প্রশ্নফাঁসে চুক্তি হয় ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার
৩ থেকে ৫ লাখ টাকায় পাওয়া যেতো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সন্দেহে ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এতথ্য বেরিয়ে আসে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্রের বিনিময়ে তাঁরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিতেন। শিক্ষার্থীদের মূল সনদ নিজেদের জিম্মায় রাখতেন। টাকা পাওয়ার পর সনদ ফিরিয়ে দেওয়া হতো। হোয়াটস অ্যাপে প্রশ্নপত্রের লিংক পাঠিয়ে দেওয়া হতো।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম এসব কথা বলেন।
প্রশ্ন দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ২২ জনকে আটক করে ডিবি। তাঁদের মধ্যে থেকে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন জোবায়ের হোসেন, মো. আকিব বিন বারী, নাহিদুল হক, সাজু আহমেদ, মাহমুদুল হাসান, সামিউল ইসলাম, সাব্বির হোসেন, হাসানুর রশিদ, মো. মেহেদী হাসান, হৃদয় ইসলাম, রায়হান রাব্বী, আকাশ আহমেদ, মো. তানভীর, সবুজ খান, মো. সোহাগ, মেহেদী হাসান ও মানিক মিয়া।
ডিবি বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাঁরা প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সামনে থেকে জোবায়ের হোসেনকে আটক করেন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্যদের আটক করা হয়। এ ঘটনার মূল হোতা জোবায়ের, আকিব ও নাহিদুল। আকিব ও নাহিদুলের কাছ থেকে ১০টি সনদপত্র পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার সনদপত্র, ট্রান্সক্রিপট, মোবাইল ফোন, হোয়াটস অ্যাপে পাঠানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও ফেসবুকে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।
উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাঁরা তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তিতে প্রশ্নফাঁসের কাজ করে আসছিলেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মূল সনদপত্র নিজেদের জিম্মায় রাখেন। টাকা নেওয়ার পর সনদপত্র ফিরিয়ে দেন। হোয়াটস অ্যাপে প্রশ্নপত্রের লিংক দিয়ে দেওয়া হয়। তবে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গতকালের ‘ক’ ইউনিট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়া যায়নি।
ডিবির একটি সূত্র বলছে, ডিবির অভিযানের কারণে তাঁদের মূল পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তাঁদের কাছে যে প্রশ্নপত্র ছিল, তা তাঁরা দিতে পারেনি। এ ঘটনায় তেজগাঁও মডেল থানায় মামলা হয়েছে বলে ডিবি জানিয়েছে।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের অধীন প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ভর্তি-ইচ্ছুক চার শিক্ষার্থীকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মোবাইল ফোন বহন করার ওপর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ও ডিজিটাল জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় তিনজন শিক্ষার্থীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মন্তব্য চালু নেই