পুরুষের অজানা মরণ রোগ স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ ও পরীক্ষার ধরণ

চমকানোর কিছু নেই ৷ পুরুষেরও স্তন ক্যানসার হয় ৷ কিন্তু সমস্যা হলো পুরুষরা মনে করেন যে, কেবল নারীদেরই এই ক্যানসার হয় ৷ এ কারণে তারা এ বিষয়ে কিছুটা বেপরোয়া থাকেন ৷ নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করান না ৷ আর এই মনোভাবই ডেকে আনে মৃত্যু ৷

অনেকেই ভাবেন বংশে কারো ক্যানসার থাকলে, তবেই অন্যদের মধ্যে এটি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে ৷ প্যারাগুয়ের ৫৩ বছর বয়সি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসায়ী মিগুয়েল রেন ২০১২ সালে জানতে পারেন তাঁর স্তন ক্যানসার হয়েছে ৷ বংশে কারো এ অসুখটি না থাকায় এ ব্যাপারে একেবারে অসচেতন ছিলেন তিনি ৷

রেন তাঁর রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘বুক চুলকানো আমার একটি বদ অভ্যাসের মতো ৷ তাই একদিন চুলকাতে গিয়ে দেখলাম পোকাড় কামড়ের মতো এটা দাগ, কিন্তু কিছুদিন পর জায়গাটি শক্ত হয়ে যায় ৷”

প্রতি বছর জার্মানিতে অন্তত ৬০০ পুরুষ পরীক্ষা করান তাঁদের স্তন ক্যানসার হয়েছে কিনা ৷ অথচ প্রতি বছর জার্মানিতে ৭৪,৫০০ নারী এই পরীক্ষাটি করান ৷

জার্মান সোস্যাইটি অফ ইউরোলজি-র মুখপাত্র অধ্যাপক জাবিনে ক্লিস জানালেন, নারীদের তুলনায় পুরুষরা এই পরীক্ষাটি খুব কম করান ৷ প্রতি পাঁচ জনের একজন৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৪ সালের বিশ্ব ক্যানসার রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে যে ক্যানসারের হার দেখা যাচ্ছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৫ বছর বয়সের আগেই প্রতি পাঁচ জন পুরুষের একজনের মধ্যে এ ধরনের ক্যানসারের প্রবণতা দেখা যাবে ৷ আর প্রতি আটজনের মধ্যে একজন এই রোগে মারা যাবে ৷

বয়সের সাথে সাথে পুরুষদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে ৷ তবে এটা ঠিক যে তরুণদের ক্ষেত্রেও এ ঝুঁকি রয়েছে ৷ জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশেই নারীদের স্তন ক্যানসার শনাক্তের জন্য মেমোগ্রাফির সেবা থাকলেও পুরুষদের জন্য নেই ৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদনের সহ-সম্পাদক বার্নার্ড স্টুয়ার্ট বলেছেন, পুরুষদের জন্য এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত সরকারের ৷ সরকারকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি ৷

গবেষকরা এখনো বের করতে পারেননি ঠিক কি কারণে পুরুষরা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৷ ক্লিস জানান, বংশে কোনো নারী আত্মীয়ের স্তন ক্যানসার থাকলে অনেক সময় পুরুষের ক্যানসার হতে পারে ৷

এমনকি জীনগত রোগ ‘ক্লাইনেফেল্টার’ এর কারণেও অনেকের স্তন ক্যানসার হয়৷ পুরুষের শরীরে একটি অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোমের কারণে এই রোগটি হয়৷ এর কারণে পুরুষের স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা ১৫ থেকে ৫০ ভাগ বেড়ে যায় ৷
লক্ষণ:

স্তন ক্যানসার হলে যে চামড়া স্তনকে ঢেকে রাখে তার পরিবর্তন দেখা যায় ৷ চামড়া লাল হয়ে যায়, কুঁচকে যায়, তাতে ভাঁজ বা খাঁজ তৈরি হয়, স্তনবৃন্তের রঙের পরিবর্তন হয়, লালচে হয়ে যায় বা ভিতরের দিকে ঢুকে যায় এবং স্তনবৃন্ত থেকে রস ক্ষরণ হয় ৷
নিজেই পরীক্ষা করুন:

কেবল নারীদের স্তন ক্যানসার হয় – এই বদ্ধমূল ধারণার কারণেই অনেক পুরুষ দেরিতে চিকিৎসা শুরু করেন৷ টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন, অনলাইন এবং পত্রিকায় যতরকম প্রচারণা হয়, সবই নারী কেন্দ্রিক ৷

সেখানে বলা হয় প্রতিটা নারীর উচিত নিজেদের স্তন পরীক্ষা করা, সেখানে লক্ষণগুলোও বলা থাকে ৷ ক্লিস এর উল্লেখ করে বললেন, পুরুষদের সচেতন করতে ঠিক এই কাজটি শুরু করা উচিত৷

তিনি জানান, যদি কোনো পুরুষ দেখে তাঁর স্তনে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে বা শক্ত হয়ে যাচ্ছে, অথবা নিপল থেকে কোনো ধরনের রস বের হচ্ছে তাহলে তাঁদের সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত ৷

তবে ক্লিস এটাও বললেন, এসব লক্ষণ দেখা দিলে যে ক্যানসার হবেই এমনটা ভাবা উচিত না, কিন্তু এড়িয়ে যাওয়াও উচিত না৷ উচিত চিকিৎসককে দেখানো ৷ নারী ও পুরুষের চিকিৎসা পদ্ধতি একইরকম বলে জানালেন তিনি ৷



মন্তব্য চালু নেই