পেরে উঠবেন তো মুস্তফা কামাল?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বার্থ রক্ষায় আইসিসিতে শ্রীনিবাসনের অন্যায় আধিপত্যের বিরুদ্ধে একরকম লড়াইয়ের ঘোষণা দিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার সঙ্গে পুরো দেশ। আছেন আমাদের ক্রিকেট ভক্ত প্রধানমন্ত্রীও। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে আইসিসির প্রেসিডেন্ট আ হ ম মুস্তফা ঠিক পেরে উঠবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
২০১২-২০১৪ পর্যন্ত সহ-সভাপতি থাকার পর ২০১৪ সালের জুনে আইসিসির প্রেসিডেন্ট হন। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যারপরনাই খুশি আ হ ম মুস্তফা কামাল সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন এবং চেয়ারম্যান শ্রীবিনাসনের সঙ্গে ভালো একটা কম্বিনেশন গড়ে তোলার কথা। যাতে করে বিশ্ব ক্রিকেটকে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়। এই আট মাসে তাঁর পক্ষে কি সেটা করা সম্ভব হয়েছে? উত্তরটা অবশ্যই, না। বরং এই সময়ে তিনি ভালো করে চিনেছেন শ্রীনিবাসনকে। চিনেছেন তার আজ্ঞাবহ হয়ে যাওয়া ডেভ রিচার্ডসনকে। জেনেছেন, আইসিসিকে কিভাবে নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার করছে ভারত। যেমনটা জাতিসংঘকে ব্যবহার করে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুঝেছেন, শ্রীনিবাসনের ভারতের দাপটের কাছে নতী স্বীকার ছাড়া আর কিই বা করার আছে তাঁর। এক পারেন আইসিসির এই দুষ্ট চক্র থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে!
ডেভিড রিচার্ডসনের আগে আইসিসির প্রধান নির্বাহী ছিলেন হারুন লরগাত। দক্ষিণ আফ্রিকান এই চাটার্ড অ্যাকাউটেন্ট ভদ্রলোক মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলেন না। তিনি ভারতের স্বার্থে ব্যবহৃত হতে চাইতেন না। ভারত তাঁর উপর বিরক্ত ছিল ঠিক ঐ কারণেই। শ্রীনিবাসন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ডের উপর চাপ দিলেন, লরগাতকে এখান থেকে নিয়ে যাও অন্য কাউকে দাও। নতুন নির্বাহী হলেন ডেভিড রিচার্ডসন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলা এ ভদ্রলোক লরগাতের মতো স্পষ্টবাদী নন। কাজ করেন চেয়ারম্যান শ্রীবিবাসনের আজ্ঞাবহ হয়ে। এমন কি শ্রীনিবাসনের কুখ্যাত ‘তিন মোড়ল’ এর ফর্মূলা নিয়েও কোনো কথা শোনা যায়নি তার মুখ থেকে।
সেই রিচার্ডসনের কাছ থেকে কি আশা করবেন? একজন বেতনভুক কর্মকর্তা হয়েও তারই প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করার সাহস কোথায় পান, তা সবার জানা। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে বাজে আম্প্যায়ারিং নিয়ে হতাশ আইসিসি প্রেসিডেন্ট মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘আম্পায়ারদের কোনো কোয়ালিটি ছিল না। আইসিসির পরের সভায় এ ব্যাপারটা আমি তুলব। ইতিবাচক পদক্ষেপ না নিলে প্রয়োজনে আমি পদত্যাগও করতে পারি।’
প্রেসিডেন্টের এমন কথার প্রতিক্রিয়া প্রেস রিলেজ করে জানানো হলো! যেটা না করলেও পারতেন ডেভ রিচার্ডসন। এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়াও যদি কেউ জানতে চান, তাহলে তাকে ‘নো কমেন্টস’ স্ট্রাটেজিতে থাকাই দরকার ছিল। অন্তত আইসিসির ভাবমূর্তির খাতিরে হলেও। কিন্তু সেটা না করে তার প্রেসিডেন্টরই সমালোচনা করে প্রেস রিলিজ করে ফেললেন। রাখলেন নতুন নজীর।
এটা যে শ্রীনিবাসনের ইশারাতেই হয়েছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হয়নি। ‘আইসিসি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড হয়ে গেছে’ মুস্তফা কামালের মারাত্মক সত্য কথাটা নিশ্চয়ই শ্রীনিবাসনের লেগেছে। যে কারণে ডেভ রেচার্ডচনকে দিয়ে দিয়ে কাজটা করিয়েছেন শ্রীনিবাসন।
সত্য কথা বলার সাহস সবার থাকেনা। মুস্তফা কামাল বললেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দারূণ ক্রীড়াপ্রেমী, দেশপ্রেমী এবং সাহসী। প্রতিটা বাংলাদেশী এবং মুস্তফা কামালের মতো তিনিও আম্পায়ারের ‘চুরি’তে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ। কড়া প্রতিবাদ করেছেন তিনিও।
আইসিসির মিটিংয়ে মুস্তফা কামাল বিষয়টা তুলেও কিছু করতে পারবে না- এটা নিশ্চিত। শক্তিধর শ্রীনিবাসনের সঙ্গে তার পেরে ওঠার কথা নয়। মুস্তফা কামালের উপর এখন হয়তো অনেক চাপও আসবে। নানা ষড়যন্ত্রও হতে পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়েও। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাশে তাই নিরন্তর থাকতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।
মন্তব্য চালু নেই