পুরুষেরা যেভাবে ‘মাইন্ড গেম’ খেলেন নারীদের সঙ্গে!

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী পুরুষের মাঝে স্বভাবতই আবেগ জিনিসটা একটু কম। তাই সম্পর্ক নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় নারীরা যতই পারদর্শী হোক না কেন, এখনো তারা পুরুষদের হারাতে পারেননি। হয়তো এই জন্যই সম্পর্ক নিয়ে ভাংআ গড়ার খেলা করতে বেশী পুরুষেরা পছন্দ করে। বেশিরভাগ পুরুষই নারীদের সাথে সম্পর্কের শুরু থেকেই অদ্ভুত কিছু গেম খেলা শুরু করেন। পুরুষেরা যে ‘মাইন্ড গেম’ খেলে থাকেন নারীদের সঙ্গে।

সবাই যে এমনটি করেন তা কিন্তু নয়। অনেক গেমই তারা সহজাত ভাবেই খেলে থাকেন। আবার, অদ্ভুত শোনালেও সত্যি যে, কিছু কিছু গেম ইচ্ছাকৃত ভাবেই নারীদের সাথে খেলে থাকেন পুরুষেরা। সঙ্গিনীর ওপর ক্ষমতা ফলানো, নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখা, বিয়ে থেকে পালিয়ে বেড়ানো, কমিটমেন্ট থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার মতো গেমও ছেলেরা খেলে থাকেন।

সেখানে নারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাইন্ড গেম খেলে থাকেন পুরুষকে নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য। কিন্তু পুরুষের মাইন্ড গেমটা অন্যরকম। তারা মাইন্ড গেম খেলে প্রথমে নারীকে পাওয়ার জন্য, এবং তারপর সম্পর্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য।

নিজেকে ‘সুপারম্যান’ হিসেবে উপস্থাপন করা
প্রায় সব পুরুষই নারীদের সামনে নিজেকে সুপারম্যান হিসাবে উপস্থাপন করতে ভালোবাসেন। সঙ্গিনীকে নিজের সম্পর্কে একটি ‘ম্যানলি ইম্প্রেশন’ দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। এর জন্য নানান রকম বানোয়াট কাহিনী শোনাতেও দ্বিধা করেন না তারা। সঙ্গিনীর সব কাজে আগ বাড়িয়ে থাকা, কেউ উত্যক্ত করলে পাল্টা জবাব দেয়া, সব বিষয়ে খেয়াল রাখা ইত্যাদি সবই তার ‘ইম্প্রেশন’ জমানোর খেলা।

এই কাজটি ছেলেরা মেয়েদের মনে একটি নিরাপত্তার অনুভূতি জন্মানোর জন্য করে থাকে। নিজের সঙ্গীকে নায়কোচিত একজন মানুষ রূপে দেখতে অনেক ভালোবাসে নারীরা, আর অনেক নিরাপদ মনে করে নায়কোচিত পুরুষের পাশে থাকলে। আর পুরুষরাও ব্যাপারটি জানেন। তাই বাস্তব জীবনে পুরুষটি যেমনই হোক না কেন, নিজের সঙ্গিনীর সামনে সকল পুরুষই এক একজন সুপারম্যান।

অতিরিক্ত ভদ্রতা প্রদর্শন করা
ঘটনাটি অনেকএ অদ্ভুত মনে করতে পারেন। কিন্তু আসলেই পুরুষের অতিরিক্ত ভদ্রতা প্রদর্শন মাইন্ড গেমের পর্যায়ে পড়ে। হাত ধরে রাস্তা পার করে দেয়া, গাড়ি কিংবা রেস্টুরেন্টের দরজা খুলে দাঁড়ানো, চেয়ার টেনে দেয়া এ সবই সাধারণ ভদ্রতায় পড়লেও বেশিরভাগ পুরুষ তা ভদ্রতাবশত করেন না।

বরং করে থাকেন নিজেকে সবার ভিড়ে অন্যভাবে উপস্থাপন করার জন্য। আর তাই এই ভদ্রতা তার সহজাত না হলেও সম্পর্কের শুরুতে নিজেকে ‘ভিন্ন’ হিসাবে উপস্থাপন করতে এই অভিনয়ের জুড়ি এই।

কিসের জন্য এই খেলা? পুরুষেরা খুব ভালো ভাবেই জানেন নারীরা এসব ভদ্রতা অনেক পছন্দ করেন এবং অনেক নারীই এইসব ভদ্রতা দিয়ে পুরুষের মানসিকতা বিচার করে থাকেন। আর তাই বাস্তবে নিজে যেমনই হন না কেন, সঙ্গিনীর সামনে এই ভদ্রতাগুলো করতে ভোলেন না চালাক পুরুষেরা।

শারীরিক সম্পর্কের জন্য ভালোবাসার অভিনয়
অনেক পুরুষই আজীবন ভালোবাসার অভিনয় করে যান, কাউকেই সত্যিকারের ভালোবাসেন না। শুধু প্রেমের শুরুতে নয়, বরং সম্পর্কের শুরু থেকে শুরু করে বিয়ের পর নিজের স্ত্রীর সাথে পর্যন্ত ভালোবাসার অভিনয় করে চলেন এই ধরণের পুরুষেরা। বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত, এদের জীবনে সব সময়েই একধিক নারী থাকে।  এই ধরনের পুরুষ থেকে যতদূরে থাকা সম্ভব মেয়েদের থাকা উচিৎ।

কথার ফাদে ফেলে বিয়ে বা কমিটমেন্ট থেকে পালানো
পারিবারিক কারণে প্রেমিক আপনাকে বিয়ে করতে পারবে না,কিন্তু তিনি আপনাকে খুব ভালবাসেন…আপনার পরিস্থিতি কি এমন? তাহলে দ্বিতীয়বার ভাবুন নারীরা। কেননা এটা হতে পারে খুব কুটিল একটা মাইন্ড গেম! অনেক পুরুষেরই ধারণা বিয়ে করলে স্বাধীনতা শেষ হয়ে যাবে অথবা ভালোবাসা টিকবে না। এইজন্য তারা বিয়ে বা কোন ধরণের কমিটমেন্ট থেকে পালাতে চান আর পালাতে গিয়ে কথার মারপ্যাঁচ খেলেন।

যখনই প্রেমিকা বিয়ের কথা বলেন তখনই কোনো না কোনো অজুহাত খাটানো, কথা ঘুরানো কিংবা অন্য কোন কথা বলে উল্টো মেয়েটির ওপরে অযথা দোষ চাপানোর খেলা খেলেন অনেক ছেলেই। পুরো সময় ভালো থাকলেও বিয়ের কথা তুললেই মুড খারাপ করে ফেলেন এমন পুরুষের সংখ্যা কম নয়।

এছাড়াও পারিবারিক সমস্যা ও মা পছন্দ করবেন না এই ধরনের অজুহাত দিতেও অনেকে পিছ পা হন না। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো পুরুষ কোনো নারীকে বিয়ে করতে চাইলে সবদিক সামলে পথ ঠিকই খুঁজে নিতে পারেন। শুধুমাত্র বিয়ে থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য এই ধরণের গেম খেলে থাকেন পুরুষেরা।

ফ্লার্টিং গেইম
সবাই মানুন আর নাই মানুন এই গেমটি কমবেশি সব পুরুষই খেলে থাকেন। ফ্লার্টিং করা পুরুষদের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। এই গেমটি সুযোগ পেলে প্রায় সব ধরনের নারীর সাথেই খেলে থাকেন পুরুষেরা। যদিও পছন্দের নারীকে বলে থাকেন যে- ‘আমি শুধু তোমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছি।’

এটা পুরুষের অন্যতম বিপদজনক খেলা ,কেননা স্টাইলের সাথে ফ্লার্ট করতে পারে এমন পুরুষের প্রতি মেয়েরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। এমনকি পুরুষটি দুশ্চরিত্র স্বভাবের হলেও। আবার মেয়েরা এই ফ্লার্টিং-এর উত্তর দিলেও বিপদ, না দিলেও বিপদ।

যদি কোন মেয়ে ফ্লার্টিং-এর জবাবে পাল্টা ফ্লার্ট করেন, তবে ছেলেরা মেয়েটিকে ‘খারাপ’ হিসেবে অভিহিত করে। এবং ধরে নেয় যে চাইলেই এই মেয়েটি সহজলভ্য। আবার কোন জবাব না দিলেও রক্ষা নেই। সাথে সাথেই সেই মেয়ে ‘মুডি’, ‘বদমেজাজি’, ‘খ্যাত’ ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করা হয়ে যায়।

কটাক্ষ করে ব্রেকআপ করা
মেয়েরা রেগে গিয়ে সঙ্গীকে কটাক্ষ করলেও, একজন পুরুষ কিন্তু নিজের বর্তমান সম্পর্কটি ভেঙ্গে ফেলতেই কটাক্ষ করার গেমটি খেলে থাকেন। যে কথাগুলো আগে কোনো ব্যাপারই ছিল না সেগুলো নিয়েই প্যাঁচানো কথা, খোঁচা মারা, চেহারা নিয়ে কটাক্ষ করা সবই তার কটাক্ষ করে ব্রেকআপ করার গেইম।

সম্প্রতি, আপনার ভালোবাসার মানুষটি যদি ‘তুমি এতো দেরি করলে কেন, ফোনে এত কথা বল কেন, তুমি একটু ওজন কমালে ভালো হতো, চুল কাটলে/ লম্বা হলে ভালো দেখাবে, এই রঙে ভালো লাগেনি’ এই কথা বেশি বলে থাকেন তবে বুঝতে নেবেন আপনার সঙ্গী সম্পর্কটি রাখতে চাচ্ছেন না।



মন্তব্য চালু নেই