শিশুকন্যাসহ গৃহবধূকে দু’দিন ধরে গৃহবন্ধী রাখার পর
পুলিশের সহযোগীতায় সাজানো মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ
প্রভাবশালী প্রতিপক্ষদের সাথে মোটাঅংকের আর্থিক যোগসাজশে দু’দিন ধরে গৃহবন্ধী রাখার পর পুলিশ দুই নারী সহ ৩জনকে সাজানো মামলা গ্রেপ্তার করেছে। সদর উপজেলার শেখেরহাট ইউনিয়নের শিরযুগ গ্রামে ২৯ জুলাই গ্রেপ্তার করে পুলিশ বৃহস্পতিবার তাদের ঝালকাঠি আদালতে সোপর্দ করেছে।
জানাগেছে, আনসার ব্যাটালিয়ানের সদস্য আবুল কালামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও আনোয়ার হোসেন হোসেন শিরযুগ গ্রামের মৃত: আশ্রাব আলীর দুই সন্তান হিসাবে ওয়ারিশ সূত্রে ৬শতাংশ জমির মালিকনা পায়। তবে ভাই আনোয়ার ঢাকায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করায় তার ভাগের সম্পত্তি বোনের নিকট বিক্রির শর্তে ষ্টাম্পে চুক্তি করে ২লাখ ৭০হাজার টাকা নিলে পুরো সম্পত্তির মালিক একটি টিনশেড দ্বিতল ঘর নির্মান করে মনোয়ারা বেগম তার শিশুকন্যা ও অসহায় বৃদ্ধা চাচী আনু বেগম কে নিয়ে বসবাস করে আসছে।
তবে কিছুদিন পূর্বে তার অজান্তে ভাই আনোয়ার তার অংশের জমি জ্ঞাতি আত্মীয় সামসু মীরের কাছে গোপনে বিক্রি করলে সে কৌশলে ২ ভাইবোনের ৬শতাংশ সম্পত্তির সম্পূর্ন অংশ ৬লাখ টাকা মূল্যে ক্রয় করেছে মর্মে দলিল করিয়ে নেয়। পরে গত ৩০ মার্চ থেকে সামসু মীর ও তার সহযোগীরা উক্ত ঘর-জমি দখলের উদ্দেশ্যে একাধিক বার হামলা-ভাংচুর ও মনোয়ারা বেগমকে আহত করে। এনিয়ে তারা ঝালকাঠি থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করলে উভয় পক্ষের সম্মতিতে তৎকালীন ওসি বিষয়টি সুরাহার সুযোগ দেন।
গত ৬ মে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুরুজ, তার বড়ভাই রুহুল মিয়া, ইউপি সদস্য আলমগীর খান ও স্থানীয় মিন্টু খান সহ গন্যমান্যরা শালীশ বৈঠকের মাধ্যমে ১ মাসের মধ্যে ৪ লাখ টাকা শালিশদারদের কাছে দিলে তারা মনোয়ারা বেগমকে ঘর ও জমি দলিল করে দিবেন বলে সিদ্ধান্ত দেন। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ পূর্বেই উক্ত টাকা সংগ্রহ করে মনোয়ারা বেগম ও তার পরিবার শালিশদারদের কাছে গেলে অজ্ঞাত কারনে তারা নানারকম তালবাহান শুরু করে। নিরুপায় হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সাধারন সদস্যের পরিবার হিসাবে গত ঈদের পূর্বে মনোয়ারা বেগম এ বিষয়ে ঝালকাঠি পুলিশ সুপার ও বরিশাল বেঞ্জের ডিআইজির কাছে আইনানুগ সহযোগীতা চেয়ে লিখিত আবেদন জানায়।
গ্রেপ্তারকৃত মনোয়ারা বেগম জানায়, গত ২৭ জুলাই প্রতিপক্ষ সামসু মীর তার সহযোগীদের ও শেখেরহাট তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাফর, থানার এসআই ফিরোজ সহ পুলিশ তাকে ঘর থেকে বেড় করে দেয়ার জন্য টানাহ্যাঁচরা করে ও বৃদ্ধ চাচী আনু বেগমকে বের করে দেয়। কিন্তু মনোয়ারা বেগম কে ঘর থেকে তাড়াতে না পেরে পুলিশের সহযোগীতায় প্রতিপক্ষরা ঘরের সকল দরজা তালাবদ্ধ করে দেয় ও লেট্রিনটি ভেংগে ফেলে। দু’দিন শিশুকন্যা সহ গৃহবন্ধী থাকার পর গত ২৯ জুলাই দুপুরে ঝালকাঠি থানার এসআই ফিরোজ সহ একদল পুলিশ ও প্রতিপক্ষ সামসু মীর ঐবাড়ীতে গিয়ে মনোয়ারা বেগম (৩৫) সহ তার চাচী আনোয়ারা বেগম আনু (৫৫) ও মোঃ মেহেদী (২১) কে আটক করে নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে এসআই ফিরোজ জানায়, গত ২৬ জুলাই থানায় দ:বি: ১৪৩/ ৪৪৮/ ৩৭৯/ ৪২৭/ ৫০৬ (২) ধারায় দায়েরকৃত মামলার (নং-২৮) আসামী হিসাবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাদী পক্ষ তালা খুলে দিলে তিনি ঘর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেছেন। তবে ২৮ জুলাই শেখেরহাট পুলিশ ক্যাম্পের এসআই জাফর জানিয়েছিল, এএসপি আফম আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে তিনি ও এসআই ফিরোজ মনোয়ারা বেগমের বাড়ীতে গেলেও সে ঘর থেকে বের না হওয়ায় তারা চলে আসেন। আর ঝালকাঠি থানার (ভারপ্রাপ্ত ওসি) ওসি তদন্ত আঃ সালাম জানায়, গত ২৭ জুলাই পুলিশ মনোয়ারা বেগমকে বিরোধীয় ঘর থেকে বের করে আনার চেষ্টা করলেও তিনি বের না হলে পুলিশ চলে আসে। পরে ২৯ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফিরোজ এজাহারভূক্ত আসামী হিসাবে তাদের ৩জনকে গ্রেপ্তার করেন।
এ ব্যাপারে গ্রেপ্তারকৃতদের স্বজন সহ বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, ২৭ জুলাই প্রতিপক্ষ সামসু মীর পুলিশের উপস্থিতিতে ঘরে তালাবদ্ধ করে দেয়ার পর মনোয়ারা বেগম দু’দিন কার্যত গৃহবন্ধী ছিলেন। কিন্তু ২৬ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকলে তখন কেনো পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলোনা। আসালে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পুলিশ কারসাজি করে (বেকডেট) পেছনের তারিখে এজাহার দেখিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এ অবস্থায় আনসার ব্যাটালিয়ানের সদস্যের নিরিহ পরিবারের উপর পুলিশের এধরনের অমানবিক ও বিতর্কিত আচরনের ঘটনাটি তদন্ত পূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসী উর্ধতন কর্তৃপক্ষে কাছে দাবী জানিয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই