তৎপর হাসিনা, কী করবেন খালেদা?

সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তৎপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম এ তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাও করা হয়েছে৷ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন৷

এদিকে বিএনপি প্রার্থী না দিলে হাতছাড়া হয়ে যাবে তিন সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন হিসাব-নিকেশ চলেছে। নির্বাচন কমিশন এই তিনটি সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করে বুধবার৷

নির্বাচন হবে ২৮ এপ্রিল৷ তবে নির্বাচনের আগেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছিল শাসক দল আওয়ামী লীগ৷ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ঢাকার প্রয়াত মেয়র এবং আওয়ামী লীগ নেতা মাহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন৷

কিন্তু এ মনোনয়ন নিয়ে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে গৃহদাহ৷ ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মিরপুরের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার৷ আর ঢাকা দক্ষিণে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন পুরান ঢাকার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. সেলিম৷ তারা দু’জনই প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন৷ আওয়ামী লীগ মনোনীত দু’জন মেয়র প্রার্থী তো মাঠে আছেনই৷

ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, এ নির্বাচন যেহেতু দলীয় ভিত্তিতে হয় না, তাই দলের মনোনয়নের কথা যারা বলছেন তারা ঠিক বলছেন না৷ তবে দল সমর্থন দেয়৷ আমি দলের সমর্থন পাব বলে আশাবাদী।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণের বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী মো. সেলিম বলেন, আমি আগে থেকেই নির্বাচনের মাঠে আছি৷ প্রচার-প্রচারণা এবং জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি৷ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না৷ জনসমর্থনই আমার প্রধান শক্তি৷ দল কাউকে মনোনয়ন দেয়নি দাবি করেন তিনি৷ বরং আমাকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে৷

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনীত ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে৷ অন্য কোনো প্রার্থী এলে আমার কোনো আপত্তি নেই৷ প্রায় এক যুগ ধরে আমি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি৷ জনগণের পাশে আছি, থাকব৷

উত্তরের প্রার্থী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হতে তত্‍পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন৷

এদিকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা ঢাকায় মেয়র প্রার্থী নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা শুরু করেছেন৷ জানা গেছে, আনিসুল হকের আওয়ামী রাজনীতির শক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা এবং ওয়ান ইলেভেনের সময় সাঈদ খোকনের বিতর্কিত ভূমিকা আলোচনায় আসছে৷

বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে যারা প্রার্থী হবেন তাদের কাউকেই না বলবে না আওয়ামী লীগ৷ তবে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলে ঢাকায় দুই মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নে আরো মনযোগী হবে আওয়ামী লীগ৷

অন্যদিকে চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম বিএনপি নেতা৷ গত নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তখনকার মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করেন৷

মহিউদ্দিন চৌধুরী এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থনে মেয়র পদে তার প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন৷ বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে বর্তমান মেয়র মনজুর আলম কী করবেন তা নিশ্চিত নয়৷ তবে তিনি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন না করেন তাহলে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দেবে৷ বেড়ে যাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

এদিকে মনজুর আলমের সমর্থকরা জানিয়েছেন, তিনি দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন৷ এমনও হতে পারে যে তিনি শেষ পর্যন্ত নাগরিক সমাজ বা অন্য কোনো ব্যানারে নির্বাচন করতে পারেন৷

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৬ জানুয়ারি থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চালিয়ে আসছে৷ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে অনড়৷ তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা তা স্পষ্ট নয়৷ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করতে হবে৷ তিনি শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম গণমাধ্যমকে বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার হতে আরো কয়েকদিন সময় নেবে।

শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া নির্বাচন থেকে সরে আসেন তাহলে খালি মাঠে গোল দেবে আওয়ামী লীগ। দেশের তিন সিটি করপোরেশন চলে যাবে আওয়ামী লীগের ঘরে। এমন এক সময় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে সরকার যে মুহূর্তে সরকার পতনে হার্ডলাইনে আছে বিএনপি। এ মুহূর্তে কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। তথ্যসূত্র : ডয়চে ভেলে



মন্তব্য চালু নেই