প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে শরীরের এই স্থানে

মানুষের ছোট্ট নাভির ভেতরে বাস করে শত শত জীবাণু – একটি গবেষণায় এমনটিই জানা গেছে। নাভি প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল। এতে ৬০ প্রজাতির ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ইষ্ট থাকে বলে জানা গেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রব ডান এর মতে, এই গবেষণায় একজন মানুষের মধ্যে গড়ে ৬০-৭০ প্রজাতির অণুজীব থাকতে দেখা যায়। তারা সাধারণ ভাবে ১৪০০ এর বেশি প্রজাতি খুঁজে পান যাদের প্রত্যেকের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য থাকে।

ডান এবং তার সহকর্মীরা নাভির ত্বক থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯১ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেন। এই গবেষণায় বিভিন্ন জাতিগত ব্যাকগ্রাউন্ডের এবং এমনকি বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধির অভ্যাসের বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গবেষকেরা স্যাম্পলের মধ্যে শুধু ব্যাকটেরিয়াই নয় বরং ফাঙ্গাস ও ইষ্ট দেখতে পান। বিজ্ঞানীরা কালচারের মাধ্যমে এই প্রাণীর কার্যকারিতা নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে প্রতিটা প্রজাতির জন্যই ডি এন এ সিকোয়েন্স প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিক ফলাফলে এটাই নির্দেশ করে যে, জনপ্রতি প্রাণীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। এখন পর্যন্ত কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি কেন এতোটা পার্থক্য দেখা দেয়।

অনুসন্ধানকারীরা সবশেষে এটাই বলেন, বেশিরভাগ মানুষের নাভিতে একই ধরণের জীবাণু থাকে এবং কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বিরল প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকে।

অনুসন্ধানকারীরা নাভি নিয়ে গবেষণা করতে যেয়ে দেখেন যে, নাভি বিভিন্ন অণুজীবের পোতাশ্রয় হিসেবে কাজ করে। তারা গোসল করা, লোশন লাগানো, অতিবেগুনী রশ্মি এবং আরো কিছু বিষয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয় না।

এটা জানার পর বেশিরভাগ মানুষই নাভি পরিষ্কারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন হবেন। শরীরের উপরের অংশে এই জীবাণুগুলোই বেশি থাকে এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারাই প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের প্রাথমিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। তারা সেনাবাহিনীর মত কাজ করে আমাদের ত্বকে বাস করার মাধ্যমে। তারা যখনই কোন নতুন প্যাথোজেন খুঁজে পায় তখনই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। যারা ত্বকের এই জীবাণুগুলোকে ধুয়ে ফেলেন তাদের মারাত্মক ধরণের ত্বকের ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

নটর ডেম ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এলিজাবেথ আর্কি এবং তার সহকর্মী কেভিন থাইস এক গবেষণায় মানুষ এবং অনুরূপ প্রাণীদের জীবাণুর সম্প্রদায় নিয়ে বিশ্লেষণ করে পান , পোশাকের পরিবর্তন এসব জীবাণুতে পরিবর্তন আনতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, মানুষের বগলে স্টেরয়েড এবং অন্যান্য ন্যাচারাল কেমিক্যাল প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। এই যৌগগুলোই ব্যাকটেরিয়ার বিপাকের প্রাথমিক পণ্য। যা সকল ধরণের গন্ধ বৃদ্ধি করতে পারে এবং পারস্পরিক আচরণের উপর প্রভাব ফেলে।

করিনেব্যাক্টেরিয়াম টেস্টোস্টেরনের বিপাকের মাধ্যমে ইউরিনের মত গন্ধ উৎপন্ন করে। চর্বি এবং ঘামের বিপাকের ফলে পেঁয়াজের মত গন্ধ উৎপন্ন হয়। এই গবেষণা মতে ব্যাকটেরিয়া শক্তিশালী গন্ধ তৈরি করতে পারে। বগলের গন্ধ মানুষকে চেনার একটি নিদর্শন হিসেবে ব্যবহার হয়।



মন্তব্য চালু নেই