প্রযুক্তির হাত ধরে এগুচ্ছে বাংলাদেশ

মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। স্বপ্ন কি শুধু থেমে থাকছে কল্পনাতেই? নাকি এগিয়েছে কিছুটা। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য যে ডিজিটাল বাংলাদেশ অপরিহার্য তাও বা কতটা আলোর মুখ দেখেছে? প্রযুক্তির সেবার কয়েকটি দিক নিয়ে লিখেছেন নাদিম মজিদ

স্মার্ট হোম সলিউশন

ঘরের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি অত্যাধুনিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে স্মার্ট হোম সলিউশন। স্মার্টফোন বা ইন্টারনেটের সাহায্যে ঘরে কি পরিমাণ আলোর প্রয়োজন, প্রকৃতি থেকে কি পরিমাণ আলো আসছে, ঘরের লাইট, ফ্যান, টিভি যে কোনো স্থান থেকে অন/অফের ব্যবস্থা রয়েছে। বাসায় কেউ নেই অথচ কোনো অতিথি এসেছে, স্মার্টফোনের সাহায্যে দরজা খুলে দেয়া, দরজা, জানালা বন্ধ করা ও খোলা, ওয়াশরুমে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে মানুষের হাতের অস্তিত্ব পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি প্রবাহিত হওয়া, হাত সরিয়ে নিলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া। মানুষের অস্তিত্ব পেলে রুমে আলো জ্বলে উঠা, সিসিটিভির কাজ করে থাকে স্মার্ট হোম সলিউশনের ডিভাইস। আছে বিদ্যুৎ মনিটরের ব্যবস্থাও। এ ব্যবস্থার ফলে অফিসে বসেও বাড়ির দরজা খোলা-বন্ধ করা যাবে। বিদেশে বসেও ঘরের টিভি ফ্রিজ বন্ধ-চালু করা যাবে। এ ডিভাইস সক্রিয় থাকলে বাসার নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রহরীর প্রয়োজন হবে না।

ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম

শপিংমলে গিয়ে দোকানের ঠিকানা জানা না থাকলে মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে বিব্রত হতে হয়, এ অবস্থার অবসান করছে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম। স্মার্টফোনের অ্যাপলিকেশনের সাহায্যে দোকানের লোকেশন, যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে গন্তব্যের পথনির্দেশ এমনকি সে দোকান কি অফার নিয়ে আসছে গ্রাহকের জন্য তাও জানা যাবে। এ ধরনের অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করা যাবে পার্কিং গ্যারেজ, জাদুঘর, হাসপাতাল এবং দর্শনীয় স্থানসমূহেও।

দরজায় কড়া নাড়ছে যে সব প্রযুক্তি

হ্ইাটেক প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে আরো গতিশীল এবং সাশ্রয়ী করবে। সময়ের অপচয় কমাবে। জার্মানভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা প্রবাসী বাংলাদেশি মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এমন কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিবরণ দেয়া হল

টেলিহেলথ কেয়ার

গ্রামাঞ্চলের রোগীদের শহরে এসে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে, প্রয়োজনীয় টেস্ট পরীক্ষা করতে গেলে প্রচুর সময় যায়। এমন রোগীরা ঘরে বসেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারে, পায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র, সেজন্য সাইনপালস তৈরি করছে টেলি-হেলথ কেয়ার। ঘরে বসেই ব্লাডপ্রেসার, গ্লুকোজ, ওজন, ইসিজি পরীক্ষা করে তার ফলাফল নিজের তথ্যভা-ারে যোগ হবে। এসব তথ্য এবং সমস্যা জানালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাকে প্রদান করবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র। জরুরি যোগাযোগের জন্য থাকবে কল সেন্টারও।

সিভিল ড্রোন

বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোর জরিপকাজেই সময় চলে যায় অনেক। অনেকসময় না জানার কারণে ভূগর্ভে টেলিফোনের লাইন ঠিক করতে গিয়ে কেটে ফেলা হয় গ্যাস বা পানির লাইন। সিভিল ড্রোন দিয়ে যে কোনো জরিপের কাজ কম সময়ে করা সম্ভব। এতে আমাদের সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোতে সময় বাঁচবে। প্রযুক্তি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সাইনপালস তৈরি করছে চার ধরনের ড্রোন। কোয়াডকপ্টার, হেক্সাকপটার, অকটোকপটার এবং ডিজেন ইঞ্জিন কপটার। সফটওয়্যার ইনটারফেসের সাহায্যে ড্রোনের প্রোগ্রাম এবং মিশনের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

প্রযুক্তিগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে সাইনপালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ জানান, ‘ইতোমধ্যে স্মার্টমিটার, ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম (আইপিএস) এবং স্মার্ট হোম সলিউশনের প্রযুক্তি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েক জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে। শেষ পর্যায়ে রয়েছে টেলি হেলথ কেয়ারের কাজ। এ প্রযুক্তিগুলো বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।’

স্মার্ট মিটার

স্মার্ট মিটারের সঙ্গে ঘরের বৈদ্যুতিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায় বিশ্বের যে কোনো স্থানে বসে। একটি স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটারে বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য আপডেট, নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক বিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাইলে বিল সীমা অতিক্রম করতে চাইলে আগাম সংকেতের ব্যবস্থা রয়েছে। স্মার্টমিটারে যোগ হচ্ছে দিনের অফ পিক সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে তার বিল কম হওয়ার ব্যবস্থা এবং সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে প্রয়োজনাতিরিক্ত বিদ্যুৎ ন্যাশনাল গ্রিডে সরবরাহ করলে তার মূল্যমানও পাওয়া যাবে।

untitled-7_22098_0

এটুআই : পল্লীবালাও জানবেন প্রধানমন্ত্রীর কাজ
সরকারি সেবা সমাজের সকল শ্রেণীর কাছে সহজে এবং দ্রুত পৌঁছে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে একসেস টু ইনফরমেশন সিস্টেম কার্যক্রম। এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধিদফতরে ই-সেবা পরিচালিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই পাচ্ছে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং অনেক সেবা।

