিক আহমেদ বলেন, ‘যদি কেউ সৈয়দ ওয়াসিফ কাছে হিসাব চান তাহলেই তিনি বিরাগভাজন হবেন। তার ছেলেরা কীভাবে খিদমাহ হাসপাতালের পরিচালক হয়েছেন, ওয়ানকার ট্রেডিং, ওয়ান এডুকেয়ারের মালিক হয়েছেন। সৈয়দ ওয়াসিফ তাবলীগের সুনাম নষ্ট করছেন। গত বছরের শেষ দিকে মাওলানা আশরাফ আলীকে টঙ্গী ময়দানে জঙ্গি বলে ও কাকরাইলে মেহেদি হাসান নামে একজন সাথীকে মারধর করেছেন। এ কারণে রমনা থানায় সৈয়দ ওয়াসিফ, তার ছেলে ওসামার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন মেহেদি হাসান।’



মন্তব্য চালু নেই