পেটের দায়ে রিকশা চালাই, শিক্ষা আবার কি?

‘শিক্ষা দিয়ে কি হবে স্যার? আমি চেয়েছিলাম পড়ালেখা করতে কিন্তু পারিনি। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়ছিলাম মাত্র। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে আর পড়া হয়নি। বাবা থেকেও নেই, ছোট ভাই আর মাকে নিয়ে বাঁচার জন্য রিকশা নিয়ে জীবন যুদ্ধে নেমেছি। বসে থাকলে খাবার দিবে কে?’

বুধবার বিকেল ৫টার দিকে আলাপকালে কিশোর রিকশাচালক রাকিব এভাবেই তার জীবনের গল্প বলে এ প্রতিবেদকের কাছে। রাকিবের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার চরডমুরিয়া গ্রামে। বাবা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি। বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে জেল হাজতে। সংসারে মা এবং তার ৭ বছরের ছোট ভাই রয়েছে। তার বাবা জেলে যাওয়ার আগে থেকেই তাদের কোনো খোঁজ-খবর নিত না।

এছাড়া আরেক কিশোর রিকশাচালক তুহিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তুহিনের (১২) বাবার নাম রফিক মিয়া। তাদের বাড়ি রংপুর জেলায়। তার বাবা প্যারালাইসড হয়ে ঘরে বসা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদের সংসার চালাতেন। রংপুর থাকতে সে বিভিন্ন বাসের হেলপারি করতো। বাবার চিকিৎসা আর সংসার চালাতে তুহিন মুন্সিগঞ্জ শহরে এসেছে রিকশা চালিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য। তুহিন সাখারিবাজার এলাকায় রিপন মিয়ার গ্যারেজে থেকে ভাড়ায় রিকশা চালায়। প্রতিদিন তার আয় হয় ৩৫০-৪০০ টাকা। রিকশার মালিককে দেন জমা বাবাদ ২০০ টাকা। সে গ্যারেজের ফ্লোরে রাতে ঘুমায় বলে থাকার খরচ লাগে না। কিন্তু খাবার খান মেসে সেখানে মাসে তার খরচ দিতে হয় ১ হাজার ৮০০ টাকা।

তুহিন জানান, সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৫-৬ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাই। লেখাপড়া করোনি কেন? স্যার পেটের দায়ে রিকশা চালাতে মুন্সিগঞ্জ শহরে এসেছি। পড়ালেখা করলে আমার বাবা-মাকে দেখবে কে? গাড়ি চালাই টাকা পাই। সেখানে শিক্ষা আবার কি? একথা বলার পর বলে, স্যার আমার সময় নষ্ট করবেন না প্যাসেঞ্জার লইতে হইবো বলে চলে যান তুহিন।

মুন্সিগঞ্জে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। রাস্তা-ঘাটে আজকাল অল্পবয়সী ছেলেদের রিকশা চালানোর মতো কঠিন সব কাজে করত দেখা যায়। যে বয়সে তাদের হাতে কলম আর বই থাকার কথা, সেই বয়েসে নেমে পরে রিকশা চালানোর মতো কঠিন কাজে।

মূলত শিশু শ্রমিকরা তাদের নিজেদের খাওয়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্যই লেখাপড়ার পরিবর্তে এ ধরনের পেশায় জড়াচ্ছে। দেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামো মজবুত না হলে সহজে এ সমস্যার মোকাবেলা করা কঠিন হবে । তাই তাদের পড়াশুনার পাশাপাশি আয়মূলক কাজের ব্যবস্থা করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ জন্য সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই