প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ: বাংলাদেশে ফিরতে চায় বিলুপ্ত ছিটমহলের অনেক বাসিন্দা
প্রতিশ্রুতি না রাখায় ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরতে চায় বিলুপ্ত ছিটমহলের অনেক বাসিন্দা। কাজের অভাব আর অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার মাত্র এক বছরের মাথায়ই তারা আবার বাংলাদেশে ফেরার আর্জি জানায় বলে দ্য ইকোনোমিক্স টাইমস তাদের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
গত বছরের ১লা আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের জনসংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ১শ ৬০ জন। আর ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের জনসংখ্যা ৭ হাজার ১শ ১০ জন।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ভারতীয় ছিটমহল থেকে আসা বেশ কিছু বাসিন্দা আবার বাংলাদেশে ফেরার আর্জি জানিয়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা পিটিআইকে প্রদীপ বলেন, ‘বাংলাদেশের ভারতীয় ছিটমহল থেকে আসা বেশ কিছু বাসিন্দার কাছ থেকে আমি চিঠি পেয়েছি। ভারতে কাজের অভাব এবং অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা আবার বাংলাদেশে ফিরতে চায়।’
পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের এই এমপি আরো বলেন, ‘এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র বিভাগের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।’
কাজের অভাবের পাশাপাশি এসব বাসিন্দাদের অভিযোগ তারা ভিন্ন সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন-বলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি ও নাগরিক অধিকার সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক দিপ্তীমান সেনগুপ্তা বলেন, যারা জীবন-জীবিকার জন্য ছিটমহলে কঠিন লড়াই করেছে এবং যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে তারা এখনো ভাল কোনো কাজ পায়নি। এখন তারা আবার বাংলাদেশে ফিরতে চায়।
বার্তা সংস্থা পিটিআইকে সেনগুপ্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের ভারতীয় ছিটমহল থেকে যারা এখানে (ভারতে) এসেছে তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে করছে। তারা এখনো ভাল এবং নিরাপদ কোনো কাজ পায়নি। অন্যান্য সুবিধা তো নয়ই। তাদের আয়ের কোনো নিশ্চিত পথ নেই। তাদের ভবিষ্যৎ কীভাবে নিরাপদ হবে? তাই নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশে ফিরে যাওয়াকেই তারা সেরা বিকল্প হিসেবে মনে করছে।’
বিলুপ্ত ছিটমহল অধিকাংশ বাসিন্দার চাহিদাই অসম্পন্ন দাবি করে তিনি বলেন, ‘ছিটমহল বাসিন্দাদের সর্বাগ্রে দাবি দুটি। একটি হলো কাজের নিশ্চয়তা। অন্যটি ভূমি রেকর্ড ও বসতিস্থাপনের দ্রুত নিষ্পত্তি। কিন্তু এর কোনোটি এখন পর্যন্ত করা হয়নি। জমি এবং বসবাসের কোনো সঠিক কাগজপত্র ছাড়া একজন ব্যক্তি কি করতে পারে।’
সেনগুপ্তের মতো ছিটমহলবাসীরা মনে করে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর লম্বা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও নূন্যতম সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ওসমান গণি নামের একজন ছিটমহল বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা এখনো নিরাপদ কোনো কাজ পাইনি। এর চেয়ে বাংলাদেশে আমরা অনেক ভাল ছিলাম। পরিস্থিতির যদি কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে আমরা আবার বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই।’
মন্তব্য চালু নেই