পেট্রোলবোমা নয়, মোমবাতির আগুনে দগ্ধ হয়েছিলো শিশুটি!
পেট্রল বোমায় দগ্ধদের দেখতে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ যে শিশুটিকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওই শিশুটি আসলে পেট্রল বোমায় দগ্ধ হয়নি, বরং মোমবাতির আগুনে দগ্ধ হয়েছিলো সে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারী বুধবার বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধ জুঁই আক্তারকে দেখে কান্না সংবরণ করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী।
বার্ন ইউনিটের রেজিস্ট্রারে দেখা গেছে, আড়াই বছর বয়সী জুঁই আক্তারের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর গ্রামে। ৫ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে বর্তমানে সে ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। ১.১.১৫ ইং তারিখে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়।
জানা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিশুটির অন্তসত্বা মা আয়েশা হরষপুরে নিজ গৃহে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিশুটিকে একা রেখে বাথরুমে যান। এসে দেখেন শিশুর গায়ে আগুন, সে চেঁচামেচি করছিল। এরপর প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় তাকে হরষপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। কিন্তু সংকটাপন্ন হওয়া সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল ও পরে ঢামেক বার্ন ইউনিটে আনা হয় ২ ফেব্রুয়ারি ভোরে। ঘটনার সময় তার বাবা জজ মিয়া বাড়িতে ছিলেন না।
এসব তথ্য পাওয়া গেছে জজ মিয়ার প্রতিবেশি শাহিদ সিরাজি, বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রব, হরষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মিয়ার কাছ থেকে।
আবদুর রব বলেন, বিজয়নগরে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো খবর নেই। প্রথমে আমাদের কাছেও জুঁইয়ের খবর আসে। পরে এটি তদন্ত করে নিশ্চিত হই জুঁই মোমের আগুনে দগ্ধ হয়েছে।
মো. শাহজাহান বলেন, শিশুটি মোমবাতির আগুনে দগ্ধ, তা গ্রামবাসী জানেন। এই ইউনিয়নে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় কোনো কিছু ঘটেনি। একটি মিছিলও হয় না, আর ককটেল বা পেট্রলবোমা বিস্ফোরণ তো দূরের কথা। প্রতিবেশি শাহিদ সিরাজিরও একই ধরনের কথা।
জানা যায়, ২ ফেব্রুয়ারি সকালে অস্ত্রোপচার করা হয় শিশুটির। এরপর নেয়া হয় আইসিইউ’র পাশ্ববর্তী পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে। সেখানে শিশুটির দেখাশোনা করছেন তার দাদি হেলেনা বেগম। অন্তঃসত্বা হওয়ায় তার মা ও বুদ্ধি বিবেচনা শক্তি হওয়ায় তার বাবাকে হাসপাতালে আনা হয়নি।
জুঁইয়ের দাদি বলেন, জুঁই পুড়েছে গ্রামের বাড়ি হরষপুরে, আর ঢামেক বার্ন ইউনিটে আনা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল থেকে। তিনি জানান, জুঁইকে বার্ন ইউনিটে এনেছে তার ছোট ছেলে মহিম। আর মহিম বলছেন- বার্ন ইউনিটে এনেছেন তার মা হেলেনা।
কিন্তু হরতাল-অবরোধের দগ্ধ হিসেবে কেন দেখানো হল? সিলেটের একটি ওয়ার্কশপের দোকানে কর্মরত মহিম বৃহস্পতিবার জানান, বার্ন ইউনিটে আনার কিছুদিন পর তিনি দেখতে আসেন এবং শুনতে পান ঢাকার একজন সিএনজি অটোরিকশা চালকের পরামর্শে এ কাজ করা হয়। চালক বলেছিলেন- হরতাল-অবরোধের কথা না বললে বার্ন ইউনিটে জায়গা পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে হরষপুর গ্রামের কয়েকজন বলছেন- গ্রামের কিছু ব্যক্তি তাদের পরামর্শ দিয়েছে হরতাল-অবরোধের কথা বললে কিছু টাকা পাওয়া যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। সে অনুযায়ী এই কাজ করা হয়। জুঁইয়ের দাদি এসব বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।
বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, তারা কেবল রোগীর নাম ঠিকানা ও দগ্ধের ধরণ লিখেন। কিন্তু কীভাবে, কোথায় হয়েছে তা লিখেন না। তবে হরতাল-অবরোধের বিষয় হওয়ায় তারা বাড়তি কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন। তবে যাচাই-বাছাই করেন না। জুঁইয়ের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, প্রথম আমাকে বলা হয়েছিল মেয়েটি ককটেল বিস্ফোরণে আহত। কিন্তু এ ধরনের কোনো আলামত দৃশ্যমান ছিল না। দেহে স্পিøন্টারের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আবার বলা হচ্ছিল- পেট্রলবোমা। তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু যাচাই করিনি ভয়ে। যদি আমার সন্দেহ ভুল হয় তাহলে আমার সমস্যা হবে নির্ঘাৎ এই ভেবে।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, রোগী কীভাবে, কোথায় পুড়েছে তা তদন্ত করে দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। রোগীরা যা বলেন আমরা তা লিখে চিকিৎসা দিই।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্দেশ দেয়ায় আমরা কেবল তথ্য সরবরাহ করেছি। চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায়।
সূত্র: আমাদের সময় ডট কম
মন্তব্য চালু নেই