পুলিশ ক্লান্ত, মিলছেনা বিশ্রাম

রবিবার বিকাল। রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউর পাশে দুইজন পুলিশ সদস্য রাস্তার পাশে একটি বেঞ্চে বসে পাহারা দিচ্ছিল। এদের মধ্যে একজন পথচারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল এবং অপর একজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল।

একজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি উঠে বসেন এবং তার চোখ ছিল লাল ও তার মুখে স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছিল। তিনি বলেন, আমি রাত ২টায় ঘুম থেকে উঠেছি এবং আমার বাসা মাদারটেক। সেখান থেকে ভোর ৫টায় মিরপুরে পুলিশ ওর্ডার ম্যানেজমেন্ট ডিউটিতে যাই। আমি যখন বাসায় ফিরি তখন ঠিক রাত ১০টা। তার মানে হল আমি বিশ্রাম নেবার জন্য মাত্র ৪ ঘণ্টা সময় পাই। গত ৬ জানুযারি থেকে চলছে এই অবস্থা। ওই দিন থেকেই বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট টানা আন্দোলনে আছে।

আন্দোলনকারীদের ধ্বংসাত্বক কর্মসূচির কারণে এ পর্যন্ত ৮১টি জীবন চলে গেছে। কথা প্রসঙ্গে ওই পুলিশ সদস্য বলছিলেন, টানা আন্দোলনের সময় ৮০ শতাংশ পুলিশ সদস্যই বর্তমানে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে যাচ্ছে।

তারা তাদের পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সময় পান না বললেই চলে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তারা কোনো ছুটি পাননা, নেই নির্দিষ্ট কোন ছুটির দিনও। চানখারপুল এলাকার আরেক পুলিশ সদস্য জানান তিনি অবরোধের পর থেকে ঠিক মত ঘুমাতে পারেননি এবং দায়িত্বপালনের সময় প্রায়শই তার ঘুমঘুম ভাব থাকে।

ঢাবি ক্যাম্পাসে দায়িত্বরত একজন সাব-ইন্সপেক্টর জানান, অনবরত কাজ করতে করতে ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ছি। ছুটির আবেদন করেও কোনো ছুটি মেলেনি। পল্লবী থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান তার পরিবার তার স্টেশন থেকে মাত্র ৫ কি.মি. দূরে থাকে কিন্তু গত মাসে তিনি মাত্র তিন বার তাদের সাথে দেখা করতে পেরেছেন। তিনি বলছিলেন এরপরও আমি মোটেই হতাশ নই।

তিনি বলেন, আমাদের এ ধরনের কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধরে রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যেতে প্রস্তুত।

দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুলিশের দৈনন্দিন কাজকর্ম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাটারা থানার পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিকী জানান, গত জানুয়ারিতেই থানায় ৩৭টি মামলা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ২৭টি মামলার অনুসন্ধান সমাপ্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আরও অধিক পরিমাণে মামলা তদন্ত করতে সক্ষম হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য মতে, ঢাকার ৪৯টি পুলিশ স্টেশনে গত ৬ মাসে মাসে ৯১৮টি মামলা জমা পড়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তারা মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন।

এর উদাহরণ স্বরূপ জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারিতে দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকতারুল আলমের কন্যা ফাহমিদা আকতার খুনের মামলা দায়ের করা হলেও ব্যস্ততার কারণে মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফাহমিদার এক আত্মীয় জানান পুলিশের বর্তমান ব্যস্ততার কারণে মামলাটি তিন দিন আগে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ.এস.এম শাহজাহান বলেন, অনবরত চাপের কারণে পুলিশের ব্যক্তিগত আচরণে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, পুলিশের জন্য এখনই তাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরী করা দরকার। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের কাজ করা খুবই দূরহ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পুলিশ হেডকোয়ার্টরের তথ্য মতে, দেশের ১৫ কোটি মানুষের জন্য মাত্র দেড় লাখ পুলিশ সদস্য রয়েছে। যার মধ্যে ২৭,০০০ শুধু ঢাকাতে রয়েছে। প্রদত্ত তথ্য মতে, দেশের ১০৩১ জন নাগরিকের জন্য মাত্র ১ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে।

পুলিশের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার মতে, ভারতে ৭২৮ জনে ১ জন, পাকিস্তানে ৬২৫ জনে ১ জন, মালয়শিয়ায় ২৪৯ জনে ১ জন, থাইল্যান্ডে ২২৮ জনে ১ জন করে পুলিশ সদস্য রয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, ৪০০ জনে ১ জন পুলিশ সদস্য থাকা উচিৎ। তিনি আরও উল্লেখ করেন আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক পুলিশ সদস্য রয়েছে। যদিও সরকার ৫০,০০০ পুলিশ সদস্য নতুন করে নিয়োগ দেবার ঘোষণা দিয়েছে যার মধ্যে ১০,০০০ পুলিশ কনস্টেবল চলতি বছরের মে মাসে নিয়োগ দেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।



মন্তব্য চালু নেই