পুরুষ নির্যাতন বদলে যাওয়া সমাজের নতুন ব্যাধি
(ডিসক্লেইমার: এ লেখাটি নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ে আমার লেখাগুলো “ব্যালান্স” করা কোন পপুলার আর্টিকেল নয়। গত কয়েক হাজার বছর ধরে ভয়াবহভাবে আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। নারী ও পুরুষ নির্যাতনের তুলনামূলক চিত্রে নারী নির্যাতন কয়েক হাজার গুণ বেশি হয় এবং অগ্রাধিকার হিসেবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধেরই প্রাধান্য পাওয়া স্বাভাবিক। তবে একটি নির্যাতন বেশি হয় বলে আরেকটি নির্যাতনের কোন অস্তিত্ব নেই, এমন ভুল ধারণা ভাঙতেই এ লেখাটির উৎপত্তি। আমার প্রোফাইলের নারী পুরুষ নির্বিশেষে এটি পড়ে দেখতে পারে।)
বসে ছিলাম উত্তরা অফিসে, অল্পবয়েসি একটি কিশোর আমার রুমে ঢুকে টাকা চাইল । একটু বিরক্ত হলাম, থানার ভেতরে ভিক্ষুক ঢুকল কিভাবে? বাইরের প্রহরীকে ডাকলাম, ঘটনা কি জানতে চাইলাম। প্রহরী ইতস্তত করছিল, ছেলেটি নিজেই বলে উঠল, স্যার, আমার বাবা এসপি ছিলেন।
এসপির ছেলে ভিক্ষা করছে?! মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠ। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম মর্মান্তিক কাহিনী। এই এসপি ভদ্রলোক ছিলেন অত্যন্ত সৎ, সরকারী বেতনের সীমিত অর্থে চলতেন কোনরকম দুর্নীতি না কর। একজন এসপি যেসব সুবিধা পান তাতে খুব ভালভাবেই পরিবার নিয়ে চলা সম্ভব, কিন্তু গলদ ছিল অন্য জায়গায়। এসপি সাহেবের স্ত্রী ছিলেন প্রচন্ড লোভী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী, নিত্যনতুন চাহিদা থাকত তা। অন্যান্য অসৎ অফিসারদের বৌদের দেখিয়ে প্রতিদিন কথা শোনাতেন সারাদিন ভয়াবহ পরিশ্রম করে ঘরে ফেরা স্বামীকে।
দিনের পর দিন এরকম চলতে থাকে, পুলিশের মত প্রচন্ড মানসিক চাপের চাকুরি বাইরে, ভেতরে অশান্তি। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন এসপি ভদ্রলো।
অত্যন্ত মর্মান্তিক এই ঘটনাটিকে আমি এক্সট্রিম বলব, কারণ এরকম আত্মহত্যা প্রতিদিন ঘটেনা। কিন্তু যে নির্যাতনের কথা আমি বললাম, সেটি আমাদের আধুনিক সমাজে প্রতিদিন ঘটে, আত্মহত্যা না করেও তিলে তিলে মর্মে মরে অসহায় পুরুষটি। আমার এক বন্ধু সেনাবাহিনীর দুর্ধর্ষ অফিসার, কমান্ডো সহ অন্যান্য সব মারাত্মক কোর্স করা। অসাধারণ ক্যারিয়ার বজায় রাখা আমার এই অসম্ভব হৃদয়বান বন্ধুটি প্রায় প্রতিদিন স্ত্রীর হাতে শারীরিক লাঞ্চনার শিকার হয়। আমি শুনে প্রথমে বিশ্বাস করিনি, হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। “ব্যাটা, তুই ছয় ফুট লম্বা কমান্ডো, একটা মেয়ে তোর গায়ে হাত দেয়?”
