পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে ২ দানব ধূমকেতু

একটা নয় দু’টি। চেহারায়ও রীতিমতো দৈত্যাকার ধূমকেতুগুলো ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। একই সঙ্গে ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ৫০ হাজার কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে আসছে ধূমকেতুগুলো।

একটা পৃথিবীর ঘাড়ের কাছে এসে পড়বে ২১ মার্চ। অন্যটি পৃথিবীর নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে যাবে তার পরের দিনই অর্থাৎ ২২ মার্চ। গত আড়াইশো বছরে কোনো ধূমকেতু পৃথিবীর এতো কাছে আসেনি। একটা ধূমকেতুর নাম- ‘252P/LINEAR 12’। তার দোসরটির নাম-‘P/2016-BA-14’।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে কখনো ‘দোসর’কে সঙ্গে নিয়ে কোনো ধূমকেতু আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহের দিকে ধেয়ে আসেনি। দু’টো ধূমকেতুই আসছে অনেক অনেক দূর থেকে। আমাদের এই সৌরমণ্ডলের একেবারে শেষ প্রান্তে থাকা ‘উরট ক্লাউড’-ই তাদের আঁতুড়ঘর।

প্রথমে যে ধূমকেতুটি পৃথিবীর ঘাড়ের কাছে এসে পড়বে, সেটি ২১ মার্চ পৃথিবী থেকে ৩২ লাখ ৯০ হাজার মাইল বা ৫৩ লাখ কিলোমিটার দূরে থাকবে।

বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’র অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্ত বলেন, ‘’পৃথিবী থেকে তার একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের দূরত্ব যতোটা, তার চেয়ে ১৪ গুণ দূরে থাকবে প্রথম ধূমকেতুটি। কিন্তু তার পিছু পিছুই ধেয়ে আসছে আরো একটি ধূমকেতু।’

দ্বিতীয়টি যে প্রথম ধূমকেতুটির দোসর, তা আগে বুঝে উঠতে পারেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারা ভেবেছিলেন, ওই মহাজাগতিক বস্তুটি হয়তো কোনো গ্রহাণু। কিন্তু পরে তাদের ভুল ভাঙে। মাস দু’য়েক আগে হাওয়াইয়ে প্যান-স্টারস অবজারভেটরি থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, ওই মহাজাগতিক বস্তুটির একটি লেজও রয়েছে ধূমকেতুর মতো।

তারপর হিসাব কষে দেখা যায়, ওই দ্বিতীয় ধূমকেতুটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এসে পড়বে ২২ মার্চ। পৃথিবী থেকে ধূমকেতুটি থাকবে ২১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৩ মাইল বা ৩৫ লাখ কিলোমিটার দূরে। মানে চাঁদ আমাদের চেয়ে যতোটা দূরে রয়েছে, তার চেয়েও নয় গুণ বেশি।

এর আগে ১৭৭০ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এসেছিল ‘D/1770-L1-Lexell’ নামে একটি ধূমকেতু। ওই বছরের জুলাইয়ে ধূমকেতুটি মাত্র ২৩ লাখ কিলোমিটার দূরে ছিল পৃথিবী থেকে। সেই ধূমকেতুটি এতোটাই কাছে এসে পড়েছিল পৃথিবীর, যে তার মাথাটাকে পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে প্রায় চার গুষ বড় চেহারায় দেখেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী চার্লস মেসিয়ার।

‘টেম্পল টাট্ল’ নামে একটি ধূমকেতু ১৩৬৬ সালের অক্টোবরে একেবারে পৃথিবীর কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছিল। ওই সময় আমাদের এই গ্রহটি থেকে ওই ধূমকেতু ছিল চাঁদ যতোটা দূরে রয়েছে, তার চেয়ে প্রায় নয় গুণ বেশি দূরত্বে।

তবে সুজন সেন বলছেন, ‘যতোই কাছে আসুক ধূমকেতু দু’টি, সেগুলো আমাদের থেকে এতোটাই দূরে থাকবে যে, খালি চোখে তাদের দেখা যাবে না। তবে মহাকাশে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মতো শক্তিশালী টেলিস্কোপ থাকায় সন্দেহাতীত ভাবেই ওই ধূমকেতু দু’টিকে অনেক ভালোভাবে দেখা যাবে।’



মন্তব্য চালু নেই