পুলিশে আরো ৫০ হাজার নতুন নিয়োগ
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘সমাজ থেকে সকল প্রকার অন্যায় ও দুর্নীতি দূর করতে এ সরকারের গত মেয়াদে ৩০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চলতি মেয়াদে পুলিশবাহিনীতে নতুন নিয়োগ দেয়া হবে আরো ৫০ হাজার।’
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। তবে কবে নাগাদ এ নিয়োগ দেয়া হবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে তিনি কিছুই বলেননি। ‘মাদক ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে সুস্থ সাংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নাই’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রতিধ্বনি সাংস্কৃতিক সোসাইটি।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মাদক ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সর্দাই সচেষ্ট থাকে। কিন্তু লোকবল সঙ্কটসহ বেশকিছু সীমাবদ্ধতার কারণে পুরোপুরি এর প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার হবে। আর এ লক্ষ্যেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে গতবার পুলিশবাহিনীতে ৩০ হাজার নতুন নিয়োগ দিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দেয়া হবে ৫০ হাজার নতুন নিয়োগ।’
তিনি বলেন, ‘এতোদিন দেশে ফেনসিডিলের ব্যাপাকতা ছিল। আর এর পেছনে ছিল ভারত সীমান্তের ফেনসিডিলের কারখানাগুলো। কিন্তু এখন দেশে চলছে ইয়াবা। আর এর উৎপত্তি হচ্ছে মিয়ানমার সীমান্ত। কারণ ২০০৬ সালের পর সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইয়াবার কারখানা। যেখান থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসে লক্ষ লক্ষ পিছ ইয়াবা। আর আমাদের দেশ থেকে চলে যায় কোটি কোটি টাকা।’
নেশার কুফল বোঝাতে ধর্মকে টেনে এনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামে নেশাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর নেশা বলতে বোঝানো হয়েছে মদকেই। তাই দেশের যুবসমাজ নিষিদ্ধ নেশা থেকে বাঁচতে বেছে নিচ্ছে ফেনসিডিল, হিরোইন ও ইয়াবার মতো ভয়ঙ্কর মাদক। যা মুর্হূতেই ধ্বংস করে দিচ্ছে আামাদের যুব সমাজকে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম অভিযোগ করে বলেন, ‘সীমান্ত পাহাড়ার জন্য সেখানে বিজিবি, আনসার, পুলিশ এমনকি সেনাবাহিনীও রায়েছে, তারপরও কীভাবে দেশে মাদক ঢুকছে। তাহলে কী ভেবে নেবো প্রশাসনের অবহেলার কারণেই দেশে আজ মাদকের এই অবাধ প্রবাহ।’
তিনি মিডিয়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘সংসদ সদস্য হওয়ার আগে আমি ৮ বছর পুরান ঢাকার ওয়ার্ড কমিশনার ছিলাম। সে সময় যদি আমার এলাকায় কোনো যুবক মাদক বা সন্ত্রাসে আক্রান্ত হতো আমি তার ঘরে তালা লাগিয়ে দিতাম। পরে সেই যুবককে বেত্রাঘাত করে তার অভিভাবকের হাতে তুলে দিতাম। তখন ছিল শুধু বিটিভি। কিন্তু এখন দেশে অসংখ্য বেসরকারি মিডিয়া। আমি যদি কারো ঘরে তালা লাগাই সাঙ্গে সঙ্গে দেখা যাবে আমার নামে নিউজ হয়ে গেছে। কী হয়েছে, হাজী সেলিম সাধারণ মানুষের ঘরে তালা লাগিয়েছে।’
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দোলা সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘২০১০ সালে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসা ৪৬ হাজার বোতল ফেনসিডিল আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ২০১২ সালে এসে এই পরিমাণ হয়ে যায় ৫১ হাজার বোতল। তবে ২০১৩ সালে ফেনসিডিলের ব্যাপকতা সামান্য কমে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার বোতলে।’
ইয়াবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে বিভিন্ন অভিযানে ধরা পড়ে ১ কোটি ৮৬ হাজার ৪৪ পিছ ইয়াবা। ঠিক এর পরের বছর ধরা পরে ৩ কোটিরও বেশি পিছ ইয়াবা।’
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মাদক ও সন্ত্রাস আজ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। যার ছোবলে প্রতিদিনই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন প্রাণ। কিন্তু দেখা যায় যখনই এই মাদক ও সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা হয় তখনই একটি গোষ্ঠী দাবি করে সন্ত্রাস ও মাদকের জন্য পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকেরাই দায়ী। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। পুলিশেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। পুলিশ চাইলেই মাদক প্রতিরোধ করতে পারে না। কারণ আইনানুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব প্রতিকারমূলক, প্রতিরোধ নয়।’
সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষ, প্রসাসের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা রওশন আরা বেগম, স্বাধীনতা পরিষদের সভাপতি জিন্নাত আলী জিন্না প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই