প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে তারা নিজেরাই প্রচার চালাচ্ছেন
হত্যা মামলার দুই আসামি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতে পেরে নিজেরাই পত্রিকায় সফরের প্রচারণা চালাচ্ছেন।এরা হলেন কুমিল্লা শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান ও আতিকুর রহমান পিন্টু।তারা দু’জনই নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়েছেন।হত্যা মামলার আসামিরা কী করে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হলেন,তা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে,এরা কি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েই নিউইয়র্কে গেছেন,নাকি ব্যক্তিগতভাবেই সেখানে গেছেন।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার অবশ্য খুনের মামলার তালিকাভুক্ত এই দুই ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বলে মনে করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার শতভাগ বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনও কর্মকর্তার যোগসাজশে ইমরান নিউইয়র্কে গেছেন।আর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুই জানেন না। ধারণা করছি, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায়ও তার নাম নেই। ইমরান কেবল সাইফুল হত্যা মামলার আসামিই নয়, তিনি অপহরণ করে হত্যা ও আরেকটি অস্ত্র মামলারও আসামি।’
আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার আরও বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার বিষয়টি ইমরান ও পিন্টু নিজেরাই কুমিল্লার স্থানীয় পত্রিকায় প্রচার করছে।আমি মনে করি, পুলিশের গ্রেফতার থেকে বাঁচার অংশ হিসেবে তারা এটা করছে। আসলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মতো বিশেষ বিমান ব্যবহার করেন না,সেখানে অনেক সাধারণ যাত্রীও থাকে। আমার ধারণা, তারা এ সুযোগ নিয়েই নিউইয়র্কে গেছেন। এটা তাদের একটা কৌশল।’
এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইমেজ ক্ষুণ্ন করার একটা অপচেষ্টা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনও কর্মকর্তা এতে জড়িত থাকতে পারেন। আমি এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানাই। আর দোষীদেরও অবিলম্বে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
জানাগেছে, হত্যা মামলার তালিকাভুক্ত এই আসামিরা নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার বিষয়টি ফেসবুকেও পোস্ট দিয়ে নিজেদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ইমরানের বাবা অধ্যক্ষ আফজল খান ‘কে বলছে এসব। এটা পুরোটাই আজগুবি।’ ‘আপনারা কী আর কোনও নিউজ পান না’ বলেও এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আফজাল খান।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন বলেন,‘আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশের সামনে দিয়ে ঘোরাফেরা করলেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।’
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রব জানান, ‘ঘটনাটি আমি যোগদানের আগে ঘটেছে। ছাত্রলীগ নেতা খুনের মামলায় ইমরানকে আসামি করা হয়েছে।আর পিন্টুর বিষয়ে মামলা দেখে বলতে পারবো। মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে হন্তান্তর করা হয়েছে।’
এ দু’জনের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে পুলিশের ক্লিয়ারেন্স ছিল কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন,‘কেউ ক্লিয়ারেন্স চায়নি। এগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়।’
নিহত সাইফুলের ভাই ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম নান্নু বলেন, ‘ওপরের ইন্ধন থাকায় আমার ভাইয়ের হত্যার আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’ তবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্বে সাইফুল খুন হন। নিহত হওয়ার কিছুদিন আগে সাইফুল রেলমন্ত্রীর গ্রুপ থেকে বাহার গ্রুপে যোগ দেন। তবে আফজল- ও বাহারের পুরনো দ্বন্দ্ব থাকায় সাইফুল হত্যা মামলায় রেলমন্ত্রীর লোকজনের সঙ্গে আফজালের ছেলেদেরও আসামি করা হয় বলে আফজাল গ্রুপের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দশম সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসনে বাহারের বিরুদ্ধে ইমরান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।
২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে রেলমন্ত্রী ও বাহার গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এরপর নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে প্রতিপক্ষ সাইফুলকে ছুরিকাঘাত করে। সাইফুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল কুমিল্লার একটি হাসপাতালে মারা যান। সাইফুল নগরীর গোবিন্দপুর এলাকার নুরুল হুদা কালুর ছেলে। এ ঘটনায় ১৩ এপ্রিল এমপি বাহারের সমর্থক কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম রিন্টু মামলা করেন। এতে ইমরান ও পিন্টুসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
ইমরান ও পিন্টু নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনও কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দলের কোনও নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের বর্তমান সভাপতি অধ্যক্ষ আফজল খানের বড় ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। ইমরান নিজেও কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। আর আতিকুর রহমান পিন্টু কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।
মন্তব্য চালু নেই