প্রধান শিক্ষককে আ.লীগ নেতার হাতুড়িপেটা!

না জানিয়ে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির তালিকা করায় রাজশাহীর দুর্গাপুরে প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কালীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় স্কুলের অফিস কক্ষও ভাঙচুর করা হয়।

আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম আবদুল মজিদ সরদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

মারধরের ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন কালীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন (৫৫), সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) সাইফুল ইসলাম (৪০) ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির ছেলে রবিউল ইসলাম (৪২)।

আহত তিনজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

পুলিশ ও স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মজিদ সরদার লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। তাঁরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনকে মারপিট করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে স্কুলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে তালিকা পাঠানো হয়। আবদুল মজিদকে না জানিয়ে ওই তালিকা কেন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে তিনি লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। ভেতরে ঢুকেই তিনি তাঁর (মকবুল) শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে বাইরে বের করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর শাহর ছেলে রবিউল ইসলাম বাধা দিলে আবদুল মজিদ পিস্তল বের করে তাঁদের সরে যেতে বলেন। একপর্যায়ে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে তাঁকে পেটানো হয়। এ সময় স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও রবিউল ইসলামকেও মারপিট করা হয়।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর শাহ জানান, ক্লাস চলাকালে আবদুল মজিদ লোকজন নিয়ে হামলা চালান। তাঁরা বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ ভাঙচুর করেন। প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেনকে বাঁচাতে গেলে তাঁর ছেলে রবিউল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় রবিউলের বাম হাতের আঙুল কেটে যায়। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষক সাইফুলকেও মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মজিদ সরদার বলেন, ‘স্কুলের অভিভাবকরা আমার কাছে এসে অভিযোগ করেছিল যে তাঁদের না জানিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলতে গিয়েছিলাম। এ সময় বাকবিতণ্ডা হলেও মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেওয়ান নাজমুল আলম জানান, আহতদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেনের অবস্থা গুরুতর। তাঁর ডান চোখের নিচে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করার কারণে চোখের নিচে ফুলে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এ ছাড়া ডান কানের পর্দা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর আহত রবিউল ইসলামের বাম হাতের আঙুলে চারটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। রবিউল ও সাইফুলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আলম জানান, খবর পেয়ে কালীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। এ সময় মজিদ ও তাঁর লোকজন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। স্কুলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।



মন্তব্য চালু নেই