যুদ্ধক্ষেত্রে দুর্ধর্ষ আমার এই বন্ধুটি যা বলল তাতে আমার চোখেও পানি এসে গিয়েছিল।
“দোস্ত, তোর ভাবী জানে আমি কখনো নারী বা শিশুদের গায়ে হাত দিতে পারিনা। I am a true soldiar,I kill enemies, not women or children”
সে ধনীর দুলালী সুন্দরী, জীবনে তার কোন নিজস্ব এচিভমেন্ট নাই| তার লাইফের একমাত্র সেন্স অফ এ্যাচিভমেন্ট আমাকে ডমিনেট করা। বাইরে থেকে আমি ঘরে আসার পর শুরু হয় এটা সেটা নিয়ে আমাকে খোঁটা দেয়া, খোঁচাতে খোঁচাতে এক পর্যায়ে আমি যখন সহ্য করতে না পেরে ভেঙে পড়ি, তখন সে শান্ত হয়। আগে শুধু কথা কাটাকাটি হত, এখন আমার গায়েও হাত দেয়। এটা অফিসে জানালে কেউ বিশ্বাস করবেনা, উল্টো আমার চাকুরিতে দাগ লাগবে। আমার বাবা নেই, মায়ের বয়েস হয়েছে। মাকে এসব বললে তিনি মারাই যাবেন।”
সুখের কথা, আমার সেই বন্ধুটি ওই অসুস্থ্য সম্পর্ক থেকে তার সিও এর সহায়তায় বেরিয়ে আসতে পেরেছিল।
তবে সবাই এত সৌভাগ্যবান নন। সামাজিক লোকলজ্জা, চাকুরি, সন্তান ইত্যাদি কারণে জীবন্মৃত অবস্থায় দিন নিপাত করছেন বহু পুরুষ। মেনে নিচ্ছেন স্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতা, এমনকি অবৈধ সম্পর্কও। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল, এই সমস্যা নিরূপনে আমাদের কোন আইন নেই। নারী নির্যাতন আইন যেমন এক দিক দিয়ে বদমায়েশ পুরুষকে শায়েস্তা করে, এই একই আইনের অপব্যবহারের শিকার হয় শত শত নির্দোষ পুরুষ।
সামাজিক এই সমস্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারে:
1) Spouse পছন্দ করার সময় শারীরিক সৌন্দর্য সর্বস্ব ধনীর দুলালী অপদার্থ কাউকে দেখে গলে না গিয়ে তার নিজস্ব যোগ্যতা, মনমানসিকতা , আপনার সাথে খাপ খাবে কিনা এগুলো প্রাধান্য দিন। This is not a legal step, but this simple step can save you from all future legal troubles. “বিয়ের পরে ঠিক হয়ে যাবে” এটা অবাস্তব এবং মূর্খ ধারণা, কখনোই হয়না অতি রেয়ার এক্সেপশন ছাড়া। আর অপূর্ব চেহারার আড়ালে বিষাক্ত মাকড়সার মত কুৎসিৎ মন প্রায়শ:ই লুকিয়ে থাকে।
2) সমাজ দেখাতে নিজের সামর্থ্যের বাইরে কাবিনের টাকা ঠিক করেছেন কি মরেছেন। আপনার যা সামর্থ, তার বেশি এক টাকাও কাবিন করবেন না। বহু পুরুষ শুধু এই কাবিনের টাকা দেবার অক্ষমতার কারণে স্ত্রীর প্রকাশ্য পরকীয়া পর্যন্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়।
3) যদি মনে করেন আপনি নির্যাতিত হচ্ছেন এবং তার সংশোধনের কোন সম্ভাবনা নেই,আইনী প্রক্রিয়ায় সম্পর্কের ইতি টানার প্রস্তুতি নিন। সময় ও সুযোগ আসামাত্র এই অসুস্থ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন| উকিল এবং পুলিশি পরামর্শ নিন। অন্য পুলিশ না পেলে এই গরীবকে নক করুন, আমি আছি।
4) সমস্ত মনোযোগ দিয়ে নীচে যা লিখেছি পড়ুন:
খবরদার, কোন অবস্থাতে স্ত্রীর গায়ে হাত দেবেন না। স্ত্রীর গায়ে হাত দেয়ামাত্র আপনার প্রতি সমস্ত আইনী সহমর্মিতা আপনি হারিয়ে ফেললেন। আপনার স্ত্রীকে আপত্তিকর অবস্থাতেও যদি দেখতে পান, তবুও তাকে শারীরিক আঘাত করার কোন অধিকার আপনার নেই। স্ত্রীকে ভাল না লাগলে ডিভোর্স দিন, উত্তেজনার বশে শারীরিক আঘাত করামাত্র পুরো পরিবার সুদ্ধ জেইল খাটবেন।
গত পাঁচ হাজার বছরে আমরা পুরুষেরা নারীদের উপরে যে অত্যাচার করেছি এবং এখনো করছি, তার দায় মেটাতে আগামী পাঁচ হাজার বছর না হোক অন্তত পঞ্চাশ বছর নারীবান্ধব আইন থাকবে এবং সেটাই সমীচীন।
নারী পুরুষের পরিচয়ের ঊর্ধ্বে পারস্পরিক প্রেম ও মানবিকতাপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠুক আমাদের দেশে, এটাই প্রত্যাশা।
[ মাসরুফ হোসেন-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া ]
মন্তব্য চালু নেই