পুলিশের ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরবে কে ?
এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে পারলে আসামি ধরতে পারবেন- সোর্সের দেওয়া এমন তথ্য পেয়ে রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে মিরপুরের দিকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি গাড়ি। দারুস সালাম এলাকায় পৌঁছাতেই ফটাস করে গাড়ির কারবুরেটর (পানির ট্যাংক) ব্লাস্ট হয়ে যায়। বিপাকে পড়ে টিম। অগত্যা কোনো উপায় না পেয়ে অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেন টিমলিডার পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এভাবে অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের ধরা কতটা কঠিন তা আপনিও বুঝতে পারছেন। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন চিত্র নয়, সারা দেশে পুলিশের অভিযানমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এখন ভরসা এ ধরনের ফিটনেসবিহীন গাড়িই। ফাঁড়ি থেকে শুরু করে মহানগর পর্যন্ত সব স্তরেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। জানা গেছে, শুধু পুলিশেরই নয়, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের গাড়ির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশই ফিটনেসবিহীন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এতে সহযোগিতা করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ভ্রাম্যমাণ আদালত, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান থেকে শুরু করে সব ধরনের অনিয়মে পুলিশকেই থাকতে হয় সামনের সারিতে। অথচ নিজেদের গাড়ির অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন। সেটা দেখবে কে?
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চাহিদার অর্ধেক গাড়িও পুলিশের নেই। সারা দেশে প্রায় ২ হাজার নিজস্ব গাড়ির মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ। এর মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কিছু বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। তাছাড়া ২ হাজার গাড়ির মধ্যে বেশির ভাগই ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড়। অন্যদিকে চাহিদা মেটাতে নেওয়া রিকুইজিশন করা গাড়ির অবস্থাও অভিন্ন। অনেক থানায় টেম্পো, লেগুনার মতো ভাঙাচোরা যানবাহনেও কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছে পুলিশ। ঢাকার বাইরে পুলিশ অবৈধ নছিমন, করিমন, ভটভটি পর্যন্ত ব্যবহার করছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ৪০টি টিমের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ৪০টি গাড়ি। আভিযানিক কার্যক্রমের জন্য রয়েছে আরও কয়েকটি মাইক্রোবাস। সেগুলোর অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির এক কর্মকর্তা আমাদের বলেন, রাস্তায় লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি দেখলেই মানুষ বোঝে এটা ডিবির মাইক্রোবাস।
একইভাবে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের দক্ষিণ বিভাগে চলছে ১৬৩টি মোটরসাইকেল ও ৫টি গাড়ি। এসব মোটরসাইকেলের বেশির ভাগের অবস্থাই শোচনীয়। ৫টি গাড়ির মধ্যে ৪টিই ফিটনেসবিহীন।
পুলিশের গাড়ির এমন অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের ডিসি খান মোহাম্মাদ রেজওয়ান আমাদেরকে বলেন, প্রত্যেক কর্মকর্তার নামে গাড়ি বরাদ্দ দিলে এর রক্ষণাবেক্ষণ অনেক ভালো হবে।
রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ৫টি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ৪টিই ফিটনেসবিহীন। তেজগাঁও থানা ছাড়াও রাজধানীর আরও বেশ কয়েকটি থানারও একই চিত্র পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ৪টি গাড়িই লক্কড়ঝক্কড়। এ সব গাড়ি নিয়ে অভিযান চালাতে গিয়ে দেখা যায়, অপরাধীদের গাড়ি অত্যাধুনিক। নানা কৌশল প্রয়োগ করে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতায় জিতে আসামি ধরতে হয় পুলিশকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনেক সময় ব্যস্ত সড়কে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি সরাতে গিয়ে ফিটনেসবিহীন রেকার বন্ধ হয়ে যায়। এতে যানজট আরও বেড়ে যায়।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (গণমাধ্যম) জালালউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, এটা ঠিক অপারেশনের কাজ করতে যে ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন তা পূরণ করতে পারেনি পুলিশ। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাড়ির একটা ঘাটতি রয়ে গেছে। গাড়ির সংকট অথবা গাড়ির কন্ডিশন খারাপের বিষয়টি মাঠপর্যায়ে সমস্যা হিসেবে সদর দপ্তরে আসে। বাজেটস্বল্পতার পরও যতোটুকু সম্ভব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গাড়ির বরাদ্দ দেওয়া হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের অন্য একজন কর্তা হাসতে হাসতে বলেন, ভাই আমার নিজের গাড়ির ফিটনেসওতো ঠিক নেই!
মন্তব্য চালু নেই