পোশাক খাতে বিশ্বাসযোগ্যতা, নিরাপত্তার প্রয়োজন : বিশ্বব্যাংক
দক্ষিণ এশিয়ার পোশাক খাতের বড় রফতানিকারক দেশ হলো বাংলাদেশ। এ খাত থেকেই দেশে মোট চাহিদার ৬.৪ শতাংশ পূরণ হচ্ছে। এই অবস্থান ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন উৎপাদনশীলতা, পণ্যের মান, বিশ্বাসযোগ্যতা, ভাল নিরাপত্তা পরিবেশ এবং অন্যান্য কমপ্ল্যায়েন্স নীতিমালার উন্নয়ন ঘটাতে হবে বলে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে।
সোমবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের পোশাক খাতের উপর বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, মার্কিন বাজারে চীনের পণ্যে দাম ১০ শতাংশ বাড়লে বাংলাদেশে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কর্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তবে এজন্য বাংলাদেশকে তৈরি পোশাকের উৎপাদনশীলতা, পণ্যের মান, বিশ্বাসযোগ্যতা, উন্নত কর্ম পরিবেশ এবং অন্যান্য কমপ্ল্যায়েন্স নীতিমালার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
গবেষণায় বলা হয়, চীনের পরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের মধ্য সবোর্চ্চ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। এশিয়ায় চীন একক হিসাবে ৪১ শতাংশ তৈরি পোশাক রফতানি করে থাকে। এর পরের অবস্থান বাংলাদেশর ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া ভারত সাড়ে ৩ শতাংশ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা রফতানি করছে ১.২ শতাংশ করে এবং অন্যান্যরা করছে ৪৬.৭ শতাংশ। এ হিসাবে বাংলাদেশ হলো এ অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানির হার বাংলাদেশের সামান্য বেড়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে। বিশ্বক্রেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো এখানে নন কস্ট ফ্যাক্টরগুলোর উন্নতি ঘটাতে হবে। সফলভাবে এ খাতে সংস্কার কার্যক্রম বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে ও অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের মোট রফতানির ৮৩ শতাংশ আসছে পোশাক রফতানি থেকে। স্থানীয় কোম্পানির অধীনে এই শিল্প। কিন্তু সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কেন্দ্রীয়ভাবে এই শিল্পে ভূমিকা পালন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে ড. মসিউর রহমান বলেন, শ্রমিকের কম মজুরি ২ থেকে ৩ বছর বেশি সময় সুবিধা দেবে না। ভবিষ্যতে বিশ্ব বাজারে টিকতে হলে অন্যান্য বিষয়গুলো ভাবতে হবে। শ্রমিকের অদক্ষতা পূরণে কাজ করতে হবে। সরকার পলিটেকনিকসহ বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার প্রণোদনার ব্যবস্থা করে বেসরকারি খাতের উচিত হলো সরকারি উদ্যোগ খাতে বাস্তবায়ন হয়। দক্ষতার কত প্রয়োজন এ বিষয়ে তথ্যেও ঘাটতি রয়েছে। এখানে বিদেশিরা অনেক বেশি বেতনে পোশাক খাতে চাকরি করছে। এই মানসিকতার পরিবর্তন করে শ্রমিকের দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে।
ড. জায়েদ বখত বলেন, বিশ্ব ব্যাংক বলছে, কারখানায় কর্ম পরিবেশ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে কর্ম সংস্থান কিভাবে বাড়বে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নারীদের ক্ষমতায়ন সুযোগ রয়েছে এই খাতে। এজন্য বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তবেই মধ্য আয়রে যে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে তা অর্জন হবে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিও ফান বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর ২ মিলিয়ন মানুষ শ্রম বাজারে প্রবেশ করেছে। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা খুবই কষ্টকর ও চ্যালেঞ্জের বিষয়। তবে পোশাক খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, নারী শ্রম শক্তির একটি বড় অংশ তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে যুক্ত। নারীর ক্ষমতায়নে পোশাকের দাম বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে ভ্যালু চেইন এবং বেটার কর্মসংস্থান তৈরিতে বেশ কিছু বাধাঁ রয়েছে- এগুলো হচ্ছে রফতানি বাধা, সামাজিক স্টান্ডার্ড ইত্যাদি।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর কারখানা নিরাপত্তা একটি বড় বিষয় হয়ে সামনে এসেছে। চীন বিশ্বে পোশাক রপ্তানি করছে ৪০ শতাংশ আর বাংলাদেশ মাত্র ৬ শতাংশ বাজার দখল করেছে। এর মধ্যে একটা বড় গ্যাপ রয়েছে। চীনে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শ্রমের মজুরি বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে গত দশ বছরে ৩ বার শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে। কিন্তু তারপরও কাঙ্খিত হারে বাড়েনি।
তিনি বলেন, বাজার ও পণ্য বহুমূখী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে দেখা যায় ভারত ও ভিয়েতনাম মার্কিন বাজারে জিরো ট্যারিফ সুবিধা ভোগ করে, যেখানে বাংলাদেশকে ১৫ শতাংশ ট্যারিফ দিয়ে রপ্তানি করতে হয়। এটা বৈষম্যমূলক।
ড. কে এ এস মুর্শিদ বলেন, পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার এবং বেতন বৈষম্য নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরাপত্তা এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা।
মন্তব্য চালু নেই