পুলিশের নাগালের মধ্যেই রয়েছে হাসনাত-তাহমিদ
হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাগালের মধ্যেই আছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রয়োজনে তাদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সোমবার তিনি এ তথ্য জানান।
মনিরুল ইসলাম বলেন, তাদের প্রথম দিকে আনা হয়েছিল সাক্ষী হিসেবে। তারা এখন আমাদের কাছে নেই। এখন তারা তাদের নিজ নিজ জায়গাতেই আছেন।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ নাগরিক নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত হয়। যদিও নিহত এক জঙ্গিকে ওই রেস্টুরেন্টের শেফ বলে দাবি করেছে তার পরিবার ও রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। অভিযানের পর ওই রেস্টুরেন্ট থেকে ৩২ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত জিম্মিদের মধ্যে হাসনাত করিম ও তাহমিদের রহস্যজনক আচরণের কারণে তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঘটনার কয়েকদিন পর হাসনাত ও তাহমিদকে ছেড়ে দেওয়ার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও তাদের অবস্থান জানা যায়নি। দু’জনের পরিবারের সদস্যরাও তাদের অবস্থান নিয়ে পরিষ্কার কোনও কথা বলছেন না।
সোমবার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের কাছে হাসনাত ও তাহমিদের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো যেকোনও কারণে তারা বাসায় অবস্থান না করে অন্য জায়গায় অবস্থান করছেন। তারা কোথায় আছেন, এটা মোটামুটি আমাদের ধারণায় রয়েছে। আমাদের ওয়াচের মধ্যেই আছে, সার্ভিলেন্সের ভেতরেই রয়েছে।
হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর একজন কোরিয়ান নাগরিকের গোপনে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর হাসনাত করিম ও তাহমিদের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষকের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। হলি আর্টিজানের জিম্মি ঘটনায় তাকে জঙ্গিদের কয়েকজনের সঙ্গে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাঁটতে ও কথা বলতে দেখা গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তাদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে তাদের আবারও আনা হবে। তারা আসবেন বলেও আমাদের কথা দিয়েছেন।
হাসনাত করিম ও তাহমিদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টির মধ্যেই অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ অনেকেই তাদের অবস্থানের বিষয়টি পরিষ্কার করার দাবি জানিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও নানারকম তথ্য পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিস্টর নাদিম কাদির আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন, হাসনাত করিমকে দুই-তিন সপ্তাহ আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে গত মঙ্গলবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হাসনাত করিম এখনও আটক আছেন এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এদিকে, মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এ রকম যে তারা আমাদের কাছেও নেই, আবার আমাদের ‘রিচে’র বাইরেও নয়। তারা হয়তো কিছু মানুষকে এড়িয়ে চলার উদ্দেশ্যেই কোনও জায়গায় রয়েছেন। তাদের ডাকলে আবার পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, হাসনাত করিমের বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও কিশোর বয়সে লন্ডনে চলে যান। লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি প্রকৌশল বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করার পর লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। এরপর কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর তিনি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালযয়ে যোগ দেন। হলি আর্টিজানের ঘটনার আগ পর্যন্ত তিনি নিজেদের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলেন।
এদিকে তাহমিদ বাংলাদেশের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের সন্তান। তিনি কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন। হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনার একদিন আগেই তিনি দেশে ফেরেন। ঘটনার দিন তিনি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই