পোল্ট্রি শিল্পে লুটপাট বন্ধ করুন

আজকাল পোল্ট্রি সেক্টরে একদিনের বয়লার বাচ্চা, খাদ্য ও ঔষধের দাম দিন দিন যেভাবে বেড়ে চলছে-এটাকে প্রায় এক ধরনের লুটপাটই বলা যায় এবং এ লুটপাট অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে দেশের ক্ষুদ্র খামারিরা স্ব-উদ্যোগে এ ব্যবসা শুরু করেন। তখন বাংলাদেশ বিমানের হ্যাচারী থেকে কিছু বাচ্চা সরবরাহ করা হত। তারপর কিছু বাচ্চা আসা শুরু হয় ভারত থেকে। খাদ্যের কোন মিল কারখানা ছিল না তখন। খামারিরা তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জ্ঞান দিয়ে বিভিন্ন পন্যের মিশ্রনে মুরগীর খাদ্য তৈরি করত। ধীরে ধীরে যখন ব্রয়লার মুরগীর চাহিদা দেশে বৃদ্ধি পেতে শুরু করল তখন কাজী ফার্ম গাজীপুরে ১৯৯৩ সালে মাসে আট হাজার বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি হ্যাচারী প্রতিষ্ঠা করে। তারপর ধীরে ধীরে দেশী-বিদেশী অনেক বিনিয়োগকারী এ খাতে বিনিয়োগ শুরু করেন। এখন কাজী ফার্মই প্রতি সপ্তাহে ৩৫ লক্ষ বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে। নারিষ, সিপি, আফতাব ও অন্যান্য হ্যাচারী নিলে প্রতি সপ্তাহে প্রায় এক কোটি দশ লাখ বাচ্চা উৎপাদন করে। শুধু তাই নয় এই খাতে লোভনীয় লাভ দেখে নিজেরা খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও বয়লার মুরগীও পালন শুরু করেছে। যাদের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি মাসে প্রায় ৪০ লাখ মুরগী। আরও পরিতাপের বিষয়, ক্ষুদ্র খামারগুলো বন্ধ করে বয়লার মুরগীর বাজার পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য তারা বিভিন্ন অপকৌশল করে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র খামারীরা অনেকেই তাদের পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছে- এখন যারা এই পেশায় আছে-তাদের অনেকেই এজেন্টের কাছে ঋনগ্রস্থ এবং অন্যকিছু করার বয়স ও সার্মথ্যও নেই এবং এমনকি মাছ ধরার ট্রলারে চড়ে কোন দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাগরে ডুবে মরবে সেই সার্মথ্যও নেই তাদের। ২০০৮-২০০৯ সাল থেকে ১দিনের বাচ্চা ও খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে করে ক্ষুদ্র খামারিদের আর টিকে থাকা সম্ভব নয়। ব্রয়লার মুরগি ৩০-৩২ দিন পালন করার পর ১৪০০-১৫০০ গ্রাম হলে বিক্রি করা যায় এবং এই ৩০-৩২ দিনে প্রতিটি মুরগীর পেছনে বাচ্চার দাম ছাড়াই খরচ হয় প্রায় ১৫০ টাকা। এর সাথে বাচ্চার দাম আজকে (১৬-৭-১৫ তারিখে) ৭৫ টাকা যোগ করলে দাড়ায় ২২৫ টাকা, তাছাড়া ৫% থেকে ১০% সাধারণ মর্টালিটি ধরলে প্রতিটি মুরগীর খরচ আরো ২০/২৫টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়ায় ২৪৫/২৫০টাকা। অথ্যাৎ একজন ক্ষুদ্র খামারীর উৎপাদন খরচ ধারায় প্রায় ১৬০টাকা কেজিরও বেশী। এই ব্যাপারে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট সরকারের মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে অনেক অভিযোগ করা হয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। একবার ২০১০ সালে আক্টোবর মাসে ব্রিডার এসোসিয়েশনের নেত্রীবৃন্দ তৎকালীন প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে একদিনের বাচ্চা ৩০/৩২ টাকা বিক্রি করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু চতুর ব্রিডার এসোসিয়েশনের নেতারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদলতে রিট করে মন্ত্রীর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয় এবং নিজেদের ইচ্ছামত দাম বৃদ্ধি করে বাচ্চা বিক্রি করতে থাকে। মাত্র ৮-১০টি হ্যাচারীর মালিকের কারণে আমাদের প্রায় ২ লাখ খামারীর পরিবার আজ এক মারাত্মক পরিস্থিতির স্বীকার। তা থেকে পরিত্রান পাওয়া জরুরি বলে মনে করছি। এব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

কাজী মুস্তাফা কামাল
সভাপতি
দাউদকান্দি উপজেলা পোল্ট্রি খামারী সমিতি



মন্তব্য চালু নেই