জীবন ও জীবিকাভিত্তিক তথ্য নিয়ে জাতীয় ই-তথ্যকোষ :

জীবন-জীবিকাভিত্তিক তথ্য এক জায়গায় সহজে খুঁজে পেতে চালু করা হয়েছে বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বড় তথ্যভাণ্ডার, জাতীয় ই-তথ্যকোষ www.infokosh.bangladesh.gov.bdএ প্রায় ১০ হাজার বিষয়ে ১ লাখ পৃষ্ঠার তথ্য রয়েছে। এছাড়া একসেস টু ইনফরমেশনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাজ অনলাইনে পাঠ্যপুস্তকের জন্য ই-বুক, আউটসোর্সিং বিষয়ে জানার এবং আয়ের উপায় নিয়ে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং, অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর ও অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন প্রস্তুত, মোবাইলের সাহায্যে বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস ইত্যাদির বিল পরিশোধ, অনলাইনে রেলওয়ের টিকেট ক্রয়, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন করে থাকে। জনগণের কাছে তথ্য সহজলভ্য করে দেয়ার কাজটি করায় স্বীকৃতি মেলেছে। বিশ্বের ১৫০টি প্রকল্পকে পেছনে ফেলে এটুআই পেয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার-২০১৪।

দুর্ঘটনায় সেবা দিতে ক্রিটিকালিংকের অ্যাপস
পুরনো ঢাকার আগামসি লেন। বেপরোয়া সিএনজির ধাক্কায় উল্টে গেছে একটি রিকশা। রিকশার যাত্রী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মাথা ফেটে গেছে। গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে। রিকশাওয়ালা কোনো রকম উঠে দাঁড়িয়েছে। আশেপাশের মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধরাধরি করে যাত্রীকে হাসপাতালে নিতে নিতে ব্যাপক রক্তক্ষরণে মারা গেছে সে মানুষ। এ ধরনের চিত্র আমাদের বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার আগেই যদি রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যেত, তাহলে প্রাণে বেঁচে যেত এ রোগী। এ ধরনের মৃত্যু কমানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্রিটিকালিংক ঢাকা শহরে চালু করেছে মোবাইল অ্যাপস এবং কাস্টমার কেয়ার সেন্টার। ক্রিটিকালিংক আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

এ অ্যাপসের কাজ নিয়ে ক্রিটিকালিংকের প্রতিষ্ঠাতা জেনিফার ফেরেল বলেন, ‘ দুর্ঘটনার শিকার কোনো ব্যক্তি বা প্রত্যক্ষদর্শী দুর্ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে ছবিসহ untitled-7c_22098_1আমাদের অ্যাপসে পোস্ট দিলে তা সাথে সাথে আমাদের কাছে চলে আসবে। আমরা দুর্ঘটনার অবস্থান দেখে তা আমরা সে এলাকার আশেপাশের স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে আমাদের পক্ষ থেকে মেসেজ যাবে। কারো স্মার্টফোন না থাকলে সে আমাদের কলসেন্টার ০৯৬৭৮৭৮৭৮৭৮-এ কল দিয়ে জানাতে পারবে। এমনকি আমাদের অ্যাপসে দুর্ঘটনার আশেপাশে কোন হাসপাতাল বা পুলিশ স্টেশন রয়েছে, তার নাম্বারও রয়েছে। সেখানে কল দিয়েও সাহায্য পাওয়া যাবে।’ অ্যাপলিকেশনটি পাওয়া যাবে www.criticalink.org Gi ÔGet Involved অপশনে। এখান থেকে ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। দুর্ঘটনাপ্রবণ বাংলাদেশের জন্য এ উদ্যোগ আশার আলোকর্তিকা হিসেবে কাজ করছে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিমাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় মাত্র দুজন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা তাদের চেয়ে কম হলেও মারা যায় প্রতিমাসে ১৬০ জন। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক সেবা দিতে মার্কিন তরুণী জেনিফার ফেরেল বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেন ক্রিটিকালিংক। স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

এ ধরনের উদ্যোগ বিশ্বে প্রথম হওয়ায় ২০১৪ সালে সমাজ পরিবর্তনকারী কাজ হিসেবে সাতটি কাজের একটি হিসেবে ওয়াশিংটন পোস্ট উল্লেখ করেছে। বর্তমানে ক্রিটিকালিংকের এই অ্যাপস শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট থেকে ডাউনলোড এবং ব্যবহার করা যাচ্ছে। উইন্ডোজ এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনের জন্যও অ্যাপস তৈরির কাজ চলছে। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ক্রিটিকালিংকের মোবাইল অ্যাপস এবং স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর কারণে বেঁচে একটি প্রাণ, তাহলে এটিও হবে কল্যাণকর উদ্যোগ।

অ্যাপলিকেশনটি পাওয়া যাবে www.criticalink.org Gi ÔGet Involved’ অপশনে। এখান থেকে ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে

দুর্ঘটনার খবর জানানো হলে জোন অনুসারে স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে এ মেসেজ পাঠানো হয়। ওকে বাটনে চাপ দিলে পাওয়া যাবে দুর্ঘটনার স্থানের নির্দেশনা এবং ছবি



মন্তব্য চালু নেই