পিএসটিএন ফোনসেবা এখন বিটিআরসির ‘বিষফোঁড়া’
খুঁড়িয়ে চলছে বেসরকারি সংস্থা পাবলিক সুইচ টেলিকম নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন)। গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা দিতে নিবন্ধন পেয়েছিল অপারেটরগুলো। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই এই অপারেটরগুলোই এখন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) জন্য এখন বিষফোঁড়া।
কারণ, এক ডজন পিএসটিএন অপারেটরের মধ্যে ৯টিই বন্ধ। বাকি তিনটিও চলছে খুঁড়িয়ে। এগুলোর মধ্যে দেশব্যাপী কার্যক্রম রয়েছে র্যাংক্সটেল এবং অঞ্চলভিত্তিক বাংলাফোন ও ওয়ার্ল্ডটেলের। একইভাবে, পিএসটিএন অপারেটরগুলোর কাছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বকেয়া রয়েছে ৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবৈধ ভিওআইপিসহ নানা অনিয়মের কারণে বন্ধ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। খবর বিটিআরসি সূত্রের।
এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কমিশন সচিব মো. সরওয়ার আলম জানান, পিএসটিএন অপারেটরগুলোর কাছে সংস্থার কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর আলোকে প্রথমে তাদের নোটিশ দেয়া হয়। পরে জবাব না পেলে বিভিন্ন বিধি ও অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করা হয়। এটা চলমান প্রক্রিয়া। অনেকগুলোর বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।
সচিব আরও বলেন, ‘ফিক্সড ফোন সেবার মধ্যে বিটিসিএল ও র্যাংক্সটেলের কার্যক্রম আমার জানা মতে চালু রয়েছে।’
জানা গেছে, দেশে মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ফিক্সড ফোন সেবায় প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নত সেবা দিতে ২০০৪ সালে অঞ্চলভিত্তিক বেসরকারি খাতে পিএসটিএন লাইসেন্স দেয়া হয়। পরবর্তীকালে দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনায় লাইসেন্স দেয়া হয় ২০০৭ সালে। মানসম্মত সেবার কারণে শুরুতে গ্রাহকও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক প্রতিযোগিতা এবং অবৈধ ভিওআইপি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগসহ বেশ কয়েকটি কারণে ২০১০ সালে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে র্যাংক্সটেল, ওয়ার্ল্ডটেল, পিপল্সটেল, ঢাকা ফোন ও ন্যাশনাল ফোন। তবে বন্ধ হওয়ার আগে এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৭ লাখ। পরে দু’একটির শর্তপূরণ সাপেক্ষে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেয় বিটিআরসি।
এদিকে, অবৈধ ভিওআইপিসহ বন্ধসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অনেকদিন ধরেই সরকারের বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৭১ কোটি টাকার বেশি। এখন বকেয়া আদায়ে পিএসটিএন কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্স ব্যাংক গ্যারান্টি (পিবিজি) কর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। এর পাশাপাশি ২০১তম কমিশন সভায় অপারেশনাল কার্যক্রমে থাকা র্যাংক্সটেল এবং ওয়ার্ল্ডটেলের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, দুই ক্যাটাগরিতে বিটিআরসির লাইসেন্স পেয়েছিল পিএসটিএন অপারেটরগুলো, যার মধ্যে একটি দেশব্যাপী এবং অপরটি আঞ্চলিক পর্যায়ের। দেশব্যাপী পাওয়া প্রতিষ্ঠান হচ্ছে টেলিবার্তা লিমিটেড, র্যাংক্স টেলিকম লিমিটেড, পিপলস টেলিকমিউনিকেশন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন লিমিটেড, ঢাকা টেলিফোন কোম্পানি লিমিটেড এবং ন্যাশনাল টেলিকম লিমিটেড।
অপরদিকে, অঞ্চলভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ওয়ান্টেল কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, বাংলাফোন লিমিটেড, এসএ টেলিকম লিমিটেড, ওয়েস্টেক লিমিটেড, জালালাবাদ টেলিকম লিমিটেড, নেক্সটেল টেলিকম লিমিটেড এবং ওয়ার্ল্ডটেল বাংলাদেশ লিমিটেড।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সচল পিএসটিএন অপারেটররা তারবিহীন ফিক্সড ফোনসেবা দিচ্ছে। তবে এই সংযোগ সীমিত পরিসরে স্থানাস্তরযোগ্য হলেও মোবাইল ফোন অপারেটরদের মতো নয়। পিএসটিএন অপারেটরদের বেশিরভাগই সেবাদানের ক্ষেত্রে সিডিএমএ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। শুধু ওয়ার্ল্ডটেল জিএসএম প্রযুক্তিতে আছে। তাদের তরঙ্গের সক্ষমতা ২ দশমিক ৫ মেগাহার্টজ।
এদিকে, মোবাইল ফোন সেবার কারণে ফিক্সড ফোনের ব্যবহার কমে এলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো জনপ্রিয় পিএসটিএন অপারেটরদের সেবা। মূলত কম খরচে ভয়েস কল করার সুবিধা এবং ডেটা কানেক্টিভিটি সেবার মাধ্যমে এই জনপ্রিয়তা টিকিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর পাশাপাশি পিএসটিএনের মাধ্যমে জনসাধারণের ফোন করার সুবিধা (পিসিও) দেওয়া হয়ে থাকে।
তবে আমাদের এখানে নিয়মমাফিক না চলা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে শুরুতে যে হারে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, ধাপে ধাপে তা কমতে থাকে। এক পর্যায়ে সেলফোন অপারেটরের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় আরো দুর্বল হয়ে আসে এসব সেবার কার্যক্রম। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে এসেছে ঠেকেছে যে, লাইসেন্স দেওয়া পিএসটিএনগুলো নিয়ন্ত্রণ সংস্থার জন্য বিষফোঁড়া।
মন্তব্য চালু নেই