সাংবাদিক শিমুল হত্যা

পুলিশ নিষেধ করার পরেও গুলি করেন মেয়র

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মীরুকে গুলি করতে নিষেধ করেছিল স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা। এমনকি তাকে বাসা থেকে বের হতেও বারন করা হয়েছিল একাধিকবার। তারপরেও নিজের শর্টগান থেকে গুলি ছুঁড়েন তিনি।

শনিবার(৪ ফেব্রুয়ারি) এমন কথাই বলেছেন পুলিশের সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) আবুল হাসনাত। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে মেয়র হালিমুল হক মিরুকে আমি বার বার গুলি করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু মেয়র নিষেধ সত্বেও একাধিক গুলি ছুঁড়তে থাকেন।

আবুল হাসনাত বলেছেন, ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মেয়র হালিমুল হক মিরুর ব্যক্তিগত শর্টগান থেকেই গুলি করা হয়েছে। তার বাড়ি থেকে গুলির খোসা পাওয়া গেছে। ৪৩ রাউন্ড গুলিসহ ওই শর্টগান জব্দ করেছে পুলিশ।

এদিকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাংবাদিক শিমুলের জানাযা নামাজ হয়।

জানাযা নামাজের পূর্বে এক বক্তব্যে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাসিবুর রহমান স্বপন বলেছেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেছেন-মেয়র মীরুকে বারন করার সত্বেও মীরু সরাসরি গুলি করে। আমি মনে করি এটা প্রমানিত হওয়ার আর কিছু নাই। কারণ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে বাঁধাগ্রস্ত করে। গুলি করতে তাকে বারন করে। তার পরও সে গুলি করে। তখন সাংবাদিক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, আমি আশা করি দ্রুত বিচারে মামলাটি নেয়া হোক। এবং আসামী যেই হোক যতই ক্ষমতাশালী হোক অচিরেই তাকে গ্রেফতার করা হোক। আইনের দৃষ্টিতে তার বিচার হোক। আইন সচিবের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, মানুষের স্বার্থে এই খুনিদের যাতে সঠিক বিচার হয় তাতে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য।

প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টার দিকে মেয়র মীরুর ছোট ভাই হাসিবুল হক পিন্টু শাহজাদপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধোর করেন। পরে মেয়রের বাসা থেকে পুলিশ পিন্টুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এদিকে বিজয় মাহমুদকে মারপিটের ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে তার সমর্থকরা। মিছিলটি মেয়রের বাসার সামনে পৌঁছালে মিছিল থেকে ঢিল মারা হয় বাসার দিকে।

পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে এসময়ে কয়েকজন মিছিলকারী পুলিশকে সহযোগিতা করে। তারা মিছিল নিয়ে ফিরে যাওয়া শুরু করে। এরপরেই বাসা থেকে বের হয়ে মেয়র তার ব্যক্তিগত শর্টগান থেকে মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি করেন।

এসময়ে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ হয়। ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়। গুরুতর আহত সাংবাদিক শিমুলকে প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তী সময়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।আশঙ্কাজনক অবস্থায় শুক্রবার দুপুরে বগুড়া থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে দুপুর ১টার দিকে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়কে সাংবাদিক শিমুল মারা যান। সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় শাহজাদপুর উপজেলায় শনিবার অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করলে তা সফলভাবে পালন করা হয়। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সবধরনের দোকানপাট ও যানবাহন বন্ধ ছিল।

মেয়র ও তার ভাইসহ ১৮জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম মামলাটি দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবনাথ বলেন, ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করেছে। বকি আসামিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই